লালারণ স্াব্যাল পরিবেশক নাঞ্গ ব্রাদার্স ॥ ৯ শ্টামাচরপ দে স্্রীট ॥ কলকাতা-৭০০০৭৩ প্রথম প্রকাশ জাঙয়ারশী ১১৬১ পৌষ ১৩৬৮ প্রান সমখরকুমার নাথ নাথ পাপলিশিং হাউস ২৬ পি পঞ্ডিতিয়া প্রেস কলকাতা ***০২৯ বুত্রাকরর শ্রধধনমোহন চৌধুরী আদামোর্দর প্রেস ৫২এ *কলাস বোস স্রীট বলেত 1 ৯০০৪ € প্রচ্ছদপট গৌতম রাক্গ শ্রীকালিদাস সান্যাল ৯৩০ শ্রীমতী কল্পনা দেবীকে শ্রদ্ধা! ও প্রীতির স্মৃতিস্বরূপ প্রবীণ ডাক্জার পরমানন্দ চৌধুরীপ হঠাৎ মনে হল দীঘ জীবনটা তার টুঝিবা ব্ার্থই হয়ে গেছে । খোলা খবরের কাগজটা পড়ে আছে অপ্ঠিত,- আহ পিয়া কফির কাপের কেনায় মাছির জওলা | সিগ।রের াগুনটা যে ব্ক্ষণ হল নিবে শেছে দৃটুনিবদ্ধ ওষ্গাধর বুঝ তা সানতে পর নি এখনও | উদাস দৃটি মেলে পরমনিন্দ তাকিয়ে ছলেন জানালার লাইরে । লক।লেন রৌদ্র বাকা হয়ে এসে পড়েছে বরের মেবোতে । নন্দ-বেয়ারা 'এলে কফির ক।পটা তুলে নিয়ে গেল । একবার ইতস্তত করে খাখারের গ্রেটার সানুন দিয়ে তারপর স্ম সনে করে সেটাও তুলে নেয় হাভে। ূ হঠ'ৎকি ভেবে ওকে ফিরে ডাকলেন চৌধুরীসাহেব । নন্দ নিশ্চয়ই, শাশ। করে নি থমকে দাড়ানোর ভঙ্গিটাতেই বোঝা যায়। “নন্দ হেসে বলেন, ওটা লিয়ে মান্ডিস কেন রে? খাইনি মি | (ত্যস্ত অপ্রস্ঞত কার নন্দ জবাবে পালিত কতাকবারে জড়ায় লো 7০১ আমি শাবার গরম কারয়ে আনছি । এ টেস্ট আর গে চট শুধু নিয়ে যা। ফ্রট্স্-এর প্লেডটা রেখে যা বরং। আল পারিস ভে! কফি আর একবার করে পাঠিয়ে দিস। | কৃতার্থ হয়ে গেলে নন্দ । খাবারের প্লেডত। আবার টিগয়ে নানিন্নে 'রখে চলে যায় সে। | কয়েকটা অংপ্লেৰ টরকাবো তুল মুখে দিলেন । ইচ্চা করছে না" ঠিবু খেতে হবে । প্লেটট।কে শেষ করতে হবে । নাহলে গরা মনে ) রব সাহেব একেবারে ভেঙে পড়েছেন অলস যাগ করেছেন | কণা । খেতে কিন্ত বিন্দুন ত্র ইচ্ছা করছে না জানে দিয়ে ১গুলো। বাইরে ফেলে দিয়ে প্রেটট! খলি করে রেখে দিতে এরচ্ছ। ১ [ত্য ১ করছে। কিন্তু তা করার উপায় নেই। পরণীর দৃষ্টি অতি তীক্ষু। ঠিক পরে ফেলবে চালাকিট!। এখনই বাগান সাফ করতে এসে লক্ষ্য হবে তার। মন দিয়ে খেতেই শুরু করেন শেষ পধন্ত । তারপর হঠাৎ কি একট! কথা মনে হওয়ায় আবার থেমে যান । সভ্য করাই কি খলে নি নীলা? এই তো একটা প্রতক্ষ প্রমাণ রয়েছে। বর্তমানে তিনি কি .করছেন? ক্ষুধা নেহ বিন্দ্বম'ত্র_তর খচ্ছেন। কেন? কারণ তিনি গোপন করতে চান জীর মানসিক বিপর্যয়ের . সংবাদটা ! তিনি পছন্দ করছেন না_কেউ বুঝতে পারুক যে নীলার অবর্তমানে পরমানন্দের কর্মময় জীবনে বিন্দুমাত্র ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । না হয় নি! হতে পারে না! যে মেয়ে এই বৃদ্ধ বসে বাপকে ত্যাগ করে চলে যায় ভার ওন্য কোনও ছুঃখ নেই পরমানন্দের, কোনও ক্ষোভ নেই। নীলার অন্রপক্থিতিততি একচুল বিচ্যুত হতে না তার কর্মব্যস্ত জীবনের গতি । তাই প্রাঙর।শের টেবিলেই তিনি “খে দিতে চান সেই সিদ্ধান্তের প্রথম স্বাক্ষর । তা যেন বুঝলাম । তবু একটা কিন্তু রয়ে গেল যে। মেনে নিলাম তে।মার যুক্ত, -কিস্তু তা সত্বেও ও যুক্তির মধ্যে একটা ফাক থেকে, গেল নাক? গত পনেরোঁধিশ বছর ধুর তিনি এমন নিঃসঙগতাবে গতি এ সমাধা করেন নি। টিপয়ের উপরে কফির পট আর ছটি কাপ নাগিয়ে রেখে চলে যেত নন্দ । স্রীমস্ত ঠাকুরের হেঁসেল থেকে নিয়ে আসত টোস্ট মার পেচি। তিনি ইজিচেয়ারটার় এলিয়ে বসতেন । বেতের হেলান-দওয়া চেয়ারট!য় এসে “সত নীলী। কফির ডিক্যানটার থেকে, কফি ঢেলে হুধ মেশাত, নিজের কাঁপে ফেলত টুকটুক করে স্ুগার- কেক মার তার কাপে স্তাকারিন। এর পর টোস্টে মাখন লাগাতে শুরু করলেই পরমানন্দ উৎকর্ণ হয়ে উঠতেন একটা ছোট্ট ধমকের জন্যে কাগজট। এখন রাখ দিকিনিঃ খেয়ে নিয়ে যত হচ্ছে প'ড়ো কোন মীঠিডে কোন মহাপ্রভু কি দেশীত্মবোধের বাণী ঝেড়েছেন। এখনই হয়তে। ননীক।কা এসে টেনে নিয়ে যাবেন-আর খাওয়া হবে না তোমার । ন্‌ অগতা। চশমাঁটা খুলতে হয় তাকে । নামিয়ে রাখতে হয় খবরের কাগজট? | আজকের প্রাতরাশটী এ দৃশ্বের পুনরাবৃত্তি নয়। এ একটা ব্যতিক্রম । শুধু ও-ধারের বেতের চেয়ারটা শুন্ত আছে বলেই নয়__ বৈসাদৃশ্টটা মারও ব্যাপক । আজকে কফির পট আসে নি, আসে নি মিক্ক-পট, স্ুগার-পট । এসেছে তৈরী কফি। এট! শ্রীমস্ত ঠাকুরের কেরামতি নয়-_নন্দ-বেয়ারার দূরদৃষ্টির পরিচয় । লে বুঝেছে তৈরী কফি পাঠানোই আজ যুক্তিযুক্ত। তাই আজ টোস্টের উপরেও আগে থেকেই লাগানো আছে মোলায়েম মাখনের আস্তরণ । যেন এই প্রসঙ্গে কোনক্রমেই না ননে পড়ে যায়-দিদিমশির কথা । কাল রাত্রি থেকে এ বাড়িতে যে একটি লোক কমে গেছে এ সতাট! ওরা প্রাণপণ চেষ্টায় গোপন রাখতে চায় । কিন্তু যে কথা ভাবছিলেন। খেতে তার ইচ্ছা হচ্ছে না--তবু খাচ্ছেন । ক্ষুধা না থাকার কোন্‌ যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই । এ সময় এ খাগ্ঠ তাঁর নিয়মিত তালিকাভুক্ত ৷ তবে এ অরুচি কেন ? নিঃসংশয়ে নীলার ' মন্পন্থিতিই এর কারণ । সত্যটা অনন্থীকারধ, মস্তত নিজের কাছে। তা হলে ইচ্ছার বিরুদ্ধেও যে তিনি খাচ্ছেন সেট! তো শুধু শেক “এদখানো | অর্থাৎ প্রতিটি গ্রাসের বক্তব্য--তোমরা দেখো, আমি খাচ্ছি-দচ্ছি, দিবা আছি। তোমাদের দিদিমণি থাক না থাক, আমার ভারি বয়েই গেল 1? কথাটা নিথ্যা-তবু এ মিথা। আবরণের আশ্রয় 1তনি নিয়েছেন শুধু লোক দেখানোর জন্ত । আর তাও কে সে লোক? না, এ শ্রীমস্ত ঠাকুর, নন্দ-বেয়ারা, আর ধরণী মালী ! এদের চোখে একটা মিথ্যান্বরপ প্রতিষ্ঠিত করবার প্রয়াসেই কি তিনি খাচ্ছেন না আপেলের টুকরোগুলো ? “এযদি তুমি আদর্শের জন্তে করতে বাবা, ভা হলে আমি মেনে নিতাম'-'কিস্তু তা তো নয় -'তুমি শুধু সুনামের মোহে, শুধু প্রতিপস্তির লোভে, শুধু পদমর্ধাদার মুগ্ধ মোহাবেশে ছুটে চলেছ এ পথে"*"কি করা উচিত তা আর তুমি ভাব নাঁ---কি করলে ওরা তোমার যশোগান করৰে ৮১৫ সেই চিস্তাতেই তুমি বিভোর ।--তোমার অস্তিত্ব পর্যন্ত তুমি বিকিয়ে দিয়েছ ওদের ভালো-লাগা-না-লাগার বিচারে |” খাবারের প্লেটটা সরিয়ে রাখলেন পরমানন্দ। নীলা অন্যায় করেছে। নীলার গৃহত্যাগে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হন নি, হতে পারেন না, হওয়া উচিত নয়। তবু এই অক্ষুধা, এই যে খাওয়ার অনিচ্ছা, এট নিঃসংশয়ে নীলার অন্ুপস্থিতিজনিত । মিথ্যা দিয়ে কখনও কাউকে তিনি ভোলান নি। আজও ভোলাবেন না । নিজের মনকে আগে জয় করতে হবে। তারপর সেই কুলিশকঠোর মনের প্রতিচ্ছবি দেখতে দেবেন আর পাঁচজনকে | নন্দ এসে কফির কাপটা নামিয়ে রাখে টেবিল । সমস্ত দ্বিধা সঙ্কৌচ, ত্যাগ করে পরমানন্দ তাকে বলেন-_ থাক, নিয়ে যা । ভালে লাগছে. না এসব । নন্দ বোধ হয় চমকে ওঠে । ঠিক লক্ষ্য করেন নি উনি । নন্দর দিকে আর তাকিয়ে দেখা সম্ভব হয় নি তার পক্ষে। তবু অনুভব করেন অভুক্ত খ।বারের প্লেট আর কফির কাপটা নিয়ে সে চলে যায়। যাবার সময় সে কি তাকিরেছিল তার মনিবের দিকে ! কি ছিল সে দৃর্ঠিতে 1 জীবনের চল্লিশটা বছর অ।জ এসে দাড়িয়েছে ভিড করে ওর চোখেপ সামনে । কি তিনি সত্যি চেয়েছিলেন জীবনে ? কি পেয়েছেন, কি পান নি, আর কি পেয়ে হারিয়েছেন ? এত দিন তে। সব আঘাত, সব ক্ষয়ক্ষতি নিধিচাঁরে বুক পেতে গ্রহণ করেছেন । কোনও দুর্ঘটনাতেই তো। এমন শুন্য মনে হয়নি জীবন । আর কি সব ছুঘটনা ! সে-সবের তুলনায় নীল।র এই পিনেমান্থুলভ সংলাপ, এই নাটকীয় তিরোভাব তো হাস্তকর। নাটকে আর নভেলেই এ-সব ঘটে এদিন এটাই ভেবেছিলেন । আজ তর জীবনেই ঘটল এট! । অবাধ্য গেয়েটা বলে কিনা---তিনি চ্যুত হয়েছেন তার আদর্শ থেকে । গুদ্ধত্যেরও একটা সীমা থাকা উচিত! নিজে থেকে চলে না গেলে হয়তো তাডিয়েই দিতেন ওকে ! কিন্তু ! * যৌবনে আর প্রৌঢছে নিয়তির নির্মম কশাঘাতে জর্জরিত হয়েছেন তিনি বারেবারে । তাহলে আজ এত সামান্ত আঘাতে এতটা বিচলিত বোধ করছেন কেন? অন্তরে কি সত্যই ছুর্বলতা এসেছে? ডাঃ পরমানন্দ চৌধুরীর অস্তুরে দুর্বলতা ! মনে মনেই হাসলেন তিনি। পূর্বপক্ষ আর উত্তরপক্ষ হঠাঁৎ চুপ করে গেল ওর মনের মধ্যে, থামাল তাদের ঝগড়া । দশ বছর আগেকার কথা মনে পড়ছে। শহরের সবচেয়ে নামকরা সার্জেন ডাক্তার পরমানন্দ চৌধুরীর বাড়িটা জনপদের পশ্চিম প্রান্তে । কলকোলাহলমুখর গ্রাণচঞ্চল শহরের মাঝ” খানে তিনি বাড়িটা করেন নি ইচ্ছা করেই। তবু ভিড় জমে থাকে সামনের লনে সকাল থেকে । গাড়িতে, রিকশায় সাইকেলে আসে ক্কুগীরা অথবা তাদের আত্মীয়ের ৷ দে।তলা বাড়ি__সাঁমনে প্রকাণ্ড লন । কেয়ারি-কর! ফুলের বাগান । মরশুমী ফুলই বেশী । একসার টবে নান। জাতের ক্যাকটাস। আছে একটা জবা, আর একটা কাঞ্চনও। সামনের লাল কাকরের পথটা এসে পো।্িকোর নিচে আশ্রয় খোজে । ফটকের উপর মন্িং গ্লোরি লতাটা নীপাম্বরী পরে প্রথমেই স্বাগত জানায়। গেটের ধাবেই, অর্থাৎ শ্রায় রাস্তার উপরেই, একসার ঘর । রুগী দেখার ঘর, ডিস্পেন্সিং রুম, অপারেশন থিয়েটার, আর ছোট ছোট কেবিন। এ ছাড়াও আছে একটা ল্যাবরেটরি । রক্ত পরীক্ষা মলমুত্রাদি পরীক্ষা তো বটেই, এমন কি এক্স-রে নেবার ব্যবস্থা পর্যন্ত আছে । ছোটখাটভাবেই শুরু করেছিলেন আমেরিকা থেকে সার্জেন হয়ে ফিরে আসার প্র । চেয়েছিলেন শহরের একান্তে নিরিহিলিতে বিকিয়ে দেবেন জীবনটা । ছোট্ট সংসারের বেড়া-দেওয়া পরিধিতে সীমিত করতে চেয়েছিলেন নিজেকে । বাইরের সমস্ত আঘাত থেকে আত্মগোপন করবার একটা ' শহ্বুকবৃত্বি তাকে প্রবুদ্ধ করেছিল এই অস্তেবাসীর জীবনের দিকে | শুধু শহর কেন-_ দেশের সঙ্গেই বিশেষ ম্পর্ক রাখেন নি । বাড়িখানাও বানিয়েছিলেন ওদেশী ছাদে । না হলে এর রি-ইনফোর্সড কংক্রীটের এই ষুগে কেউ কখনও বানায় অমন ঢালু ছাদের বাঙলো বাড়ি ? ছায়া-থমথম নির্জনতায় শহরতলীর এই বাড়িটা যেন আর পাঁচখান! স্বগোত্রের সঙ্গে তফাত রচনা করতেই গায়ে জড়িয়েছে লাল ইটের পয়েন্টিং-করা কুর্তা ; ওল্ড-ইংলিশ স্থপতিপর্যায়ের খিলানে খিলানে যেন ভূরু কুঁচকেই আছে ১ স্কাইলাইট আর চিমনিতে যেন সে ভৌগোলিক বন্ধনটাকেও অস্বীকার করতে চায় । পথ-চলতি মানুষের স্বতই মন হয়' এ-বুঝি কোনও ইংরাজ দম্পতির আবাসস্থল কোনও রিটায়[ভ সিভিলিয়ানের ডের । কথাটা আধা সত্য | ইংরাজ ন। হলেও আমেরিকান । দম্পতি না হলেও তার আধখানা । পরমানন্দ যেদিন গেটওয়ে-অফ-ইও্ডয়ার তলা দিরে ফিরে এসেছিলেন পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে সেদিন তাঁর সহ্যাত্রিণী ছিলেন ছুটি বিদেশী মহিল1 ৷ মিস আরিআ্যাডনি গনীল এবং তাঁর গড-মাদার মিস গ্রেহাম । মিস ও*নীল অবশ্য তার প্রাগবিবাহ পর্যায়ের সংজ্ঞা, এদেশের মাটিতে পা দেবার পূর্বেই তার নামান্তর হয়েছিল-_মিসেস আযরিআযাডনি চৌধুরী । ছাত্রাবস্থাতেই তাকে বিবাহ করেছিলেন পরমণানন্দ ৷ ঠিক ছাত্রাবস্থায় নয়--তখন তিনি যুক্ত ছিলেন শিক্ষানবিশ হিসাবে একটা হাসপাতালের সঙ্গে_যে হাসপাতালে নার্গ হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন তার ভাবী জীবনসজিনীর গড-মাদার মিস গ্রেহাম! নার্গ গ্রেহামই ছিলেন সে ছন্দ-সমাসের হাইফেন। তারই মাধ্যমে চৌধুরীর হয়েছিল গ'নীলের সঙ্গে পরিচয়, প্রণয় ও পরিণামে পরিণয় । ও'নীলের পূর্বপুরদষেরা আমেরিকায় এসেছিলেন আয়ার্লগু থেকে 1 ওর মা ওকে মৃত্যুশয্যায় দিয়ে যান মিস গ্রেহামের হাতে । তখন কতই বা বয়স ওর? মিস গ্রেহাম ওকে মানুষ করেছিলেন--নিজের মেয়ের মতোই। ত্রোঞ্জের ক্রুশচিহ্টার মতোই তীকে সর্ধদা বুকে বয়ে বেড়াতেন। ওর বাপ ছিলেন নাবক--সমুদ্রঘাত্র। থেকে তিনি আর ফিরে আসেন নি। পরমানন্দের হাতে তাকে সমর্পণ করে পরম আনন্দ না পেলেও পরম নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন গ্রেহীম । মেয়ে-জামাইকে বিদায় জানাবার সময় জামাই জিদ ধরে বলল.মিস গ্রেহানকেও সঙ্গে ঙ যেতে হবে। শুনে হেসেই বীচেন না গ্রেহাম। বলেন--এতদিন আমেরিকায় থেকেও ভূমি খাটি ভারতীয় রয়ে গেলে চৌধুরী ! না হলে শীশুড়ীকে কেউ হনিমুনে সঙ্গী হতে বলে? চৌধুরী কিন্তু সে যুক্তি শোনেন নি। মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসার পর এই প্রৌঢ় আজীবন কুমারীর নিঃসঙ্গ জীবনের গ্রানিকর অবসাদটা উপলব্ধি করেছিলেন তিনি । তাই একরকম জোর করেই নিয়ে এসে” ছিলেন তাকে এদেশে । বাবা মা দুজনেই তখন গত হয়েছেন ! পরমানন্দের পিতা অঘোরানন্দ ধর্মভ্যাগ করে ব্রাহ্ম হয়েছিলেন । সুতরাং গ্রামের বাম তাদের উঠেছিল একপুরুষ আগেই । ভারতবর্ষে এসে কোনও ব্ড শহারে বসতে পারতেন ডাক্তার চৌধুরী, কিস্তুকি জানি কেন, এই মফঃম্বল শতরটাকেই বেছে নিলেন উনি । শহরের সামাজিক জীবন থেকে একান্তে সরে থাকতে চান বলে জনপদপ্রীন্তে বানালেন এই বাঙউলোটা। এ বাড়ির ভিতের গাঁথনিতে রয়ে গেছে মিস গ্রেহামের. স্বাক্ষর । আমেরিকান ডলারই ভারতীয় মুদ্রাব বকষন্ত্রে চোলাই হয়ে রূপায়িত হুল ইট-কাঠ-চুন-স্ুরকিতে । অবশ্য পরবর্তী যোজনা ঘা কিছু _-তা৷ পরমানন্দের উপার্জনে | এত আল্প সময়ে এতটা পশার হবে এ যেন কল্পনাই করা যায় নি। অবশ্ট ও'ব উন্নতির মুখে ছিল বাটন আ্যাণ্ড হ্যারিস কোম্পানির কারখানাটা ৷ শহরের এ প্রান্তে হু হু করে বেড়ে উঠল কারখানাটা । এল নানাদেশী লোক-- ভারতীয় কম্ণ আর বিদেশী অফিসার । সাহেবী কেতার মানুষ চৌধুরী ডাক্তারের সঙ্গে সাহেব মহলের অস্তরঙগতা হওয়াট।ই স্বাভাবিক । কারখানার কোয়ার্টার্স ছেড়ে মেমসাহেবদের একমাত্র বেড়াতে আসার স্থল ছিল এই বাঙলোটা। চৌধুরী গোটা কারখানাটার পারিবারিক চিকিৎমক হয়ে পড়লেন ক্রমে । আউট- হাউসটা' ভেঙে বড় করে অপারেশন থিয়েটারবানাতে হল । তৈরী করতে হল নাসিং হোমের কেবিনগুলো। ওর হাসপাতালট! যেন কারখানার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে গায়ে গায়ে বেড়ে উঠল - বড় হয়ে উঠল । খু আজ এই নাসিং হোমের সঙ্গে কোনও সম্পর্ধ নেই ডাক্তার চৌধুরীর__মালিক তে! ননই। নাসিং হোম তার নিকটতম প্রতিবেশী তার প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে সব সম্পর্ক আজ চুকিয়ে দিয়েছে। ওটা ফ্যাকটরির সম্পত্তি-অবশ্ট কারখানার অন্কতম ডিরেকটর আজ ডাক্তার পরমানন্দ । আজ থেকে দশ বছর আগে কিন্তু সম্বন্ধটা ছিল অন্ত রকম। তখন একনিষ্ঠকর্মী ডাক্তারটি ছিলেন এই সেবাসদনের প্রাণন্বরূপ। গুটি তিনেক জুনিয়ার ডাক্তার সহযোগী ছিলেন তার । পরমানন্দের তীক্ষ দৃষ্টি ছিল এর চিকিৎসা বিভাগে । মিস গ্রেহাম ছিলেন নাপিং- বাবস্থার কর্ণধার- আর সমস্ত কিছুর হিসাধনিকাশ থেকে শুরু করে এর সামগ্রিক পরিচালন-ব্যবস্থা ছিল মিসেস চৌধুরীর নখদর্পণে। উদয়াস্ত ওর! তিনজনে মেতে থাকতেন সেবাসদনের সেবায় । সকাঁল- সন্ধ্যায় মিসেস চৌধুরা এসে খোজ নিয়ে যেতেন আর্ত রোগীদের । কখনও ওদের শিয়রে বসে গল্প করতেন, কখনও সাস্বনা দিতেন, কখনও নিয়ে আসতেন ফুল-ফল | না, ভূল হল পরমানন্দেব। দশ বছর আগেকার যে দিনগুলির কথা আজ ভাব মনে পড়ছে তখন মিসেস চৌধুরীর যাতায়াত ছিল না হাসপাতালে । তার বন্ু পূর্বেই তিনি পিদায় নিয়েছেন এই ছুনিয়া থেকে । মিমেস চৌধুর।র মৃত্যু হয়--মনে মাছে ডাক্তার চৌধুরীর যে বৎসর সম্রাট পঞ্চন জর্জের সিলভার জুঁহিলি হয়, সেই বছর। এঁ উৎসবে চৌধুবী সাহেব কয়েক হা টাক! খরচ করেছিলেন নাসিং হোমের আলোকসজ্জা আর আতশবাজির আয়োজনে । মিসেস চৌধুরী স্থুতরাং সেদিন ছিলেন না এ সংসারে । ছিল অসীম আর নীলা । অসীম তখন বোধহয় থার্ড ইয়ারের ছাত্র ; আর নীলা মনে হচ্ছে সে বংসরই ম্যাট্রিক দেবার আয়োজনে ব্যস্ত । দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ তখন ভারতবর্ষের রঙ্গমণ্জে প্রবেশের অপেক্ষায় উংস-এর পাশে প্রহর গুণছে। উনিশ শ বেয়ালিশের আগস্ট মাসের শেষাশেষি, না কি সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহ ? জাপানী আক্রমণের ৮ উৎকণ্ঠায় সারা দেশ তখন কণ্টকিততন্থু ৷ মিত্রশক্কি সংহত করতে চাইল ভারতবর্ষের জনশক্তিকে । সংঘাত বাধল ভারত সরকারের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় কর্তাবাক্তিদের ৷ বোন্বাইয়ের জনসভায় কংশ্রেসের নেতৃবৃন্দ সমবেত হলেন । কর্মস্চী ঘোষণা করার পূর্বেই সরকার চেপে ধরল জননায়কদের কণ্ঠনালী। রাতারাতি কারা রুদ্ধ হলেন সবাই । মহাত্মা, জওহরলাল, আজাদ, সরোজিনী ৷ সমস্ত ভারতব্ষের বিক্ষুব্ধ গণআত্মা নিরুদ্ধ আক্রোশ চাপতে না পেরে ফেটে পড়ল একটা! প্রচণ্ড বিস্ফোরণের আকারে । জাতীয় কংগ্রেসের কি নির্দেশ ছিল, তা আর জানা গেল না। গুজব রটল মুখে মুখে । লুষ্টিত হল রাজকোষ, অধিকৃত হল থানা, আর ডাকঘর। টেলিগ্র।ফের পোস্টগুলো পর্যস্ত মাটিতে লুটিয়ে পড়ল মৃছ্িত হয়ে । দেশের চিন্ত। শীল ব্যক্তির দিশেহারা! হয়ে পড়লেন । একদল বলে-__-এ কখনও মহাআ্সার নির্দেশিত পথ নয়। এ হিংসার রক্তত্রাবী পথ কখনও আস্তরিক অনুমোদন পেতে পারে না তার। আর একদল বললে--এই হচ্ছে বিক্ষুব্ধ অপমানিত ভারতবধের গণআত্মার আদেশনামা__এবং যেহেতু মহাআাই এই জনগণমনের অধিনায়ক তাই তারও অনুমোদন আছে এ গণবিক্ষোভে । পরমানন্দের অস্তুঃপুরেও এসে লাগল এই বিতর্কের তরঙ্গে চ্ছাস। শান্ত বাজভক্ত পরিব'রটির মধো দেখা দিল ছুটি বিভিন্ন শিবির । স্কুলের দশম বাধিক শ্রেণীর দোল!যিতবেণী কিশোরী নীলার ঞ্ুব বিশ্বাস--এ বিপ্লব জাতীয় কংগ্রেসের কর্মসূচির অন্তভূক্তি। অসীম তা অস্বীকার করে। নীলা সর্বাস্তঃকরণে বর্জন করতে চায় ভারত সরকারকে-_মিত্রশক্তির যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে । অপরপক্ষে অসীম উদয়াস্ত পরিশ্রন করছে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে । জাতীয়-রক্ষী-বাহিনী না কি যেন একটা! প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সে যুক্ত । শাস্ন-শৃঙ্খলা যাতে ভেঙে না পড়ে, জাপানী আক্রমণের এই সংকটমুহুর্তে যাতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা অক্ষত রাখা যায়, তাই স্থানীয় এস. ডি. ও, সাহেব আয়াঙ্গার শহরের রাজভক্ত প্রজাদের নিয়ে গড়ে তুললেন একট! আধা-সরকারী কী প্রতিষ্ঠান। অসীম তারই একজন মেজ না সেজ ধরনের অফিসার । খাকি পোশাক পরে, মাথায় হেলমেট চাপিয়ে সেই কোন ভোরে উঠে চলে যায় প্যারেড গ্রাউণ্ডে । দল বেঁধে কখনও বের হয় আবার রাজপথে । হাতে ঝাণ্ডা আর ফেস্ট,ন : আমাদের হাতে অস্ত্র দাও। _আমাদের হাতে অস্ত্র দাও ! মনে মনে হাসতেন পর্মানন্দ | ভাইবোনে কেবলই তর্ক চলে সারাদিন। ওরা কখনও কখনও সালিশ মানে বাবাকে ৷ পরমানন্দ জবাব দেন না । কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে উপভোগ করেন শ্রাতরাশেব টেবিলে । মিস গ্রেহামও এ প্রসঙ্গে একেবারে নারব থাকতেন । ক্রমশঃ পরমানন্দ লক্ষ্য করলেন, বাপারটা নিছক কৌতুকের সীমারেখা অতিক্রম করতে চলেছে। বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পরিস্থিতিট।। জীবনে কোনদিন কখনও তিনি ছেলেদমযেদের উপর নিজের মতামত আরোপ করেন নি; তাই মনে মনে উৎকন্টিত হয়ে ওঠেন শুধু । মুখে কিছুই বলতেন না, কিন্তু ঠার তীক্ষু দৃষ্টির সামনে ঘটনাগুলি কিছুই এগিয়ে যেতে পারে না। আর এ ঘটনাগুলো যে ক্রমশঃ, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে-_এট?ও অনুমান করতে পারেন উনি । নীলা আর অলীন দ্বজনে ছুজনকে এাঁড়য়ে চলে । পনেরো ষোলো বছরের মেয়েটিকে হঠাৎ একদিন দেখা গেল খদ্দরমণ্ডিত বেশে । ব্যাপারটা একেবারে অচিস্ত্যনায় । বিলাতী কেতার মানুষ রাজভক্ত পরমানন্দ চৌধুরীর অস্তঃপুরে খদ্দর ! এ যেন পরম বৈষ্ণবাচার্ধের আখড়ায় পাঁঠার মুঁড়িঘণ্ট ! সকাল বেলা প্রাতরাশের টেবিলে সে যখন এসে বসল নবুজ রঙের খদ্দরের শাড়ি পরে, তখন চমকে উঠেছিলেন উনি । চোখ তুলে একবার দেখেই মনোনিবেশ করলেন কাটা-চামচে। ভ্ইং আর ভাইনিং রুম দুটো পাশাপাশি । মাঝখানে একটা! বড আচগয়ালা ফোকর । দরজা নেই । মোটা! পতলের, রড থেকে ঝুলছে একট। ভারী নেভি-বু পর্দা । মাটির সঙ্গে সমান্তরাল পর্দার উপর আ্ওয়ের অর্ধচন্দ্রাকৃতি ফোকরটা দিয়ে ডইংরুমের দেওয়ালটা! দেখ ১৬ যায়। সেই দেওয়ালের বড় ছবিটার উপর নজর পড়ল পরমানন্দের । দিল্লী-দরবারের ছবি । প্রিন্স-অব-ওয়েলস্‌ দিল্লীর দরবারে এসেছেন । ডাইনিং রুমের বিভিন্ন আসবাবের উপরেও নজরট! বুলিয়ে নিলেন। স্বদেশী জিনিস কই নজরে এল না তো কিছু । ক্রকারিস বিলাতী, ফ্রিজিভেয়ার বিলাতী' মায় মীটসেফটা পযন্ত বিলাতী ফামিচারের দোকানের সীলমোহর নিয়ে এসেছে ললাটে । এর মাঝখানে চৌধুরী- তনয়ার এ বিদ্বোহার বেশ শুধু বিসদৃশ নয়, বিপ্রবাতক । পরমানন্দ মনে মনে জ কুঞ্চন করলেন। বাইরে তার অশান্ত সমাহিত মৃত্তিতে কোনও পবিবর্তন লক্ষ্য কর। যায় না। মিস শ্রেহাম একবার চোখ তুলেই মনোনিবেশ করলেন কফির পটে । প্রতিদিন এ কাজ্ট' ছিল নীলার কমস্চির অন্তৃভূক্তি; আজ কিন্তু আড়ষ্ট হয়ে বসে রইল সে। অসীম বলে - শীত তো! এখনও £তমন পড়ে নি, এরই মধো গর্ম জাম] বার করেছিস যে নীল! ? নীলা ওর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে নত করে দৃষ্টি । বলে__এটা গরম জামা নয়" খন্দর | _এী একই কথা! ৃ পরমণনন্দ খবরের কাগজটা দিয়ে একটা ব্যবধান রচনা করলেন-- যেন কাগজের ছুর্গে আত্মরক্ষা করতে চাইলেন তার বিজেোহী আত্মজার আসন্ন প্রভু) ত্তরের তিক্ততা থেকে৷ নীল! কিন্তু স্বইভাবিক কণ্ঠেই জবাব দিল --জাম! মোটা-সরুর তো কোনও মাপকাঠি নেই দাদা ওট। আপেক্ষিক । আমার গায়ে এটা খুব মোট কাপড়ের মনে হচ্ছে না । আবার হয়তো অনেক মোটা! চামড়ার লোকের গায়ে বিলাতী সিক্ষের জামাও অসহনীয় মনে হতে পারে । অসীম অহেতুকভাবে তার সিন্কের পাণ্ডাবির বোতামগুলো খুলতে খুলতে বলে- তা ভালো, নরম চামড়া তোদের, এ চেঞ্জ-অফ- ক্লাইমেটের সময় এ চটের জামা পরাই ভালো । নীলা বলে_ চেঞ্জ অফ-ক্লাইমেট নয় দাদা? চেঞ্-অফ-কগ্ডিশব্,".. চেঞ্জ অফ ইডিওলজি। ১১ পরমানন্দের গলায় কি রুটির টুকরোটা আটকে- গেল! হঠাৎ কেশে উঠলেন উনি । _তোমাকে আর এক গীস কেক দেব নীলা ?- প্রশ্ন করলেন মিস গ্রেহাম। উদ্দেশ্য একই, অর্থাৎ প্রসঙ্গটা চাপা দেওয়া । নীল৷ বেণীদমেত মাথাট! ঝাকিয়ে আপত্তি জানায় । খাওয়া তার শেষ হয়ে গিয়েছিল । শাড়ির আচলট। সামলে নিয়ে সে চলে যায় ড্রইং রুমের দিকে । রেডিওতে সকাল বেলাকার খবর পরিবেশিত হচ্ছিল সে ঘরে । হঠাৎ আর্তনাদ কবে থেমে গেল সেটা । বোঝ গেল নীল। থামিয়ে দিল তার যুদ্ধ প্রচারের প্রচেষ্টা । পরম।নন্দ একটি দীর্ঘনিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ইট্‌্স্‌ এ ব্যাড ওমেন ! শিস গ্রেহাম কোনও জবাব দেন নি। দিয়েছিল অসীম | হেসে বলেছিল-তুমি মিখো ভয় পাচ্ছ বাবা। এ বয়সে ও রকম ভাবালুতা এক-আধটু সবারই হয়। কদিন ? শীতকালের কটা মাস কাটুক-_ তারপর খদ্দধর ছাড়তেই হধে। তা ছাড়া এখন সিনেমা বন্ধ-পার্টি হয় না -ফ্যাকটরির ক্লাবেও কোনও ফ।ংশান হচ্ছে না এখন খদ্দর চলতে পারে কিছুদিন । তাই বলে মেয়েনানগষ কখনও শাডি-গহনার মোহ ছাড়তে পরে? পর্মনন্ন ওকে চে খের ইঙ্গিতে চুপ করতে বলেন । নীলা পাশের বরেহ আছে। ছুটি ঘরের ম।ঝখানে খোলা আয়ে দিয়ে এ পাশের কথা ও পাশ থেকে স্পষ্ট শোনা যায় । অভিমানিনী মেয়েটির কথা! ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়ে।ছলেন চৌধুর। । অসাম চুপ করে। সরমানন্রের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, অনতিবিলন্বেই তা বুঝতে পারা গেল । হঠ1ৎ ঘরে এসে ঢোকে বৈশাখী + নিস গ্রেহামকে উদ্দেশ করে বলে গ্র্যানাঃ শিগগির আশ্ুন নালা খেপে গিয়ে কি করছে, দেখুন। ওরা সকলেই উঠে এসেছিলেন প্রাতরাশের টেবিল থেকে । বাড়ির €িতব দিকের উঠোনে নীলা খাগুবদাহন শুরু করেছে । আলমারি ১৭ খুলে নিজের সমস্ত বিলাতী শাড়ি একত্র করে তাতে আগুন দিয়েছে । নন্দ-বেয়ারা ঈাড়িয়ে আছে বোকার মতো বারান্বার ও প্রান্তে । কোমরে হাত দিয়ে নীলাও দাড়িয়ে আছে সে অগ্নিকুণ্ডের সামনে-_ যেন এ হোমাগ্রির আলোক-উত্তাপে তারচিত্তশুদ্ধির আয়োজন চলেছে গোপনে গোপনে । মিস গ্রেহাম ছুটে এসে চেপে ধরেন নীলার হাত--এ কি করছ নীল! ! ছদিন পরে তোমার যে অনশে'চনার অবধি থাকবে না। ন'লা ছাড়িয়ে নেয় হ'তখানা, বলে -মা।মি দুঃখিত গ্রযানী । জানি তোমার মনে আঘাত লাগবে । তবু এটা আমার কর্তনা। অগ্থিস্ূপের ভিতর থেকে কয়েকটা মূল্যবান শাড়ি বাচাবার জঙ্ক ছুটে যায় অসীম আর বৈশাখী । পরমানন্দ বাধা দেন তাদের ; ও জিনিসগুলো ওর নিজন্ব | ধীরপদে ডঁইংরুমে ফিরে আসেন উনি। মিস শ্রেহাম এটুকু বেলা থেকে মানুষ কবেছেন নীলাকে । চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের । আজ তর. হঠাৎ মনে হল-যে পক্ষিশাবককে এত যত্ব- আদরে মানুষ করে তুলেছেন, আজ সে মুক্তপক্ষ নীলাক!শচারী । নীড়ের সঙ্গে সম্পর্কটা সে অস্বীকার করতে চায় । নীল আর গ্রেহাম আর নাতনী-দিদিম! নয় _ছুটি ভিন্ন- দেশী নারী । প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের! নেভার ছ্য টে।এন্‌ শ্যাল্‌ মীট্‌। পরমানন্দ ও7ক বলেন-_ আশা করি তুমি ওকে ক্ষমা করেছ-- ও য! কিছু করছে উত্তেজনার বশব্তা হয়ে না ভেবেচিস্তেই করছে। বাট." বাট.সাম অফ. দেম আর হার মাদাস মেমেন্টো। কান্নায় ভেডে পড়েছিলেন গ্রেহম। সত্য কথা । যে শড়িগুলি জাত্যভিমানের বিদ্বেববহিনতে পুড়ে ছাই হয়ে গেল_ সেগুলি যে শুধু বিলাতী মিলের তৈরী সেটাই তো শেষ কথা নয়। সেগুলি যে অন্ত একটি অভারতীয় রম্ণীর স্মুতবিজড়িত। এ শাড়িগুলি আহরণ করে এনেছিল যে নারী সে ছিল এরদ্দিন এই চৌধুরী পরিবারের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী ;_শুধু তাই নয়, এগুলি সে দিয়ে গিয়েছিল তারই ১৩ 'আত্মজাকে। নীলা আজ শুধু গোট] পশ্চিম খগ্ুকে অপন্নান করে নি সে ধূলায় টেনে এনে নামিয়েছে তার মাতৃম্থৃতিকে । মিস গ্রেহামের মানসকন্যা মিসেস আরিআ্যাডনি চৌধুরীর দ্বিতীয়বার ম্বত্যু ঘটল আজ এ বাড়িতে-__এবং এবারকার মৃত্যুটা অপঘাতজনিত । পাকা আমটির মতো! টুকটুকে গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে বুড়ী মেমের ! দীর্ঘনিশ্বস পড়ল একটা পরমানন্দের | কিন্ত বাধা তিনি দিতে পারেন নি নীলাকে । কারও বাক্তত্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা তার স্বতাবৰিরুদ্ধ | স্কুল-কলেজ বন্ধ। আদালত-দোকান দীর্ঘদিন রুদ্ধদ্বার । শহরের বুকে চলেছে বিভীষিক!র রাজত্ব । কখনও বন্দুকের আওয়াজ, লাঙি, মেদিনীবিকম্পিতকরা সদর্প সবুট পদক্ষেপ--কখনও বন্দেমাতরম্- মন্থো্ভামিত নিরশ্্ব জন ভাব মিছিল | ড্েসি-গান-পণা শাইপমুখো চৌধুরসাহেব দ্বিতলের ব্যালকনিতে অশান্ত চরণক্ষেপে পদচ।রণ করে চলেন । তিনি কোনও পক্ষে নেই। এ সংগ্রামের গতি তান প্রষ্টা সঞ্জয়ের মতো নিরপেক্ষ দৃটি ভঙ্গিতে লপ্ষা কে ঢলোক্ছেন শুধু । কোন মতামত প্রকাশ করেন না কাবও কাছে 'এ বিষয়ে । জালপ্রবাহের উপকূলে বসে শুধু নিরীক্ষণ করে চলেছেন কালের গতি । সে প্রবাহে, লক্ষা করেছেন চৌধুরী, তীর পুত্রকম্াও যা করেছে পালতোলা নৌকায় । ছুজনে ছু মুখে । একজন উযাটাতে একজন উজাব। ছেলেসা দল বেঁধে একদিন দখা করতে এল গর সাঙ্গ । শহরের কয়েকজন নীমকরা বিশিষ্ট ব্যক্তিও আছেন দলে ! কি চাই ? -এতদিন যা করেছেন করেছেন, এবার আপনাকে চালটা পাণ্টাতে হবে অর্থাৎ ? -ন্বদেশী জিনিস আপনার বাড়িতে কোনদিন মাসে নি। সমস্ত বিলাতী 'জনিস। এসব আপনাকে ত্যাগ করতে হবে । ১০ ১১ _-রিয়ীলি? তা আমি যে-সব জিনিস ব্যবহারে অভ্যস্ত তা কমাপনাদের দেশী কারখানায় বানিয়ে দিতে পারবেন তো ? না পারি ব্যবহার করবেন না! তেমন জিনিস । দেশী জিনিসটাকে ত্যাগ না করে বদ অভ্যাসটাঁকেই ত্যাগ করুন না কেন । _-আমি এ কৃচ্ছমাধনের বিনিময়ে কি পাব? স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি । হোহে! করে হেসে ওঠেন পরমানন্দ ! শেষে হাসি থামিয়ে বলেন_ এ প্রতিশ্রতি তো নতুন নয়। প্রতিবারেই কতকগ্চলি ছেলে জেল খেটেছে কতগুলে। মরেছে গুলি খেয়েঅথবা ফাসিকাঠে ! কত সংসার 'ছারখার হয়ে গেল । আবার সে প্রতিশ্রতি কেন ? হিমালয়ের চেয়ে বড় কিছু তো নজরে পড়ছে না__-তা সে হিমালয়ান ব্রাগ্ডার্ও তো হয়ে গেছে একদফা। ! দলের সামনে যে ছেলেটি ছিল-_রুক্ষচুল, খব্দরের পাঞ্জাবি পরা, সে বলে- সেবার প্রতিশ্রতি কেন রক্ষা করা যায় নি জানেন ? কারণ সেবারকার সংশ্রামের সংকাদটা আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারি নি। আমাদের দেশে, জানেন তো, একজাতের শিক্ষিত মানুষ আছেন ধারা ব্ছরে মাত্র ছুদিন খবরের কাগজের পাতা ওলটান। রাজার জন্মদিনে আর নববর্ষে । তাদেরই মহান্ুভবতায় আমাদের গ্রাম ব্যর্থ হয়ে গেছে বারেবারে । যেসময়ের কথা তখন অনেকেই আশা করত আগামী বারে ডাক্তার পরমানন্দ চৌধুরীর নাম দেখা যাবে লিস্টে । খোচাটা তাই অনেকেই বেশ উপভোগ করল। | শহরের আর একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন,--আপনি আমাদের শহরের একজন নামকরা লোক । মাপনার ঘরে আজকের দিনেও ঘদি এ ছবিখান! টাঙানো থাকে তবে সেট! এ শহরেরই অপমান ! পরমানন্দ জবাবে কি ষেন বলতে গিয়ে থেমে যান । হঠাৎ লক্ষ্য হুল একটা চেয়ারের উপর দাড়িয়ে নীল! দিল্লী দরবারের ছবিখানি নামিয়ে রাখছে । পরমানন্দের দৃষ্টি অনুসরণ করে জনতার দৃষ্টি গিয়ে ১৫ পড়ে নীলার উপর । স্য স্নান করে এসেছে বোধ হয খোলা চুল পিঠের উপর ছড়িয়ে পড়েছে । সবাঙ্গ শুভ্র খদ্দরে বিমণ্ডিত। কে একজন আনন্দে চীৎকার করে ওঠে-_বন্দেমাতরম্‌ ! বাইরে অপেক্ষমান জনতার কণ্ে ওঠে প্রতিধ্বনি ! পরমানন্দ হাত ছুটি বুকের কাছে যুক্ত করে বলেনঃ আশাকরি আপনর তৃপ্ত হয়েছেন । অথাৎ ভদ্রভষায়_ এবার আপনারা যেতে পারেন। সেই ছেলেটি বলে, আর একটা কথ।। এ যে বিদেশী মহিলাটি আপনার বাড়িতে আছেন--ওঁকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। --কেন? _কুইট-ইগডিয়া হচ্ছে আম।দের মন্ত্র । উনি বিদেশিনী। _উনি মানুষ । কে একজন বলে কবি বলেছেন, “দেশের কুকুর পুজি বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া বটে ! আমি তো জানতাম কৰি বলেছেন, “জগৎ জুডিয়া আছে এক জাতি-_সে জাতির নাম মানুষ জাতি! সামনের ছেলেটি উদ্ধত ভঙ্গিতে বলে- আমরা এখানে কবির লড়াই শুনতে আমি নি। আপনি ওঁকে তাড়াবেন কিনা বলুন । _না! আর শুধু না নয়, ও ভদ্রমহিলার সম্বন্ধে আমি আপনার কোনও অভদ্র ইঙ্গিত বরদাস্ত করতে রাজী নই। আপনার! এবার আসতে পারেন । _-আপনি পছন্দ না করলেও এ বিষয়ে আমাদের আলোচন। চালাতে হবে। আপনি ও'কে তাডাতে রাজী না হলে বাধ্য হয়ে _ব্যস্‌! সেক্রেট.বিয়েট টেবিলের টান! দ্রয়ার খুলে কালো রঙের ছোট্ট জিনিসট। উনি তুলে নিলেন হাতে : আউট, অ:উট যু ভ্যাগাবগুস্‌ ! _জ্যাগাবঞগ্ডস্‌। আচ্ছা দেখ! যাবে! লোকগুলো গালাগাল দিতে দিতে চলে গেল ! ১৩ মিস গ্রেহাম এসে বলেন -তুঁমি কেন ওদের বললে না যে, আমাকে কোনও ইংরাজ অথবা আমেরিকানের আশ্রয়ে পৌছে দিলে আমি দেশে ফিরে যেতে রাজী আছি । পরমানন্দ ওঁকে সাম্বন। দেন, বলেন--এরা সব কাউয়ার্ডস। আর ভিড়বে ন। এদিকে । ওদের কথায় কিছু মনে কোরো না। তা আমি জানি। কিন্তু শুধু বাইরেই ভে। নয়_-ঘরেও যে আমি অবাঞ্ছিত বিদেশিনী । পরমানন এ কথার জবাব দিতে পারেন নি। সেলোকগুলো সাত্যিই আর ফিরে এল না। তবে দেখা করতে এলেন ননীম।ধব রায় । বার্টন আ্যাণ্ড হ্যারিস কোম্পানির বড়বাবু, রাজভক্ত প্রজা তিনিও -পরমানন্দের দীর্ঘাদনের বন্ধু। প্রথম থেকেই লেগে আছেন ফ্যাকটরিটার সঙ্গে । ওরই কল্যাণে ননীমাধবের সংসারের শ্রীবৃদ্ধিটাও দত্রি আকর্ষণ করার মতো । ইংরাজ অফিসারদের ঠিকমতো! তোয়াঙ্জ করে আখের গুছিয়ে নিতে ভুল করেন নি তিনি । শহরের অন্যতম. বিশিষ্ট ব্যক্তি । বার্টন আযাণ্ড হ্য/রিস কোম্পানিতে বান্ডালী অফিসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্দে অধিষ্ঠিত। কোম্পানির আদি পর্ব থেকে ধাপে ধাপে ভঠে এসেছেন উপরে এমনি একাদিক্রমে উধ্র্বে উঠতে থাকলে ্বর্গরোহুণ পর্বে সত্যই স্বর্গে গিয়ে পৌছবেন এক দিন | শুধু চৌধুরীর সঙ্গে নয়--চৌধুরী পরিবারের সঙ্গেই তার ঘনিষ্ঠ হ্বগ্তা। ৷ দরকারী মহলে, থানায়, এস. ডি ও. সাহেবের খাস কামরায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিনা এত্বেপাতেই চুকে পড়েন তিনি । আর্দালিগুলো। পর্যন্ত এমনই চিনে গেছে তাকে! রায়মশাই এসে লছুপদেশ বর্ধণ করতে শুরু করেন চৌধুরী সাহেবের উপর । প্রতিবেশীর ছেলেটা যখন বখে যাবার পথে পা বাড়ায় তখন সে সংবাদটা তার 'মভিভাবককে জ্ঞাপন করে সহুপদেশ দিতে আসার মধ্যে অদ্ভুত একট! তৃপ্তি আছে । ননীমাধব কিন্তু সত্যই হিতৈষী ছিলেন এ পরিব্রের । উনি চৌধুরীকে জানালেন সব কথা । অসীমকে নাকি এ্ডটা। আধময়ল। পায়জাম। পরে রীতিমতো! কুলিবস্তিতে আজকাল ১৭ ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে । এত বড় সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলের এ আচরণ ক্ষমা করা যায় না। বেশ ঘনিয়ে বসে গুরু করেন উনি-_- সের্দিন তো, বুঝলে, বড় সাহেব আমাকে ডেকে বলেই বসলেন; “রায়, ভূমি ডক্টর চৌধুরীকে আমার নাম করে বুঝিয়ে বলো-- এটা বাড়াবাড়ি হয়ে পড়ছে । একটা সফিস্টিকেটেড ঘরের ছেলে শেষকালে ঝুলি ব্যারাকে গিয়ে ধর্মঘটের ইন্ধন জোগাবে ?' আমি বললাম, বুঝলে, “এ তুমি কি বলছ সাহেব ? চৌধুরী আমার বিশিষ্ট বন্ধু । ওদের সংসারের নাডি-নক্ষত্র পর্যন্ত আমার নখদর্পণে। ও-সব গান্ধাইট ফুলিশনেস ওদের বাড়ির ত্রিসীমানায় ঢুকতে পারে না। অসীমকে তুমি চেন সাহেব। এস ডি ও. ওকে জাতীয় রদ্দী বাহিনীর কি-যেন-একটা করে দিয়েছেন। অসীম করবে ধর্মঘটের আয়োজন ? ইম্পন্সিবল ! আযাবসার্ড। এই জনবুদ্ধ জেতবার জন্য ওদের উৎকঠ্ঠার শেষ নেই। ওদের পাটি কখনও নেমকহারামি করবে না, দেখো !* সাহেব, বুঝলে, মনে হল মেনে নিল আমার কথাটা। আর তা! ছা কথাটা তে! মিথ্যাও নয়। কিন্ত আমি কি বলি জান? জনযুদ্ধের কাজ করতে চাও তা ভদ্রভাবে কর না কেন? কাঙ্গটা তো ভালোই । আখেরে উপকার হবেই | বেটারা নির্ঘাত যুদ্ধ জিতবে--স্থৃতরাং যারা সাহায্য করবে তাদেরই হবে পোয়। বারো আর যারা এই বিপদের দময় পিছন পিছন ফেউ ডেকে বে্ড়ালো। তাদের দফা-রফ হবে যুদ্ধ থামলে! পরমানন্দ বোধহয় তন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন । আপন মনে কি একটা কথ! ভাবছিলেন ছ্িনি । সেটা লক্ষ্য হল ননীমাধবের | হঠাৎ গলাট! খাটো করে উনি বলতে শুরু করেন- আমি কিন্তু তোম!কে অন্য একটা কথা বলতে এসেছিলাম ভাই। জানি না, তুমি কিভাবে নেবে কথাটা । তবু, বুঝলে, যেহেতু তোমাকে ভালোবামি তাই কথাগুলে! বলছি ।-"-তুমি নীলাকে এবার সামলাও । ননীমধন্বের কাছ থেকে জানতে পারেন ঘষে, নীলা আজকাল রীতিমতো বাড়াবাড়ি শুরু করেছে নাকি। খদ্দর পরে ঘ্বুরে বেড়ায় এখানে ওখানে । সেদিন নাকি ছাত্রদের কোন একট] মীটিঙেও তাকে ১ উপস্থিত থাকতে দেখ! গেছে। ননীমাধব আরও বলেন--ধানার ও. সি. মজুমদার সেদিন আমাকে বললে, বুঝেছ, তোমাকে একটু টিপে দিতে । বলে, তোমার ঘরের দিল্লী দরবারের ছবিখান। নাকি সে-ই সবার সামনে টেনে নামিয়েছে। তা, আমি বললুম, তা ছাড়া আর কি করতে পারত সে? হাজার খানেক লোক গিয়ে যদি কারও বাড়িতে চড়াও হয় তো মানুষে আর কি করবে ? অত যদি আধিক্যেতা তোমাদের তাহলে শহরে যে কজন রাজভক্ত প্রজ। আছে তাদের বাড়ির সামনে পেট্রল গার্ড বসাও তোমরা । দেখি, কে এসে ছবি নামায়। নাকি বল? এবারও জবাব দিলেন না! পরমানন্দ | __ছবিখানা আর টাঙাও নি দেখছি । -_না। ভালোই করছে । ও হাঙ্গামা-টাঙ্গামা৷ চুকে বাক, তারপর আবার টাঙাঁলেই চলবে । আমার বাইরের ঘর থেকেও, বুঝলে, রাজা রানীর ছবি ছুটো খুলে এনে শোবার ঘরের দেওয়ালে টাঙিয়েছি। আর একটা কথা ভ।ই, কিছু মনে কোরো না, এ গ্রেহাম বুড়ীকে কিছু দিনের জন্য কোনও বিলাতী হোটেলে-মোটেলে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না? পরমানন্দ হেসে বলেন পা, যায় না। কন যায় না দে প্রশ্নটা আর করলেন ন। ননীমাধব। তবু অন্য প্রসঙ্ষট। আর একবার উদ্বাপন কবেন উনি । বস্তত নীলার ভবিষ্যৎ নিয়ে নশীমাধব অনেকদিন আগে থেকেই ভাবছেন । আকারে ইঙ্গিতে দ্রিনিসট। বুঝিয়েও দিয়েছেন চৌধুরীকে । মনে হয় তার নমাগ্রহ আছে ওতে । না থাকবেই বা কেন? দীপক সবদিক থেকেই বাস্থনীয় পাত্র । নীলা যদি পুত্রবধূরূপে আসে একদিন ননীমাধবের সংসারে তাহলে কোনও পক্ষেরই আপত্তি নেই। সুতরাং ননীমাধব নীলান প্রসঙ্গটা আবার উত্থাপন করেন- কিন্তু নীলুমাকে তুমি একটু সাবধান কারে দিও ভাই। পরমানন্দ এতক্ষণে পেশ করেন নিজের বক্তব্য-_তুমি ভুল করছ ১৪ ননীমাধব । 'আমার বাড়িতে আমি ডিকটেটর নই-_-এ ডেমোক্রাটিক সংসারে আমি ব্যক্তিত্বাতন্ত্রকে চিরকাল মেনে এসেছি । ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিয়েছি, বুদ্ধি বিবেচনা হয়েছে তাদের-যে পথে তারা চলতে চায় চলুক, আমি বাধ! দেব না। তবে কোন পথে চলা কি ফলাফল ভা! আমি ওদের বুঝিয়ে দিই । অপরের মত মাথা নত করে জীবনে কখনও মেনে নিই নি, অপরের উপরে কখনও নিজের মতামতও চাপাতে চাই না আমি । ননীমাধব জেরা শুরু করেন, অপরের কথায় ছবিখানা কেন নামালে তাহলে দেওয়াল থেকে? --ছবিখানা আমি নামাই নি। _-কিন্তু তুমিই তো গৃহকর্তা, তোমার অমতে তো! _ না। আগেই বলেছি, এ সংসারের ডিকটেটর নই আমি। এ বাড়ির দেওয়ালে কোন ছবি চাঁডানো। হবে সেটা যদি একমাত্র আমার হুকুমেই স্থির করা হয় তাহলে ক) ভশ্বাতস্ত্রা আর মানলাম কোথায়? এইসব ছেঁদো কথা বরদাস্ত হয় নল! ননীমাধবের । প্রাাকটিকযাল মানুষ তিনি । এ যেন বাড়াবাডি । ঘর-সংসার তো তিনিও করছেন-- তিটিও তে। সন্তানের জনক । ভবে এসব পাগলামি নেই । ছেলেমেয়ে হল দু ঘোড়া, মুখে সব সময় কড়া লাগাম াগিয় ভপটি উচিয়ে না থাকন্দেই ওরা বেচালে চলবে! এই তো দীপক” . অনীমেরই সহপাঠী । ভার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ, গ্ ৩টি বন্ধুর নামগোত্রি হন্দিস-হিসাব ননীমাধবের নখদর্পণে । বাপের অমত তো! ঘুক্রে কথা বাপ অপছন্দ করতে পারেন এমন কোনও কিছুর ছুঃম্বপ্ন দেখবার সাহস নেই দীপকের। কিন্তু কি অঞ্ভুত এ লৌকটি ৷ নিজের ভালোমন্দ বোঝে ন!। অনুধাবন করে না সন্তানের মঙ্গল হবে কিসে । সে কথাই বোঝাতে যান উনি-_কিন্তু ওটা তুমি ভুল করছ না কি চৌধুরী? ওর! অপরিণতবুদ্ধি। নিজের ইচ্ছায় ওদের চলতে দিলে ওরা তো ভুল পথে ঘেতে পারে । ১4০ পরমানন্দ জবাবে বলেন - আমার বাবার সঙ্গে আমার মতের মিল হয় নি। যে পথে আনি চলতে চেয়েছিলাম তিনি সে পথে আমাকে চলতে দেন নি। তার মতটাও এদিকে শ্রহণ করতে পারি নি মামি মনেপ্রাণে । ফলে না রাম না রহিম, কোনও আদর্শই টিকিয়ে রাখতে পারি নি। সেতুল আমি করব না আমার সন্তানের বেলায় । ননীমাধব প্রশ্থ করেন--কি চেয়েছিলেন তোমার বাবা ? --আমি বড ডাক্তার হব জীবনে। আর তুমি কি চেয়েছিলে ? হাসলেন চৌধুবা ডাক্তার । ননীমাধব বুবাতে পারেন আরও বড় কিছু হবার আদর্শ হিল নিশ্চয়ই পরমানন্দের। সে লক্ষ্যে তিনি পৌছতে পারেন নি। পাছে হাস্য ৬র মনে হয়, তাই সে কথা নিকষ্ট বন্ধুর কাছেও আজ্র স্বীকার করতে প:রছেন ন।। তাই বলেন--কিস্ত তুমি তো৷ তোমার বাবার ইস্ছ! পুরণ করেছ। আবন তো তোমার ব্যর্থ হয় নি ভাই । কোথাও কোনও মপূর্ণতা নেই তো তোমার জীবনে । এবারেও হেসে নীরব রইলেন পরমা নন্দ । ননীমাধব বুঝতে পাবেন যনের কোনও গোপন কন্দরে বার্থতার বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন ডাক্তার চৌধুরী । ধন-সম্পন্তি' প্রতিপত্তি' যশ-_ সবই পেয়েছেন প্রচুর, তবু তৃপ্ত নন তিনি । আরও বড় কিছু হতে চেয়েছিন্সেন বোধ হয়। কী সে? আই সি এস. চাকরি £ কাউন্দি সার- শিপ ? প্রসঙ্গটা! পালটে নেন উনি আপাতত - আচ্ছা চৌধুরী, আমাকে একটা কথ! সত্যি করে বলবে ? বলো । -- মহাত্মা গান্ধী কি বলে গেছেন এইসব হাঙ্গাম! করতে 1? এ কি সম্ভব ? তোমার কি মনে হয়ঃ - আমি জানি না কিছু । -আহা, তা তো বটেই! আমি বলছি, তোমার কি মনে হয় ? বামীদের এখন কি কর! উচিত 1 --তোমার বিবেক য। বলে । ১ হঠাৎ চটে ওঠেন ননীমাধব - এইজন্যেই তোমার উপর রাগ হয় চৌধুরী । প্রাণ খুলে কথ! বল না কেন তুমি? আবার সেই গা-জবালানে! হাসি ! দিন কেটে যায়। অসীম একদিন বাপের হাতে এনে দিল একতাড়া কাগজ- এগচলো নীলার বিছানার তলায় পাওয়। গেছে । জকুধিণ্ত হয় পরমানন্দের । নিষিদ্ধ প্রচার-পুস্তিকা। দেশব্যাগী গণবিক্ষোত করার নির্দেশ আছে তাতে । কর্মসচিব একটা! লম্বা! ফিরিস্তি। তলায় কংগ্রেসের বজ ব্ড নেতার নাম। আগ্ার-গ্রাউণ্ড প্রেস থেকে ছাপা । অসীম উত্ভেজিত হয়ে বলে- নীলাকে তুম সাবধান করে দাও বাবা । ভা ছাড়া আজকাল ও যে-সব জায়গায় যাতায়াতকরে- যাদ্রর সঙ্গে মেশে তাতে আমার সন্দেহ হয় ও আমাদের বংশের নাম ডোবা ৷ ওদের পার্টির কয়েকটি ছেলেও আসে এ বাড়িতে নীলার সঙ্গে গোপনে দেখা করতে । পরমানন্দ বিচলিত হয়েছিলেন কিন। বোঝা যাঁয় না কিন্তু উত্তেজিত তিনি হয়েছিলেন। গ্রশ্ন করেছিলেন তিনি অসীমকে-_তুমি কি করে জানলে ? তুমি নিজে দেখেছ ? _না, আমি নিলে দোঁখ নি, বৈশাধা দেখেছে। পরমানন্দ বৈশাখীকে ডেকে পাঠালেন । এসে দীড়াল মেয়েটি । ন'লার চেয়ে বয়সে ছ-এক বছরের বড়ই হবে৷ দেখলে কিন্তু নীলাকেই বড় বলে মনে হয়। নীলা ধীর, গম্ভীর--বয়সের অনুপাতে গাস্তী্ধ ভার বেশী। এদিকে বৈশাখী চঞ্চলম্বভাবা, ওর খঞ্জন নয়ন ছুটি সর্বদাই চঞ্চল হয়ে ঘুরছে আশেপাশে । এ পরিবারেরই মানুষ বৈশাধী। পরিচয় দিতে গেলে বলতে হয় সে পরমানন্দের হাসপাতালের বেতনতুক যেতে «. কিন্ত ভা ছাড়াও তার একটা আলাদা পরিচয় ভাছে। সে | বৈশাখী পরিবারতুক্ত লোক। আরও একটা পরিচয় আছে বৈশাখীর- কিন্ত সে পরিচয় অসীম আর বৈশাখী ছাড়া আর কেউ জানত না। 'পরমানন্দ ছ-একটি প্রশ্ন করলেন ওকে । তারপর তাকে বিদায় দিয়ে ডেকে পাঠালেন নীলাকে । এসে দাড়াল নঙনয়না মেয়েটি । ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে কী দেখলেন পরমা'নন্দ । তাবপর বললেন-_এ কাগজগুলো তোমার বিছানার তল! থেকে পাওয়া গেছে । নীলা একবার চোখ তুলেই মুখটি নিচু করে । মুখটা রক্তশৃহ্য হয়ে যায় ওর। _ এ-সব (জিনিস অমন অস।বধানে পাখতে নেই । যাও । ভয়ে নীল-হয়ে-যাওয়া নীলার হাতের মধো গুজে দেন কাগজের বাগ্ডিলটা। নীল? চলে যায় দ্রুতপদে অদদীম অনেকক্ষণ কোনও কথা খুঁজে পায় না । শেষে বলে-_এটা কি ঠিক হল? শেষে ওকেই দিলে কাগজগুলো ? --তুমি যে বললে ওগুলো নীলার । অসীমেপ বিস্ময় খেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। খলে, কিন্তু ওকে সাবধান করে দিলে না? শাসন করলে না? - সাবধানই ০ে। করে দিলাম । আর শ!সন আমি কাউকে করি না। তোমব। বড হয়েছ, বুদ্ধি শিবেচশা হযেছে । নিজের বিবেক মন্ুম(য়ী তে।মর। যে যার আদর্শে চলবে এই আমি চাই। -- ভাব মানে নীলাখ এ-সব অপকাীতিতে তোমারও গোপনে সমর্থন আছে? ৰ না, নেই। যেমন নেই তোমাব 'জাপানকে রুখতে হবে? যুক্তিতে । কিন্ত এ বাড়িতে কারও ব্যক্তিম্বাধীনতায় আমি হাড দিতে চাই না। যেযার কর্তব্য করে যাব আমর! ! অসীষের কণ্ঠে এবার রূঢতার আমেজ--বুঝলাম ! এট! জান! ছিল না আমার । তুমিও তা হলে এ দলে ! _-খোক। ! _বেশ! কিন্ত আমার যদি মনে হয় নীলার এই খবরটা আমার ০ দিয়ে আসা উচিত--তাহলে আশা করি তুমি আপত্তি করবে না। আমার সে ব্যক্তিম্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না আশা করি। পরমানন্দ মু হেসে বলেন_ লা । -ভালো কথা । দুম ছুম করে পা ফেলে অসীম চলে ঘায়। মনে মনে এবার একটু বিচলিত হয়ে পড়েন পরমানন্দ। পাগল ছেলেটা সত্যিই একটা কেলেঙ্কারি করে বসবে না তো? বিশ্বাস হয় ন! তার। অলীম ছেলেমানুষ নয় । এ কাজের ফলাফল কী ভয়াবহ হতে পারে এ কথ! না বুঝবার নয় । নিজের এ বয়লটার কথা মনে পড়ে ধায়। নিজের বাপের সঙ্গে আদর্শগত বিরোধ বেধেছিল তারও । অসীমকে যতট। স্বাধীনভাবে পথ চলতে দিচ্ছেন তিনি, অতট! স্বাধীনতা জোটে নি নিজের শেলা । ষা কিছু করতে হত্ব_ তা গোপনেই সারতে হুত। ভাক্তারি পড়বার জন্য ঘখন তিনি প্রবাসধাত্রা করেন তখনও তার বাব! জানতে পারেন নি কেন তিনি শেষ পর্যস্ত রাজী হলেন ডাক্তারি পড়তে । কোনদিনই ত1 আর জানতে পারেন নি। দিন কেটে যায়। বাড়ির আবহাওয়াটা অসহনীয় । নীলা আর অসীম পরস্পরকে এড়িয়ে চলে । প্রাতরাশের টেবিলে মিস গ্রেহামের কাছে শুনতে পান অসীষঝ আগে খেয়ে নিয়েছে অথবা নীল! পরে খেতে আালবে। ব্ম্তত ছুজনের কারও সাক্ষাৎ পান না আর পরমানন্দ। এ বাড়িতে এটা রীতিবিরুদ্ধ। দিনের মধ্যে ছ্বার এক টেবিলে আহার গ্রহণের একটা অলিখিত আইন অলজ্বনীয় বলে মেনে নিয়েছিল এ সংসার । সকাল সাতটায় প্রাতরাশ এবং রাত্রি নাড়ে আটটাস্ব ডিনার । মধ্যান্থে আহ।রটা অবশ্য একত্র সম্ভব ছিল না । ছেলেমেয়েরা সকালে খেয়ে স্কুলে কলেজে চলে যেত--চৌধুরী খেতে আসতেন বেলা ছিপ্রহরে ! এখন শুধু প্রাতরাশ নয়, রাত্রের ডিনার টেবিলেও একত্র আহারট1 ঘটে ওঠে ন! দেখা যাচ্ছে । অসীমের রাত হয়- কোনদিন না দশটা কোনদিন বা আরও গভীর রাতি। নীলা ষেন নিজেকে -ন্প্ একেবারে গুটিয়ে ফেলেছে । পরমানন্দকে ছুজনেই পরিহার করে চলছে । গ্রেহাম বুডী মাঝে মাঝে এসে বলে--এবার আমাকে ছেড়ে দাও চৌধুরী । তোমার হাসপাতাল আমার মতো বুড়ীকে বাদ দিয়ে চলতে পারবে এখন । এবার আমি অন্য কোথাও চলে যাই। প্রমানন্দ প্রতিবাদ করেন । বু শী মেম তখন আসল কথাটাই ভেঙে ধলে আমাকে ভুল বুঝো না চৌধুনী, আমার অবস্থা হয়েছে ভায় তোলা মাছের মতো! । এখানে আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় । চৌধুরী আর আপত্তি করতে পারেন না। বেশ, শেষ জীবনটা তিনি যেখানে যেভাবে কাটাতে চান সেই মতোই ব্যবস্থা করা যাবে না হয়। ঘুদ্ধের ডামাডোলটা একটু কমলেই গুঁকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। বনঝন করে টেলিফোনটা বেজে উঠল । চিন্ত স্বত্র ঠিন্ন হয়ে গেল চৌধুনীর । নিজেকে আবিষ্কার করলেন নিঃসঙ্গ প্রাতর।শ টেবিলে । ক্রিতিং ক্রিরিং - উঠতে হল অগত্যা 1 সিল্কের ড্রেসিং গাউনটার পাকানো কর্ডটা আলগা করে মাজায় বাধতে বাধতে চলে আসেন আ6ওয়ের তল। দিয়ে ড্রয়িং ন্ধমে। রিমিভার থেকে তুলে নিলেন টেলিফোনটা। চৌধুরী! ও প্রাস্ত থেকে ভেসে এল উদ্বিগ্ন ননীমাধাবের উৎকণ্ঠ ব্যস্ততা বেশ যা হোক । আটটা বেজে গেল- তোমার পাত্তা নেই। কি ফরছ? দেরি করছ কেন? পরমানন্দ প্রতিপ্রশ্ব করেন-_ কেন ? কোথায় যাব? - কোথায় ঘাবে ?-ননীমাধব আর্তনাদ করে ওঠেন--সে কি হে? কাল রাত্রে ক পেগে থেমেছিল বলো তো? এখনও খোলস হয় নি মাথা ? বিরক্ত বোধ করেন চৌধুরী । কাল রাত্রে সত্যিই ষাত্রাতিরিক্ত পান করেছেন” নীল চলে যাবার পর। কিন্তু সেন্ড বুদ্ধিতংশ হয় নি গুর। এ নেশা ওর নূতন নয়। বললেন--বাজে কথা বোলে। না। কোথায় যেতে বলছ এখন ? তুর কম্বরে ননীমাধব কিন্তু বিচলিত হন: না। বলেন,- সকালবেল! উঠে এনগেজমেন্ট প্যাডটাও দেখ নি খুলে? কেমন? শোনো, মুখস্থ বলে যাচ্ছি আমি-_সকাল সাড়ে আটটায় বোর্ড-অফ ডাইবেকটর্গদের মীটিউ_-সাড়ে দশটায় জিতেনবাবুব বানায় যাওয়ার কথা আছে__ তাকে সঙ্গে করে এগারোটায় তারিণীদার বাসায় _ মধ্যাহ্ন আহারের নিমপগ্রণ আছে তোমার সেখানে--ও বেলায় ধরো, মিউনিসিপ্যাল হলে সাড়ে তিনটের শোকসভাতে গিয়ে একটা কাপা কাপা গলায় ভাষণ দিতে হবে- সেখান থেকে সাড়ে চাকটায় ভিত্রিক্ট বোর্ডে। মনে পড়ছে কিছু ? তারপর ধরো": ছি ছি ছি! কী মারাত্মক ভ্রান্তি! সব কথা মনে পড়ে যায় পরমানন্দের। তার দিনগুলি কি আর তার নিজের? আপন খেয়ালখুশিতে ফেলে-আস। দিনগুলোর উপর চে।খ ঝুপিয়ে তন্মর হয়ে যাবার অবকাশ কোথায় ? প্রতিটি ঘণ্ট। প্রতিটি মুহুর্ত যে কঠিন কর্মসূচির শৃঙ্খলে বন্দী। সামনের আয়নাটায় প্রতিবিত্ধ পড়েছে নিজের ৷ চমকে ওঠেন দেখে । প্লাড়ি কাম।নো হয় নি' সান হয় নি জামা-কাপড় বদলানো হয় নি। আশ্চর্য, এ-সব না সেরেই তিনি প্রাতবাশের টেবিলে এসে বসেছিলেন? জীবনে অনেক ভূল করেছেন তিনি--ভূলের মাশুলও দিয়ে এসেছেন কড়াক্রান্তি হিমাবে ; কিন্তু, মনে হল ডাক্তার চৌধুরীর, এত বড় ভ্রান্তি বুঝি এই প্রথম । ঘডির ক।টার কাউ।তার দিয়ে ঘেরা দৈনন্দিন কর্মস্থচি আজ বুঝি প্রথম আগল ভেঙে বেরিয়ে এসেছে অনিয়মের অরাজকতায়। নাঃ! এ ছুবলতাকে কিছুতেই বরদাস্ত করা চলে না। _কি হল; তুমি আসবে, না আমিই যাব তোমার ওখানে ? না, না" আমিই যাচ্ছি__-গাড়ি বার করতে বলছি। _-যাক, গাড়িটা ফেরত পেয়েছ তা! হলে ? --ও নী, গাড়ি তো এখানে নেই। তাহলে তুমিই বরং এসে আমি ততক্ষণ তৈরী হয়ে নিচ্ছি । ৯৬১ --তোমার কি হয়েছে বলো তো? জবাব ন] প্ঈয়ে টেলিফোনটা নামিয়ে রাখেন। নন্দ এসে দাভিয়েছিল পাশে । তাকে বলেন এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল দিতে । ফ্রিজ্রিডেয়ার খুলে জলের বোতল আর গ্লাসটা বার করে আনে নন্দ । ঢকঢচক করে এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল খেয়ে নিলেন প্রথমেই । তৈরা হয়ে নিতে অবশ্ট সময় লাগল না । যন্ত্রের মতো কাজ করে গেলেন উনি । চাবি টিপে দেখার পর মেটিরিয়ালগুলো যেমন “কাটার, থেকে 'ক্রাশার' যন্ত্রে লাফিয়ে লাফিয়ে : -ল--আর অনায়বস গতিভঙ্গে শেষ পর্যন্ত সুদৃশ্ট মোড়কে বার হয়ে আসে ফিনিশড প্রডাক্ট হিসাবে কারখানার অন্যতম ডাইরেকটরও তেমনি মিনিট পনেরোর মধ্যে দাড়ি কামিয়ে, আনাদি সেরে সুদৃশ্য মোড়কে আপাদমস্তক মুড়ে এসে বসলেন ড্রয়িং রূমের শো-কেলে । বাথরূমেই নন্দ ইতিমধ্যে রেখে এসেছিল মীটিঙে যাবার পোশাক-_খদ্দরের পাঞ্জাবি, খদ্দরের ধুতি আর বিগ্ঠাসাগরী চটি । কি জানি কেন সাদা খদ্দরের টুপিটি আর আজকাল ব্যবহার করেন ন1 উনি । সারাদিনের মতো তৈরী হয়ে এসে বসলেন বাইরের ঘরে। নন্দ ফ্যানটা খুলে দিয়ে যায়। টেবিলের উপর নামিয়ে রাখে হ্যাগুলুমের শাস্তিনিকেতনী কাজকরা হ্যাণ্তব্যাগটা । ওর গর্ভে আছে তার ডায়েরি, কলম, চেকবই, লেটারহেড-প্যাড, নোটবই আর আছে তাস্রপাত্রের আধারে গোট! চারেক বর্মী চুরুট, একটা তোয়ালে, সাবান আর কিউটিকুর। পাউভার এক কৌটো। ঘামাচিতে বড্ড ভোগেন উনি । অল্প পরেই ননীমাধবের হিন্দুস্থানখানা এসে দাড়াল পোর্টিকোর নিচে । ননীমাধব এসে প্রবেশ করেন । এসেই তাড়াহুড়া শুরু করেন-- অনেক দেরি হয়ে গেছে, বুঝেছ, ভয়ানক লেট করে ফেলেছ তুমি-"' আরে গাড়িটা যে এখনও ফেরত পাও নি তা আমাকে বল নি কেন? --তারপর হঠাৎ চৌথ ছটো ছোট করে কণ্ঠস্বর নিচু করে রসিকতার ভঙ্গিতে বলেন-_ওটার আশ! ত্যাগ করে৷ ভাই, বুঝলে দেশের সেবায় তো অনেক কিছুই দান করেছ তুমি-_মনে করো ওটাও গেছে এ ৭ খাতে । আর একখানা গাড়ি কেনো তুমি । পরমানন্দের গাড়িটা আজ মাসাবধিকাল আছে তাঁরণীবাবুর হেপীজতে । তারিণীবাবু এ জেলায় প্রায় সকলেরই তারিণীদা | বৃদ্ধ মানত _আজীবন কুমার ; জেলার নামকরা জননেতা ) বহুবার জেল খেটেছেন _বন্ছ নির্যাতন সহ্য করেছেন জীবনে । চেষ্টা নয় -- শুধুমাত্র ইচ্ছা করলেই একটা দাদী গাড়ির শুধু দাম নয় বনেটের সামনে পতাকাওয়ালা গাঠিই হয়তো তিনি জোগাড় করতে পারতেন সরকার থেকে-_কিস্তু তা তিনি ক নি। এই নিরলস অক্লান্ত দেশকর্মীটি আজও আকড়ে আছেন রাজনীতিকেই। ইতিহাসে চিরকাল একজ্রেণীর ক্ষণজন্ম। পুরুষ থাকেন য!রা রাজ্যচীলনা করেন না কিন্তু রাজাদের চালান--তদের বলে “কিং-মেকার? । তারিণীদা এ জেলার সেই শ্রেণীর পীর্ষস্থানীয় জননায়ক । জনসেবার কাঁজে তাকে জেলার এ প্রাস্ত থেকে ও প্রান্তে উদরাস্ত ছোটাছুটি করে বেড়াতে হয়। শাঁসন্ন নিবাচনের ব্যাপারে ছোট।ছুটিটা কোচ গেছে তার । পরমানন্দ একই রাজনৈতিক দলভুক্ত । তাই নিজের গাডিটা দিয়ে রেখেছেন তার ভবিদীদাকে । প্রতিদানে, না প্রতিদানে কিছুই চ.ন নি তিনি। শরমানন্দ ধীরে ধীরে লেন নীলা কাল রাত্রে চলে গেছে । বাস্তবাগীশ ননীমাধব সলেন--ও | হা1 আর দেরি করছ কেন? ওঠো, চলো যাই | পরন:নন্দ ভাবার উচ্চারণ করেন কথাগুলি মামার কথাটা তুমি কানে তোল নি ননীমীধব। নালা কাল ব্রাত্রে আমাকে ত্যাগ করে চলে গেছে। এবার অর্থগ্রহণ হয় ননীমাধবের। বসে পড়েন একট। সোফায় : ত্যাগ করে চলে গেছে ? মানে? | মালে, আমাদের বপন্দাদাদেব আমলে আমরা অন্ঠায় করলে ত্যাজ্যপুত্র হতাম; এখন যুগ পালটে গেছে। এখন বাপ অন্থাক্সি করছে মনে করলে ছেলেমেয়েরা তাদের ত্যাজ্যপিত1 করে । ননীমাধব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন তারপর বলেন -এ রকমটা ই যে একদিন ঘটবেই ত। আমি জ্ঞানতাম । তোমাকে কতবার সাবধান করেছি আমি সত আশকারা দিও না। তুমি কান দাও নি।"'' যাই হোক, ও জন্তে ভাবনা কোরো না। রাগ পড়লেই ফিরে আসবে । যাবে আর কোথায় ? কোনও বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে উঠেছে বোধহয় । _নাঁ! আমার মনে হয় সে গিয়ে উঠেছে পি নাইন ব্যারাকে । চমকে ওঠেন ননীমাধব - না, না, এতটা নিচে নামতে পারে না কখনও নীলা । _তুমি উদয়ের পথে'.মিনেমাটা দেখেছিলে ? -_শা। কেন? --ওর। একে নিচে নামা বলে না বলে, ওপরে ওঠা । _ না, না, কি আবোল-তাবোল বকছ যা তা!। চক্ষুলজ্জা বলেও €তা একটা জিনিস আছে । এ বাড়ির মেয়ে কখনও আমাদের কুলি- ব্যারাকে গিয়ে উঠতে পারে ? যাক, এ নিয়ে অবহেলা করাটা ঠিক নয়। মীটিঙ সেরেই সোজা চলে যাব জীবনবাবুর ওখানে । সেখান থেকে তারিণীদার বাসায় কাজ সেরেই ছুপুরে একটু ফুরসত পাব। ভখন খেক করা যাবে । বাড়াবাড়ি হবার আগেই মিটিয়ে ফেলতে হবে ব্যাপারটা । ওঠো এখন । আটটা পঁচিশ হয়ে গেছে। ননীমাধবের সঙ্গে পরমানন্দও এসে ওঠেন গাড়িতে । হিন্দুস্থানখানা চলতে থাকে পীচঢালা পথে পদাতিকদের গায়ে কাঁদ। ছিটিয়ে। আবার চিস্তার মণ্যে অবগাহন করতে থাকেন পরমানন্দ । ফেলে- আসা দিনগুলোর কথা ভাবছিলেন তিনি । কোথায় যেন চিন্তাস্বত্র ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল? ঠিক মনে আসছে না। জীবনে এক-একটা মুহূর্ত আসে বড় অতক্কিতে। এলি মাহেন্ত্রক্ষণ। যেমন করে বাঁক নিচ্ছে গাড়িটা জীবনপথও এমনি হঠাৎ বাঁক নেয় এমন লগ্নে। সে রকম ছুর্ণভ মুহুর্ত বহুবার এসেছে তীর জীবনে । এই তে! মীস কয়েক আগে চা একটা চরম "মুহুর্ত এসেছিল এই পথেই । সেদিনও এমনি জোরে ছুটছিল গাড়ি। তিনি ছিলেন ড্রাইভারের পাশের 'সীটে, পিছনের সঁটে, বসেছিল নীলা । হঠাৎ ফ্যাকটরির গেটের ক্শছে তার মোটরের গতিপথের মাঝখানে এসে দাড়াল একটা লোক । ড্রাইভার অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে ব্রেক না কষলে হয়তো চাপা পড়ত লোকটা ৷ নীল পায়জামা পরা একজন কারখানার মজুর, একমুখ খেঁচা খোচা দাড়ি, হাফশার্টের গায়ে মবিলের মানচিত্র | রুক্ষ অবিন্যাস্ত চুলগুলো উড্ছে হাওয়ায় ৷ গাড়িটা দাঁড়িয়ে পড়তেই গেট থেকে ছুটে এসেছিল গুর্খা দারোয়ান ধরেছিল লোকটাকে । পরমানন্দও মুখ বার কবে ধমক দিতে যান--দেখতে পাও না! চাপা! পড়ে মরতে যে ! _-এ ছাঁড়ী তো! আপনার সঙ্গে দেখ! করার উপায় ছিল না।। লোকটাকে চিনতে পেরেছিলেন পরমানন্দ ৷ মুহুর্তে মাথাটা টেনে নিয়ে ড্রাইভারকে ধলেন_ চালাও ! গাড়ি কিন্ত চাল।নো ঘায় নি। ইতিমধ্যে অনেকগুলি লোক ঘিরে ধাড়িয়েছে গাড়িটাকে । সকলেই কারখানার মেহনতা মানুষ । যাঁদের ভালে করবার শুভ উদ্দেশ্য নিয়েই তিন গ্রহণ করেছেন কোম্পানির পরিচালন-দায়িত্ব। হাফপ্যাপ্ট মার লুত্রিক্যান্ট-লাঞ্কিত হাফশার্টের মিছিল । লোকট। কাছে এগিয়ে এসে বলে -মাপর্নাকে এভাবে আটকাতে হল বলে দুঃখিত । আপনার সঙ্গে কয়েকটা কথ! ছিল-_-কারখানায় ' আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয় না । আপনার বাড়ির দরজা থেকে তিন দিন ফিরে এসেছি । কাজেই পথের মাঝখানে আপনাকে এভাবে বিরক্ত করছি। --এখন আমার সময় নেই । পরে দেখা কোরে । ড্রাইভার ! কবে, কখন, কোথায় বলে যা । ”. লোকটাকে এড়াবার জন্ত উসখুন করছিলেন পরমানন্দ। কি আলবেন ঠিক করে উঠতে পারেন না । গট৬ পিছনের সীট থেকে নীলা বলে ওঠে-ও কে বাবা ? পরমানন্দ সে কথার জবাব ন! দিয়ে লোকটাকে বলেন -কাল সকাল দশটায় অফিসে দেখ। কোরো । ওর! তংক্ষণাৎ পথ ছেড়ে দেয় । গাড়ি চলতে শুরু করে। নীলা কিন্তু একই প্রশ্ন করে আবার-_লোকট কে বাবা ? _কিজানি! কারখানারই কোনও মজুর হবে বোধ হয়। নীলা চুপ করে যায়। স্বস্তির নিশ্বাস পড়ে একটা পরমানন্দের | তিনি কিন্তু ভুল করেছিলেন । নীল]! চিনতে পেরেছিল এ লোকটাকে । কাল রাত্রে সে কথা জানতে পারেন প্রমানন্দ । মনে পড়ে যায় গতকাল রানে নীলার সঙ্গে উষ্ণ বাক্যবিনিময়-- মিথ্যা কথা আমি বলি না নীলা। - আগে বলতে না! কিন্তু ' কিছু মনে কোরো না বাবা, কয়েক মাস আগে কারখানার গেটে যে লোকটি আমাদের গাড়ি আটক করে তাকে কি তুমি সত্যিই চিনতে পার নি সেদিন ? গাড়ি এসে দাড়ায় কারখানার গেটে । গেট খুলে দেয় গুর্খ। দারোয়ান । লোহার মোটা মোটা গরাদ দেওয়া বিরাটকায় শেট যেন লৌহকারার প্রবেশপধ -গায়ে তার কাটাতারের নামাবলী। মুখব্যাদান করে অনায়াসে গিলে ফেলে কালো! রঙের হিন্দুস্থানটাকে । মুখ বন্ধ করে আবার । সশস্ত্র প্রহরা বসেছে গেটের পাশে । লক-আউট চলছে কারখানায় । গুদের গাড়িটা আসফান্টের সড়ক বেয়ে এসে ্বাডায় গাড়ি" বারান্দার নিচে । বোর্ড-অফ-ডাইরেকটর্দদের জরুরী মীটিউ। কলকাতা থেকে এসেছেন অন্যান্ত ডাইরেকটরর1। অধিকাংশই উত্তর-ভারতের লোক । গুদের মধ্যে একমাত্র বাঙালী কর্ণধার পরমানন্দ । ননীমাধব বর্তমানে ১ ম্যানেজারের পদে উন্নীত হয়েছেন । বাটন আযাগ হ্যারিন্দ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা শ্বেতাঙ্গ অধিপতিরা এখন ইতিহাসের মহানেপথ্যে সরে গেছেন। ভারতীয় ধনপতিপা এসে অধিকার করেছেন ওদের শুন্ত আনন । রাস্ত। আর পার্কের নাম বদল করলেও ইংরাজ কোম্পানির নাম সচরাচর বদলাতে ইচ্ছুক হন না ভারতীয় ব্যবসাদারের । হাজ্কার হোক, বিলাতী নামটারও একটা মোহ আছে! অনেক কিছু বদলে গেছে কোম্পানির। অনেক পুরনো লোক বাতিল হয়ে গেছে__এসেছে নতুন লোক । শিথিলতর হয়েছে শাসনব্যবস্থা কারখানায় প্রস্তুত জিনিসেরও হয়েছে অবনতি-যর্দিচ সেটা! স্বীকার করেন না গুরা! সে আমলের যে কতজন মু্তিমেয় লোক শাছেন ননীমাধব তাদের মধ্যে একজন । বেতনভূক পধায়ে বস্ত্র সর্বোচ্চপর্দে অধিষ্ঠিত। দীপকও ঢুকেছে এ কারখানায় - সেও একজন ছোটনাহের । এদের সঙ্গে পরমানন্দের যথেষ্ট হাগ্ভতা, ঘনিঠতা । বন্তাত ননীমাধবের সঙ্গে পরমানন্দ একট! কুটুম্বিতার সম্পর্ক স্থপন করতে পারেন- কারখানায় এমন গুজবও রটেছে । এ ক্ষেত্রে পরমানন্দকেও সহজে কেউ খাটাতে পাহস পান না। পা তলে লিজ অংশের শেরারগুলি বিক্রয্র করে দিয়ে বন্ধ পূর্বেই সরে আসতে হত চৌধুবী ড)ক্তারকে । পরমখনন্দে সঙ্গে কোম্প।নি আজ ভচ্ছেছ্চ বন্ধনে আবদ্ধ । এর সত্রপত হঞচেছিল যেদিন বাটন আগত হ্যাদিস কোম্পানির ছোট তরফে ওয়ালটন হ্য।পরিস মাহেব মনাস্থব করেন বাকি জীবনটা তার ডিভনশারারের বাটি তেই কাঢাবেন । ওয়।ন৬ন অত্)স্ত কৃতজ্ঞ ছিলেন ভাক্তার চৌধুখীর কাছে। বস্তুত চৌধুনী ছিলেন তার জীবনদাতা । প্রতিদানে ওয়াশচন সাহেব স্বদেশধাত্রার প্রাকালে প্রায় নামনাত্র মূল্যে দিয়ে গিয়েছিলেন শেগারের একটা গোছা । ওয়ালটনের সী ছিলেন মিস গ্রেঠামের বান্ধবী । ফলে চিকিৎসীর জন্ত কোনও ফী গ্রহণ করেন নি চৌধুরী । নিতে হল তাই শেয়ারের বাগ্ডিলটা। সৌভাগ্যের নবতম স্ৃচনার এই হল আদি ইতিহাস। প্রতিষ্ঠাবান ডাক্তার হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি-_এবপর স্তীর পরিচয় ছড়িয়ে ৭ পড়ল ক্রমশ জেলার বাইরেও- বড় ভাক্তার বলে নয়--ক্ড ব্যবসায়ী বলে। যে প্রতিষ্ঠানটিকে এতদিন তিল তিন করে গড়ে তুলছিলেন রক্তের বিনিময়ে সেই হাসপাতাল, সেই সেবায়তন, তার ঘড়বাড়ি, যন্ত্রপাতি সবকিছু তিনি বিক্রি করে দিলেন কোম্পানিকে । নগদ টাকা অবশ্ট পেলেন না- হাতে এল আর এক গোছ! শেয়ার । এটা প্রয়োজন ছিল- না হলে ডিরেকটর হতে পারছিলেন না তিনি । নীল! আপত্তি করেছিল--বৌোকা। মেয়েটা ভেবেছিল বুঝি কোম্পানির ম্যানেজিং এজেন্সিই তার লক্ষা--বুঝি অর্ধোপার্জনের মোহে তিনি হাসপাতাল বিক্রি করে বেশী লাভজনক কারবারে বিনিয়েগ করতে চাইছেন তার সম্পত্তি । সে বোঝে নি এর পিছনেও আসল উদ্দেশ্ট ছিল দেশসেবা | তিনি ছেড়ে দিলেন বলে তে! আর হাসপাতাল উঠে গেল না; কিন্তু তিনি হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করলেন বলেই এতগুলি মেহন তী মানুষের ভালে! করবার ক্ষমতা পেলেন তিনি। নন'মাধৰ আর পরমানন্দ যখন এসে পৌছলেন তখন অন্তান্ দকলেই উপস্থিত হয়েছেন । সৌজন্য বিনিময় হল- কিন্তু আন্তরিক আবেগ নেই সে কুশলপ্রশ্নের আদ্দানপ্রদানে। সকলেরই মুখ গম্ভীর । শ্রমিকেরা ধর্মঘট ঘোষণা করেছে ; লক-আউট চলেছে কারখানায় । চতুক্ষেণ টেবিলের চারিদিকে গর! ঘিরে বসেছেন। রুদ্ধদ্বার কক্ষে ধর্মঘটা শ্রমিকদের দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেল। এ কারখানার ইতিহাসে এজাতীয় ঘটনা অতৃতপূর্ব । মফঃস্বলের এ অঞ্চলে এতদিন এ-সব হাঙ্গীমা ছিল ন!; তা ছাড়া ননীমাধবের তীক্ষু দৃপ্ত ছিল এ বিষয়ে । বিদ্রোহের কোনও শিশুতরু মাথা তুলছে দেখলেই যথোচিত ব্যবস্থা করতেন তিনি। * যৌবনে একমাথা ঘন কালো চুল ছিল ননীমাধবের । তা নিয়ে রীতিমত গর্ব ছিল গুর। প্রৌচত্বের প্রারস্তেই কানের পাশে ছু-এক গাছ করে পাকতে শুরু করল । রায়মশাই তৎক্ষণাৎ সচেতন হয়েছিলেন । পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গে নাতি-নাতিনী স্থববাদ বাধিয়ে লাগিয়ে দিলেন সত বালখিল্য বাহিনীকে । কীচা চুলের অরণ্য থেকে বেছে বেছে তামাটে রঙের চুলগুলোকে একটি একটি করে সমূলে উৎপাটিত করত ওর!। বিনিময়ে ঘুষ জোগাতে হত ননীমাধবকে--কখনও লজেন্স, কখনও তাত্রখণ্ড, কখনও বা সিনেম। দেখানোর প্রতিশ্রুতি । ৃ কারখানাতেও একই পদ্ধতি চালিয়ে এসেছেন তিনি । নিকষ কালে। সরল মানুষগুলোর মপ্যে এক-আধটা লোকের গায়ে যদি দেখা! যেত তামাটে অথবা লালচে রডের আমেজ অমনি সোন্না দিয়ে চেপে ধরতেন তাকে । সমূলে উৎপাটিত করতেন লালের আমেজ-মাখানে? মানুষটিকে । এ জন্যও নতুন ধরনের লেন্স জোগান দিতে হত এক শ্রেণীর লোককে । কিন্তু ননামাধবের এত সতর্ক সন্ধানী দৃষ্টির মধ্যেই গোপনে এসে শিকড় গাড়ল কোন অলক্ষ্য ফাটলে এক শিশু-মহীরুহ। অন[তি- বিলম্ঘেই নজর পড়ল ম্যানেজারবাবুর- তামাটে নয়, লোকটির রঙ রক্তের মতো লাল ! বিষবৃক্ষকে সমূলে তুলে ফেলার ব্যবস্থা হল। হয়তে কঠিন হত এই অবাঞ্ছিত শ্রমিকনেতাকে ছাঁটাই করা, কিন্ত সৌভাগ্য" ক্রমে লোকট! ছিল চোর। ওর সেকশনে কতকগ্লো যন্ত্রের পার্টস চুরি গেল আর হাতনাতে ধরাঁও পড়ে গেল লোকটি । রেজিস্টার থেকে নাম কাটা গেল- নোটিশ দেওয়া হল কুলি-ব্যারাকের ঘর ছেড়ে দেওয়ার | ননীমাধব আশা! করেছিলেন_এঁ লোকটাকে কারখানার এলাক1 থেকে একেবারে তাড়িয়ে দিতে পারলে মজছুর-মহলের ধুমায়িত অশান্তির বহিশিখ। স্তিমিত হয়ে আসবে। ভুল ভেবেছিলেন উনি । ওকে চুরির অভিযোগে বরখাস্ত করার পর উলটো প্রতিক্রিয়া দেখা দিল শ্রমিক মহলে । এত অল্প দিনের মধ্যেই লোকটাযে কুলি বস্তিতে এতটা৷ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল তা! আন্দাজ করতে পারেননি ওরা । লোকগুলো যেন খেপে গেল মুহুর্তে । রাতারাতি মীটিঙ করল ওর, তৈরী করঙ্গ একটি লম্বা ফিরিস্তি । তাদের প্রথম ও প্রধান দাবি হল বরখাত্ মজুরটিকে কাজে পুনবহ।ল করা এবং অস্তবর্তী দাবি, ইউনিয়নের ্বীকৃতি-_ আর শেষ দাবি যে কোথায় গিয়ে থামবে তা আন্ধ ওদের আন্দাজেরও ৩৪ ববাইরে। অন্নেই ঘোলাটে হয়ে উঠল ব্যাপারটা । দোষ হৃপক্ষেরই আছে। এর! ধর্মধটের আশঙ্ক। করে কয়েকজনকে সামান্ত অজুহাতে দাসপেগড করলেন -ওরাও টিনা-নোটিশে অন্ত্রপস্থিত হল কাঞজ্জে। ফলে অচিরেই ঘোলাটে হয়ে উঠল পরিস্থিত। বর্তমানে এসে ঠেকেছে এ পক্ষের ধর্মঘটে আর ও পক্ষের লক-আ উট ঘে।ষণায় ৷ পরবতা কর্মপন্থা! নির্বাণ করবার শুভ উদ্দেখ নিয়ে আজ ওর মিলিত হয়েছেন এই জরুণী মীটিডে। পরম[নন্দ কিন্তু কিছুতেই মন দ্বিতে পারছিলেন ন। আজ যেন কি হয়েছে তার। শুধু রোমন্থন করে চলেছেন অতীত ইতিহাস। গত রার্রে নীলার সঙ্গে ষে কঠিন বাক্যবিনিনর হয়েছে -বস্ত্ত বাদানুবাদ হয়েছে তার কথাই মনে পড়ছে বারবার । কোন আকাশস্পশ স্পর্ধায় সেই একফে'ট। মেয়েটা তার মুখের উপর বলে গেল--তিনি আদর্শচাত। তিনি ব্রাত্য । আদর্শ! এ ছোট্ট কথাটির জন্য নির্যাতন তো তিনি কম ভোগ করেন নি। আর শুধু ভিনিকি একা? চৌধুরী পরিবারের প্রত্যেকটি মানুব। যুগে যুগে আদর্শ ণত পার্থক্যে একই গৃহের অভ্যন্তরে রচিত হয়েছে ভিন্নমতাবলম্বী শিবির । পিতার সঙ্গে পুত্রের, পুত্রের সঙ্গে কন্।র, পুত্রকন্তার সঙ্গে ত।দের মাতামহীর নীতিগত পার্থক্যের জন্য সংঘাত বেধেছে । কিঞ্চ কই, কেউ তো কখনও এমন নির্লজ্জভাবে অপরকে আক্রমণ করেন নি। একে অপরকে শ্রদ্ধা করেছেন। আদর্শগত বিরোধের চরমতন আঘ।ত সহ্য করেছে অসীম, করেছেন তিনি_তবু অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল তাদের ছুজনেই । রাজনীতির উ্ধ্বে মানুষে মানুষে যে আত্মিক বন্ধন তা! অবিকৃতই ছিল । আজ ৷ হলে সেই পারিগারিক ইমারতের ভিত্তিমূলে এমন ফাটল আত্মপ্রকাশ করছে কেন? রাজনৈতিক মতের পার্থক্যে একজন কেন অপরজনের সাম্নিব্য অসহা বোধ করছে? বোর্ড অফ ডাইরেকটর্সদের মীটিঙে ওদিকে আলোচন। চলেছে ঘোরালে। হয়ে। একপক্ষ চাইছেন ধর্মঘটের প্রথমাবন্থাতেই ওদের ভেকে এনে ব্যাপারট। মিটিয়ে ফেলতে -অপর পক্ষ চাইছেন কঠোর হস্তে ওদের দনন করতে--যাতে কোণদিন আর মাথা তুলতে নাপারে। পরমানন্দের কিন্ত এসব কথায় কান নেই। ভিনি ডুবে আছেন অতীত, জীবনের ফেলে-আসা দিনগুলিতেই । তর মনের পর্দার উপর তখন ধারে ধীরে ফুটে উঠছে একটি শারদ প্রভাত । যে রাজনীতিকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলত চেয়েছিলেন বিদেশ থেকে ফিরে আসবার পর, দেই সবনেশে পজনীতিই চুপি চুপি এসে আশ্রর নিয়েছিল সেই শরৎরাত্রর শেষপ্রহরে । বিদেশী ডিগ্রী নিয়ে ফিরে আপনার আগেই গর বানা-মা গত হয়েছেন । বিদেশী মেয়েকে বিবাহ করায় আত্ম যখ্ষজনও সম্পর্ক রাখেন নি তার সঙ্গে । ভালোই হয়েছিল একপাক্ষে। কৈশোরের এবং প্রথম যৌবনের ইতিবৃত্ত লৌক- চক্ষুর অন্তর্।লে ঢাকা পড়েছিল । কিন্তু এত করেও শেবরক্ষা হল ন!। পরমানন্দের জীবন গতি পরিবতন করল আবার । সেদিনও উঠেছিল প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড় । বিশাল বনস্পতিকে ধরে যেমন করে ঝীকানি দেয় হঠাৎ-আসা কালবৈশাখী তেমনি করেই নাড়। দিয়েহিল তাকে কিন্তু না, সেদিন তিনি পরাজিত হন নি। সমূলে উৎপ।টিত করতে পারে নি মহীরুহকে। নিষ্ঠুর বাতাসের তাড়নে নিঃশেষিত হয়েছিল অরণ্যঅধিপিতির সবুজ পাতার সম্ভার- ছিন্ন হয়েছিল কচি কিশলয় * কিন্তু (রক্তপত্র শাখার আন্দোলনে বিদ্রোহী বনস্পাঁত পরতপাদ জানিয়েছিল তবু । ভারপর নীমল বজ। লুটিয়ে তিন পড়েন নি-কিঞ্ড দাউ দাউ করে জলে ছাই হয়ে গিয়েছিল উদ্ধতশিএ পাদপ। বিস্মৃতির কুয়াশা কেটে গিয়ে সেই ঘটনাগুলি মনে পড়ছে আজকে । অক্টোবর মাস। বেয়াজ্িশ সালের কথা । নীলাকে যেদিন খদ্দরে মণ্ডত অবস্থায় প্রাতরাশের টেবিলে প্রথম দেখা গিয়েছিল তারই মাসখানেক পরের কথা । সন্ধ্যা থেকে অকাল-বর্ষণ চলেছে। সারাটা রাত মেঘলা! করে রয়েছে--টিপটিপ করে বৃদ্ি পড়ছে মাঝে ৮০০০০ আবে । সমস্ত রাত্রি ভালে! ঘুম হয় নি। আগের দিন অসীমের আচরণে বিরক্ত বোধ করেছেন তিনি । অসীম বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। বাড়ির শাসনশৃঙ্খলাকে সে মেনে চলছে না। কাল থেকে ছেলেটা বাঢ়ি ফেরে নি। কে জানে কোথায় রাত কাটাচ্ছে হতভাগা ছেলে !. ইটালিয়ান কম্বনটার উত্তীপও সহ হচ্ছিল না) বিনিদ্র বজনীর গ্লানিতে ভারাক্রাস্ত মনে অবসন্ন দেহটা নিয়ে অতি প্রত্যুষেই তিনি শব্যাত্যাগ করেছিলেন। পুবের বারান্দায় ইজিচেয়ারটায় এসে বসেন। ধরান একট! সিগার। হঠাৎ মনে হল নিচে জবাগাছটার তলায় নীলা কার সঙ্গে যেন কথা বলছে । চমকে ওঠেন উনি । তখনও ভালো করে ফরস৷ হয় নিপুব আকাশটা । অন্ধকারের বুকের ভিতব থেকে বেরিষে আসছে নূতন দিন--তার রাঁডা লিপির আমন্ত্রণ ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে- বাতাসে । দেই রাঙা রেখার আলিম্পন আকা হয়েছে ঘেন তার কিশোরী কন্তাটির মুখেও । সামনে দাড়িয়ে আছে" একটি অপরিচিত ত্রুণ যুবক । সবাঙ্গ কালো একটা কন্বলে ঢাকা । বছর বাইশ বযুস হবে। নীল।'র হাতে একটা ফুলের সাজি । রোজই এ সময়ে সে ফুল তুলতে ওঠে । মিন গ্রেহান আর মিসেন আ্যানী চৌধুবার প্রভাবটা তার উপর কাধকরী হয় নি। স্কুলের দিদমণিদের কাছ থেকেই সে অনুপ্রেরণা পেয়েছে বেশী । ঠাকুর-দেবতা-বার-ত্রতে তার অগাধ বিশ্বাস। সাধনার পথে সে খিচুডিমাগী। তেত্রিশ কোটি দেবতাতেও তার তৃপ্তি হয় নি- দিদিমার কাছ থেকে আরও অনেকগুলি দেবদেবীর হদিস পেয়েছে সে- মেরীমাতা, যিনাস্‌, সেন্ট জন, মায় মোসেস, জ্যাকব, সলোমন পর্যন্ত ! ফলে চাল-ভোলা মঙ্গলবারে ডিনার টেবিলে তাকে ডাকলে সে মনে মনে শিউরে ওঠে-পাপ-ম্বীলনের জন্ত বুকে আকে ঝ্রুশচিহি। এসব অভ্যাস অবশ্থ তার কমে এসেছে-বড় হওয়ার পৰ ! এই অক্টোবরের ভোরবেলা তেই তার লান সার হয়েছে, পিঠের উপর ছড়িয়ে দিয়েছে ভিজে চুল। পুজার ফুল তুলছে ্যারিআ্যাডনি-তনয়। নীলা । হা'সি আসে চৌধুরীর । শুধু সন্তান নয়__কারও ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা পরমানন্দের ৩৭ প্রকৃতিবিরুদ্ধ। অপরের আচরণ সম্বন্ধে অহেতুক কৌতূহল ছিল না তভার। সেদিন কিন্ত তিনি আত্মসংবরণ করতে পান্ছেন নি। নীলা কি বিপ্লবী দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ফোগাযোগ রাখছে ? না হলে এই বাঘের বিবরে কোন সাহসে মাথ। গলায় এ ছোকরা অকুতোভয়ে ? এ দুর্জয় সাহস কি করে সংগ্রহ করল লোকট]1 ? চকিতে মনে হয় পরমানন্দের _ রী লোকটার আগমনের ছুটি কারণ থাকতে পারে । হুয় এ ছেলেটি বিপ্লবী দলভুক্ত--এসেছে নীলার কাছে তার প্রশ্রয় পেয়েই । অথবা ওদের সাক্ষাৎকারের পিছনে আছে কোনও বিদেহী দেবতার ইঙ্গিত । যৌবনের অন্য এক আকর্ষণের উন্মাদনায় ও এসে দাড়িয়েছে নীলার অত কাছে । এ ছাড়! তার এ গোপন আবির্ভাবের আর কোনও কারণ থাকতে পারে না৷ উৎকর্ণ হয়ে তিনি ওদের কথোপকথনে মনোনিবেশ করেন। নীল! বলছিল. এ সময়ে বাবা রুগী দেখেন নাঁ। আপনি এভাবে এসেছেন কেন ? * না ! ছেলেটিকে নীলা তাহলে চেনে না । কোনও অতনু দেবতার অনুপ্রেরণায় ওর। এখানে মিলিত হয় নি। তবে কেন এসেছে ও? নীলা গখন বলছিল; আটটার পব তার চেম্বারে আসবেন । এ ঘরটায়।-_হাত বাড়িয়ে সে বাইরের দিকের নাসিং হোমট! দেখিয়ে দেয়। _ অআটট1? আটটা পর্ষস্ত বাঁচব ভ11 দেখুন, আপনি একবার দয়। করে ওকে গিয়ে বলুন ঘে, বিশেষ কারণে তার চেম্বারে আসা সম্ভৰ হবে না আমার পক্ষে । উপায় থাকলে আটটা পর্যস্ত আমি অপেক্ষা করতাম, কিন্ত-_ | বাধ! দিয়ে নীলা বলেছিল-_সারারাত বাবার দুম হয় নি। তাকে এ সময়ে আমি জ্বাল'তন করতে পারব না। _-হ্হালাতন ! না বিরক্ত তিনি কখনও হবেন না । আপনি বিশ্বাল করুন। বছদুর থেকে অ।সছি আমি তাঁর সন্ধানে । আপনি আপনার বাবাকে যতটা চেনেন তার চেয়ে অনেক বেশী আমি চিনি তাকে । পনি একবার দয়া করে জ্ঠাকে খবর দিন । ৬৮ কে ঞঁ ছেলেটা? পরমানন্দ পিছনের স্পাইরাল সিঁড়ি বেয়ে নিঃশব্দে বাগানে নেমে আসেন। নীল] বিরক্ত হয়ে বলে, আপনার সঙ্গে তর্ক করার আমার সময় নেই। ছেলেটি হেসেছিল ! নাঃ অস্ফুট আলোয় হাসিটা তিনি স্পষ্ট দেখতে পাঁন নি। তবু অনুমান করতে পারেন, বিচিত্র একটা হাদি হেসে ও বলেছিল, আশ্চর্য ! পুণ্যের লোভে এই ছুরস্ত শীতে স্নান সেরে পূজার ফুল তুলতে এ.সছেন-_ডাক্তার পরমানন্দের কন্যা আপনি- অথচ অনৃষ্টের কী বিড়ম্বনা, একটা হতভাগ্য মুমূর্য মানুষের প্রাণদানের পুণ্টাও আপনি অনায়াসে প্রত্যাখান করছেন - এর পর আর তিনি স্থির থাকতে পারেন নি । ছেলেটার সামনে এসে বলেছিলেন-কি চাও? চমকে উঠেছিল নীলা । ছেলেটি আপাদমস্তক গাকে দেখভে থাকে । বলে আপনিই ? _ হ্যা, ভাক্তার পরমানন্দ চৌধুরী, যাকে তুমি আমার মেয়ের চেয়েও ভালো করে চেন । বলো কি চাও তুমি । চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ছেলেটি বলে-_ভিতরে চলুন, কলছি। ওর পতনোন্মুখ দেহটা বাপে আর মেয়েতে ধরাধরি করে নিয়ে আসে ড্ইংরূমে । বসিয়ে দেয় একটা গদিআটা সোফায় ।, চৌধুরী বলেন, এবার বলো, কেন এসেছে তুমি মামার কাছে ।. ছেলেটি ইতস্তত করে বলে, আপনাকে নিভূতে বলতে চাই। --এখানে নিভৃতই আছ তুমি-_বলো | ওচুপ করে থাকে৷ হঠাৎ উঠে পড়ে নীলা । ত্বরিতবেগে চলে যায় ঘর ছেড়ে । ছেলেটি ওর গমনপথের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে কয়েকটা মুহুর্ত । একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে তার। তারপর হঠাৎ আত্ম- সচেতন হয়ে ফিরে তাকায় ভাক্তার চৌধুরীর দিকে। আস্তে আস্তে কম্বলট। উচু করে বাঁধন খুলে দেখায় দক্ষিণ জানুর ক্ষতচিহাটা। ভ্রকুষ্ষিত ৩৯ হয় চৌধুরী ডাক্তারের । ক্ষতচিহ্টার জাত আন্দাজ করেন-মুহূতমধ্যে । ছেলেটি কিন্ত কোনও ইতস্তত করে না আর। স্পষ্টই স্বীকার করে অকুতোভয়ে, গুলিটা আপনি বার করে দিন ভাক্তীরবাবু। পালাতে হয়ছে? পারব না, তবু আত্মরক্ষার শেষ অন্ত্রটাও যখন হাতছাড়া হয়ে গেল তখন একজোড়া সুস্থ সবল পাও কি পাব না আমি? আপনার মতো সার্জেন দেশে থাকতে ? ওর দুর্জয় সাহদ দেখে স্তম্তিত হয়ে গিয়েছিলেন পরমানন্দ । বলেন, কি করে এমন হল ? এত যন্ত্রণার মধ্যেও ছেলেটি হাসল। বললে আপনাকে বলব না! যে গেম বার্ডস শিকার করতে গিয়ে ভূল করে লেগেছে অথব। ডাকাত ধরতে গিয়ে । _তোমার নাম কিণ অ'স্ছ কোথা থেকে? একটু চুপ করে থাকে । তারপর বলে--এ প্রশ্নটা করা কি উচিত্ত হচ্ছে আপনার ? _নিশ্চয় ! রুগীর নাম ধাম না জেনে? কেস-হিসন্্রি না জেনে তে! রুগীর দায়িত্ব নিতে পারি না আমি । এক নিনিট ছুজনেই নীরব। তারপর ছেলেটি আবার বলে- আমি জানি আপনার বিপদের কথা | আপনার দায়িত্বের কথা । অপারেশন হয়ে গেলে একটা রাঁতও থাকব নদ আমি এখানে । আমার বন্ধুর! অপেক্ষা করছে শহরের প্রান্তে । সেখান থেকে আমি একা এসেছি। ওরা] আমার জন্ত ছু দিন অপেক্ষা করবে- তার ভিতর ফিরে না গেলে গুরা ধরে নেবে যে আমি হয় ধরা পড়োছ নয় মারা গেছি। আপনি একটা দিন শুধু আমাকে আশ্রয় দিন। গুলিট! বার করে দিলেই আমি ফিরে যাব ওদের কাছে- এ জন্মে কেউ কোনদিন জানতেও পারবে না, কে বার করে দিল বুলেটটা। ডইংরূমে বড় ওয়ালরুকের পেওুলামটার একাধিপত্য পরব নীরব কয়েকটি মুহুর্তের নৈঃশব্যের উপর | পরমানন্দ তারপর বলেছিলেন-- তা আমি পারি না। আমি তোমার মতে! দায়িত্জ্ঞানহীন যুবক নই। আমার সম্তান আছে, সংসার আছে । তোমাকে ধরিয়ে আমি দেব ন1। কিন্তু আশ্রয়ও দিতে পারব না। এই মুহুর্তে তুমি চলে যাও আমার বাড়ি থেকে। ছেলেটি স্তস্তিত হয়ে যায়। ওর মুখভঙ্গি থেকে বোঝা। ধায়, এটা সে একেবারেই আশঙ্কা করে নি। বলেও সে কথা__এটা যে হতে পারে ত1 তো! ভাবি নি। ভেবেছিলাম কোনক্রমে আপনার এখানে এসে পৌছতে পারলেই আমার মুক্তি । _কিস্তু এটাই তো আশঙ্কা করা উচিত ছিল তোমার । আমার পরিচয় তো শহরসুদ্ধ লোকের অজান! নেই । আমি বিলাত-ফেরত, বিলাতী কেতার মানুষ । মেম বিয়ে করেছি-_আগামী বারে রায়বাহাছ্র হব আনি শোন নি? তোমার ব'ং ভাবা উচিত ছিল, মামি তোমাকে ধরিয়ে দেব! মাস কয়েক আগে এঁ বয়সেরই আর একটি উদ্ধত যুবকের একট একট! বাঁক ইঙ্রিতের জবাব দিলেন নাকি ডাক্তার চৌধুরা ? ছেলেটি শাস্তম্বরে শুধু বলে-শহ্রন্ুক্ধ লোক আপনার ষে পরিচয় জানে-_-আমি তার কিছু বেশী জানি । না হলে (সই মহিষাদল থেকে এতদূর আসতাম না! আপনার খোজে । _--কোন মহিষাদল ? মেদ্রিনীপুর মহিষা্ল 1-তারপরই হঠাৎ ধমক দিয়ে ওঠেন না না, আর কোনও কথা নয় । তোমার পরিচয় দিয়ে আমার কি প্রয়োজন ? তুমি চলে যাও! যাব তো বটেই - তাড়িয়ে দিলে যেতে তো হবেই $ কিন্তু একট? কৌতুহল চাঁরতার্থ না করে তো নেতে পারছি না ভাক্তারবাবু। আমি ভুল ঠিকানাহ আসি নি তো? যেখান থেকে আজ আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেটাই কি ডাক্তার পরশুরাম চৌধুরীর বাড়ি? পরমানন্দ স্তম্তিত হয়ে গেলেন। এ নাম কী করে জানল ও ছোকরা? ছুরস্ত কৌতৃহল হয় জানতে-_কোন সুত্রে এ নামটা সংগ্রহ করেছে ছেলেটা । পরশুরাম যে তারই একটা নাম-_এট। ভুলেই [গিয়েছিলেন তিনি। শতাব্দীর একপাদকাল কেউ ও নামে ডাকে নি ৪6১ তীকে । যে-সব খাতাপত্র, চিঠি অথবা ডায়রিতে এ নান্সের উল্লেখ ছিল ভা পুড়ে নিঃশেয় হয়ে গেছে বিশ পঁচিশ বছর আগে। সে যুগে তার এ নামটা জানত সুগ্রিমেয় কয়েকজন লোক । আর তাদের অধিকাংশই আবার জানত না তার আসল নাম। কিন্ত না, এ কৌতৃহল চরিতার্থ করতে গেলেই ঘনিষ্ঠ হতে হবে ছেলেটির সঙ্গে, হয়তো জড়িয়ে পড়বেন আবার । আর বাড়তে দেওয়া উচিত নয় ১ আত্মসংবরণ করেন তিনি, নিলিপ্ত কণ্ঠে বলেন, দ্বিতীয় আর একটি কথ! উচ্চারণ করলে আনি.থানায় খবর দিতে বাধ্য হব। ওকে যেন সগ্ক করতে পারছেন না আর । হয়তো সংযম ভেঙে পড়বে_-হয়তে! জড়িয়ে পড়বেন আবার । রিসিভার থেকে টেলিফোনটা তুলে নেন হাতে। ফোন করবার উদ্দেস্টে নয়-_এও একটা হুমকি । পরমীনন্দ কি ভয় পেয়েছেন ? না কি শুধু উত্তেজিত হয়েছেন ? হাতটা কাপছে কেন তার ? ছেলেটি উঠে দীড়িয়েছিল। বসে পড়ে আবার সোফায় ॥ বলে, করুন টেলিফোন ! সত্যিই আর বাঁচবার ইচ্ছে নেই ডাক্তারবাবু। কী হবে এই পোডা দেশের জন্ত বেঁচে? এ দেশ আর পরশুরামের দেশ নয়। এ এখন রামরাজ্য- দেশজননী সীতাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে রামচন্দ্র অযোধ্যায় পরমানন্দে বাজৈশ্বর্য ভোগ করছেন - পরশুরামের কুঠারটাযর ধরছে মরূচে। তুমি বাবে কি না? _না। যন্ত্রণায় কাতরোক্তি করে সোফায় এলিয়ে দেয় ক্লাম্ত দেহটা । কম্বলট। জড়িয়ে নিয়ে গুটি মেরে শুয়েই পড়ে একেবারে । ও কি অনুমান করেছে পরশুরামের অন্তরের ছরবলতা ? ভুমি বিশ্বাস করতে পারছ না যে, ভোমাকে ধরিয়ে দিতে পারি আমি ? চোখ বুজেই €ও জবাব দেয় কেন পারব না? এমন কি স্বঃসাহসিক কাজ সেটা আপনা পক্ষে? শু ৭ -- তবে চলে যাচ্ছ না কেন? _চলে যাবার ক্ষমতা নেই বলে-_ বিচিত্র হাসি হাসে ছেলেটা । এবার সে হাসিটা স্পষ্ট দেখতে পান উনি। বলে, বাঁচতে তে! এমনিতেই পারব নাঁ। এই হতভাগা ঠ্যাউখ।নাকে কবে করে এতটা পথ এসেছি-_আবার সে পথে কিরে যাবার আর ক্ষমতা নেই। তার চেয়ে আপনি টেলিফোন করুন ভাক্তারবাবু। তবু আপনার দেশসেবার একটা পুরস্কার দিয়ে যেতে পারব, ধরা পড়ার আগে । হাজার হোক, আপনিও তো এ হতভাগ। দেশের জন্যে কম করেন নি,একদিন। তবু বুঝব আমার ধরা পড়ায় পরশুরাম চৌধুরী একট! খেতাব পেলেন। _কে পরশুরাম চৌধুরী 1 আমি চিনি না তাকে__ --একশবার ! আপনি কি করে চিনবেন তাকে ! আপনি বিলাত- ফেরত বিলাতী কেতার মানুষ আপনি তো তাকে চিনবেন না! অথচ এ পরশুরামই একদিন বলেছিলেন, শচীশ নন্দীকে-_ পাঠকদার স্বপ্ন আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। বলেছিলেন, তিনি আমেরিকা থেকে জার্মীনিতে যাবেন পাঙ্গিয়ে । সেখনে থেকে সংগ্রহ করবেন বিপ্লবের সরঞ্জাম । পরশুরাম অবশ্য জার্মানি যান নি। তার আগেই চট্টলার পাহাড়ে সে প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল । এতদিন জানতাম জ্যোতির্ময় পাঠক আর শচীশ নন্দীই বুঝি আস্মান্তি দিয়েছেন সে ব্যর্থ প্রচেষ্টায় কিন্ত না । আজ দেখছি পরশুরাম চৌধুরীও এ সঙ্গে ন্ব্গগত হয়েছেন । পরমানন্দ ওর কীধ ছুটি ধরে প্রচণ্ড ঝাকানি দিয়ে বলেন_ কে"? কে তুমি? কি করে জনেলে এসব কথা? বাবার ডায়েরিটা পুলিশের হাতে পড়ে নি। মায়ের কাছ থেকে সেটা আমি পেয়েছিলাম । তাই আমার বড় ভরস! ছিল ডাক্ত!রবাবু -_এ শুধু আপনিই পাঁরসেন। সেজন্যেই সেই মেদিনীপুর থেকে এত দূর ছুটে এসেছি । _ তুমি--তুমি জ্যোতির্ময়দার ছেলে ? না? আমার বাবার নাম *শচীশ নন্দী । উনিশ শে ভ্রিশে ৪ £ চট্টগ্রামে মারা যান তিনি-.' ডাক্তার চৌধুরী এ বিষয়ে কি বলেন? নিজের নামটা কানে যাওয়ায় যেন ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে [ওঠেন পরমানন্দ । হ্যা, ডিরেকটর বোর্ডেনু এ উপস্থিত আছেন তিনি । অত্যান্ত অপ্রস্তুত বোধ করেন। 'আলোচনাট! কিসের তা তিনি বিন্দুমাত্র জানেন না। একবর্ণও শোনেন নি। হঠাৎ লক্ষ্য হয় ঘর সুদ্ধ সকলেই তাপ মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পরমানন্দ গম্ভীরভাবে বলেন, আপনারা পাচজনে যা স্থির করবেন তাই মেনে নেব আমি। --আমরা তো 'একমত হয়েছি_-ভয় ্সীপনাকেই, আপনার তো! আবার নানান আদর্শের বাতিক আছে। যান হাসেন চৌধুরী সাহেব। _দ্যাট্স্‌ সেট্ল্ড দেন। কাম টু দি নেক্সট আাইটেম অব দি আজেওগ্া প্রাজ। আবার শুরু হয়ে গেল আলোচনা । ধর্মঘটী মজুরের নিরুদ্ধে। বাবস্থা অবলম্বনের উপায় নির্ধারণ করতে থাকেন ওরা । পরমানন্দ যথাবীতি ডুবে যান অতীত রোমন্থনে । নিপুণ হস্তে অস্ত্রোপচার করেছিলেন সেদিন ডাক্তার চৌধুরী । সে কথ! দামতে পেরেছিল বাড়ির তিনটি 'প্রাণী। পরমানন্দ গোপন করতে চেয়েছিলেন সকলেব কাছ থেকেই। চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু কিশোরী আনাড়ি নীলার সহায়তায় অপারেশন কর সম্ভব হয় নি। বৈশাখীকে ডাকতে হয়েছিল ফলে । আর মিস গ্রেহামকে লুকিয়ে এ বাড়িতে কোনও কিছু করা সম্ভব ছিল না। ভালো করে সকাল হবার আগেই নিয়ে এসেছিলেন হত্চেতন ছেলেটিকে ভিতর বাড়িতে । নাঙগিং হোমে ওকে রাখা নিরাপদ নয়। বাড়ির ভিতরেও ওকে লুকিয়ে রাখা কঠিন । পরমানন্দ ওকে আশ্রয় দিলেন বৈশাধীর ঘরে! পশ্চিম দিকের ঘরখান' 5৪ ছেড়ে বৈশাখী এসে সাময়িক ভাবে আশ্রয় নিল নীলার শয়নকক্ষে । নীলা অবাক হয়েছিল সবচেয়ে বেশী। ছেলেটি যে টেররিস্ট, আগস্ট আন্দোলনের বিপ্রবী, এটুকু দে আন্দাজ করেছিল অনায়াসে । তাঁছাড়। পরমানন্দ মে কথ। তাকে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন- সাবধান করে দিয়েছিলেন এ সংবাদটা৷ গোপন রাখতে । মিস গ্রেহাম সমস্ত বুঝেও নীরব রইলেন । বৈশাথীকে ডেকে পরমানন্দ বুঝিয়ে দিলেন বাপারটার গুরুত্ব ও গোপনীয়তা । কদিন ছিল ছেলেটি ? দিন তিন-চার হবে বোধ হয় । ঠিক মনে নেই আাজ। শুধু এইটুকু মনে আছে-- অপারেশনের পরে সে অত্যন্ত ছুর্বল হয়ে পড়ে । সমজ্ত জীবনীশক্তিটুকু সে নিঃশেষ করে এসেছিল আহত অঙ্জটাকে নিয়ে এ বাঁডিতে এসে পৌছনোর পথে । পর'দনই প্রতিশ্রুতি- মতে! সে চলে যেতে চেয়েছিল: অনুমতি দিতে পারেন নি চৌধুরী ছাক্তার । কিন্তু কথা ছিল আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে না৷ ফিরলে ওরা ধরে নেবে আমি মারা গেছি অথবা ধর। পড়েছি। _তুমি ঠিকান। বলো- আমি খবর দিয়ে আসছি । -আপনি নিজে যাবেন সেখানে ? ৃ _-কেন, বিশ্বাস করতে পারছ না আমায়? ছেলেটি হেঁট হয়ে গুর পায়ের ধুলো নিয়ে বলেছিল--আমার কটু কথাগুলে! আপনি ভুলতে পারেন নি দেখছি। ওর সেবার ভার পড়েছিল নীলার উপর | বৈশাখীকে নাসিং হোষে তার দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে নীলাকেই নিতে হল দায়িত্ব। ঘড়ির কাটার হিসাবে সে পথ্য আর ওষুধ পরিবেশন করে। টেম্পারেচ।র রাখে । নিরলদ অতন্দ্র সেবায় সে পরিচর্যা করে চলে আগন্তকের। ওদের অন্তরালের জীবনে কী কী ঘটনা ঘটেছিল জান! সম্ভব নয় পরমানন্দের পক্ষে । তবে একটা জিনিস তার তীক্ষ দৃষ্টি এড়াতে পারে নি। নির্জন কক্ষের গোপনীয়তায় এ কিশোরী নার্স আঁর ভার রুগী পরস্পরের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছিল । পরমানন্দ একটু ৫ অন্বস্তি বোধ করেছিলেন । এত অল্প সময়ে, এত সামান্য পরিচয়ে কা | করে এত আকৃষ্ট হল নীল! এ ছেলেটির দ্িকে? হয়তে। বীরপৃজার একটা সেন্টিমেণ্টই ওর মনে অনুরাগ সঞ্চারিত হবার মতো! একট। ক্ষেত্র পূর্বেই তেরি করে রেখেছিল । বিপ্লবাত্মক মতবাদের প্রতি নীলার যে একট! অন্ধ আকর্ষণ জন্মেছিল তা ঠিকমতো বিকশিত হবার ম্থযোগ পায়নি চৌধুরীবাড়ির শৃঙ্খলাঠ্তি বাতাবরণে। ওর দাদা, ওর বাবা, ওর দিদিমা! ওকে বেঁধে রেখেছিল এতদিন । হঠাৎ ওর মনের সেই নিরুদ্ধ আবেগ মুক্তি পেল এবার । এ বাইশ বছরের তারুণ্যের মধ্যেই সে দেখতে পেল 'বপ্লবের একট মৃত প্রতীক । এত কথা হয়তো তার খেয়াল হত না- হল বৈশাখার কথায়। অপারেশনের পর তৃতীয় দিনে বৈশ।খী এসে বললে কাকাবাবু, এবার ওকে পাঠিয়ে দিন। : কথাটার মর্ম প্রথমটা অনুধাবন কর.ত পারেন নি। তাই জিজ্ঞাসা করেছিলেন_কার কথা বলছ তুমি? --অরুণাভবাবুর কথ! । _অরুণাভ? কেসে? --এ যে ছেলেটি আমার ঘরে আছেন আজ কদিন। --ও ! ওর নাম বুঝি অরুনাভ? তা কেন, হঠাৎ ওকে সরিয়ে দিতে বলছ কেন? অসীম কি ফিরে এসেছে বাড়িতে? লা, তিনি ফেরেন নি। «১ -অসীম কোথায় গেছে জান? হপ্ত।খানেক হয়ে গেন আজ নিয়ে। _নাঃ এক সপ্তাহ নয়, পাচ দিন, ছএরাত্র-কোথ।য় গিয়েছেন জানি না। পরমানন্দ একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন। পুত্রের অন্ুপস্থিতি সম্বন্ধে তিনি অত্যন্ত উৎকন্ঠিত। এতাঁদন ধারণা ছিল, সেজন্য তার উদ্বেগেই এ বাড়িতে সবচেয়ে বেশী-তিনি বাপ। হঠাৎ অনুভব করলেন-_না, তার চেয়েও অধীরতর উৎকগায় আর একজন অপেক্ষা করছে 'সীমের প্রত্যাবতন। তিনি দ্দিন-স(তেক পুত্রকে না দেখে ৪ বিচলিত হয়েছেন- কিন্তু বৈশাঞ্চ প্রতীক্ষা করছে পাঁচ দ্রিন ও ছয় রাত্রি। ্‌ _-তঁর হাবভাব আমার ভালে! ঠেকছে না- শেষকাঁলে নীলার ন। সবনাশ করে যান। জ্বকুঞ্ধিত হয়েছিল পরমানন্দের । কথাটা তিনি বিশ্বাস করতে পারেন নি। বিপ্লবপন্থীদের মর্মকথা তার অজানা নয়। ও পথের অভিজ্দ্রতা তারও আছে । এই পথে যারা পা! বাড়ায় তারা কখনও কোনও ছোট কাজ করে না। শচীশ নন্দীর ছেলে আর যাই করুক এত বড় উপকারের প্রতিদানে সে নীলার কোনও ক্ষতি করে যেতে পারে ন!। ইন্ড্রিয়ের উপর এটুকু সংযম যার নেই সে কখনও এভাবে দেশের জন্যে জীবন উৎসর্গ করত পারে ? কিন্তু নীল! যে দ্বিবারাত্রির সমস্তুটা সময় ওর শব্যাপার্্বে লীন হয়ে আছে এটাও লক্গয করেছেন তিনি । তা ছাড় তিনি প্রতিদিন লক্ষ্য করেছেন_ যখন রোগীকে পরীক্ষা করতে ঘান, ড্রেসিং করে দেন ক্ষতস্থানটা, তখন কি অনীম আগ্রহে নীলা জানতে চ!য় রোগীর উন্নতির কথা। সেটাকে নারীর কোমল স্বাভাবিক হদত্বৃত্তি ব₹ ই মনে করেছিলেন এতদিন_-তাঁর বেশী কিছু নয়। পরমান্ন্দ জবাবে বলেছিলেন, কিন্তু ওকে তো! এখন পাঠানত পারি না আমি । আর কিছুদিন না গেলে ও উঠে দাড়াতে পারবে না। -তাহলে নীলাকে সরিয়ে গুর সেবার ভার আমার উপরে দিন। ন]সিং হোম থেকে কদিন ছুটি দিন আমাকে! আর একটা সম্ভাবনার কথ। মনে হল পরমানন্দের | বাড়িতে ছুটি, রমণী, একটি বহিরাগত তরুণ যুবক | বিদেহী দেবতা কি এই সুযোগে শি একটা ত্রিভুজ রচনা করে বসলেন চৌধুরীবাড়ির অস্তঃপুরে ? তখনও পরমানন্দ জানছেন না, বৈশাধীর সঙ্গে অসীমের সম্পর্কটা । সেট জেনেছিলেন অনেক পরে। সেট! প্রথম নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেন যেদন ঝড়ের পরে বর্ষণব্রীস্ত ছূর্যোগরজনীতে নেমে এসেছিল প্রচণ্ড বজ্র তার উদ্ধত শিরে। উনি ব্যবস্থাটা অগ্রত্য। পালটে দিলেন। নীলাকে বোঝানো হল ৪৭ পা রোগীকে অভিজ্ঞ নার্সের হাতে রাখাই বাঞ্চনীয় । নাস্ং হোম থেকে দিন তিনেকের ছুটি মঞ্জুর হল বৈশ।খীর। সে আশ্রয় নিল তার নিজের শয়নকক্ষে রোগীর পাশে: পরের দিন শারও বোরালো হযে উঠল পরিস্থিতিটা । অসীম ফিরে এল পরের দিন। দিন মাতেক পরে বাড়ি ফিরেছে সে। জলে কাদায় মলিন দেহ, অন্সত রুক্ষ চুলগুলে। পিছনে সরিয়ে দিতে দিতে ল্ুপায়ে সে এসে হ।জির হল বৈশাখীর ঘরে। রক্ষাবাহিনীর কাজেই ভাকে বাইরে যেতে হয়েছিল হঠাৎ। যাবার সময় বাড়িতে কোনও খবর দিয়ে যেতে পারে নি ভাডাতাডিতে । বাবা নিশ্চয়ই অসন্তষ্ট হয়ে আছেন -_নীল। ঈদ্ধিগ্ন হয়ে আছে সেজন্য উৎকণ্ঠা নেই অসীমের । তার ভয় ছিল নৈশাখীকে | বিনা সংবাদে এ কয়দিন তার অজ্ঞ/তবাসের জন্য নিশ্চয়ই মর্মান্তিক অভিমান করে আছে বৈশাখী । প্রথমেই ভার কাছে ক্ষম। চেয়ে নিতে হবে । দুটো মিষ্টি কথায় তাঁর অভিমঃনকে করতে হবে দ্রব। বৈশাখীর ঘরটা বাড়ির একান্তে, পশ্চিম কোণার পিছন দিকে । পা টিপে টিপে সকলের অলক্ষিতে অসীম এসে দাড়ায় ওর ছারের পাশে । দ্বার খোলাই ছিল। ভেজানো । টোকা না দিয়েই বৈশাখীর ঘরে টুকবার অধিকার ছিল অসীমের--ওদের সম্পর্কের জোরে । ওকে চমকে দেবে বলে হঠাৎ দ্বার খুলে ঘরে ঢোকে। চি দাড়িয়ে পড়তে হয় চৌকাঁঠের উপরেই? বৈশাখীর খাটে শুয়ে আছে "একটি অপরিচিত যুবক । খাটের পাশেই বিছানায় বলে আছে বৈশাখী -যুবকটির মাথা দক্ষিণ বাহুতে আলিঙ্গন করে ধরে বাঁ হাতে ওর মুখের কাছে ধরে রেখেছে কি একট পানীয়। আধশোওয়া লোকটা বৈশখীর নরম বুকে মাথা হেলান দিয়ে তার হাতের গ্লাস থেকে পান করছে - পানীয়টা কি তা বোঝা গেল ন1। মুহুর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে দীড়িয়ে পড়ে অসীম। ওরা ছজনেই সুখ ভুলে তাকায় । বৈশাধীর মুখট! ফ্যাকাশে হয়ে যায়। ধরা পড়ার ছাপ সে মুখে স্পষ্ট । যেটুকু সন্দেহ ছিল.অসীমের-- সভা নিরসন হুল ভয়ে-পাদা-হয়ে-যাওয়া' বৈশীখীর চোখের দৃর্টিটায়! হা ছেলেটিও উৎকষ্টিত হয়ে ওঠে ওর আকম্মিক আবির্ভাবে । -আয়াম সরি 1 দ্বার ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসে অসীম । পরমুহ্র্তেই বের হয়ে আসে বৈশাখী : কখন এলে ? অসীম প্রতিপ্রশ্ন করে- _ভাগ্যবানটি কে? বৈশাধী কৌতুক বোধ করে ওর প্রশ্সের ধরনে । অসীমের ঈর্বাবহিতে নৃতন সমিধ সরবরাহ করে : আমার একজন ফ্রেণ্ড ! _ফ্রেণ্ড! তোমার ফ্রেণ্ড! মানে? _-ফ্রেণ্ড শব্দের অর্থ জান না? তাই তো-_মানে, তোমাদের অভিধান অনুযায়ী ষাকে বলে কমরেড ! অপীম জ্বলে উঠেছিল এ কথায়। বলে- রসিকতা রাখো । কিন্তু এ-সব বৃন্দাবনলীলা বাড়ির বাইরে হওয়াই ভালো নয় কি? এ বাড়ির একটা স্তাংটিটি আছে । নিজের বিছানায় বয়ক্রেগুকে ডেকে আনার অধিকার তোমার নিশ্চয়ই আছে ; কিন্তু এজন্যে হোটেলে তো! সস্তায় ঘর ভাঁড়! পাওয়া ঘায়। নীলার চোখের সামনে এ বাড়তি রোজগারটুকু না করলেই নয়। __বাড়ভি রোজগার !-_বৈশাখীর অক্ফুট কণ্ঠে ফুটে ওঠে ওর অবমানিত আত্মমর আতি। _-না তে! কি! নার্সদের সম্বন্ধে অনেক কথা শুনেছিলাম-_কিস্ক তুমিও যে কোনও অনাত্মীয় যুবকের মাথী অমনভাবে বুকের উপর টেনে, নিয়ে ঢলামি করতে পার--ত! আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। রা বৈশাখী ভূলে বায়--মুহূর্তপূর্বে সে নিজেই অনীমের ঈর্যাবহিনতে 'স্বৃতাহুতি দিয়েছিল মজা! করার জন্য | কঠিন স্বরে সে বলে--ও, তাই বুঝি। এ বাড়িতে অনাত্বীয় কুমারী মেয়ের মাথা বুকে টেনে নিযে বৃন্দাবনলীলা করার অধিকার ষে একমাত্র অসীমবাবুরই আছে তা! জান! ছিল ন। আমার । অসীম এক লহ্মা স্থির থেকে ধীর কণ্ঠে বলে : আমার ধারণা! ছিল দে অধিকার তুমি আমাকে দিয়েছিলে__ভালোবেসেই-_তখক $৯ হা আ--"৪ তোমার বয়ফ্রেগুদের কথা জানতাম না আমি । ভুলটা ভেঙে গেছে আমার-_ আমার পূর্ব আচরণের জন্য তাই মাপ চাইছি! অসীম যাবার জন্য পা! বাড়ায় । হাতটা চেপে ধরে তার বৈশাখী । --_ক। পাগল।ণি করছ ! দেখছ না ও পেশেন্ট-উঠে বসতে পারে না, তাই ওইভাবে খ।ইয়ে দিচ্ছিল।ম ওকে । _-পেশেন্ট ! কেন, কি হয়েছে ওর ? _-ওর পারে একটা অপারেশন করা হয়েছে। _-তা এ ঘরে কেন? নাগিং হোমে কি বেড নেই ? €কে এ ঘরে এনে রেখেছেন কাকাবাবু । -- কেন? _-তা কফি করে জানব তাকে জিজ্ঞাসা করো । অসাম একমুহ্র্ত কি ভাবে । তারপর বলে: কি হযেছিল ওর পাষে ? _-ডাকাতের গুলি লেগেছিল ! সত্যি বলছ ? আমি কিন্ত বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করব। গওব হাত ধরে হি২হিড কবে টেনে এনেছিল বৈশাশী জানালার ধারে, ৭.ন-_এ দেখো পায়ের ব্যাণ্ডেজ। লোকটা চোখ বুজে শুয়েছিল । অসীম চমকে ওঠে ওকে দেখে এতক্ষণে ভালো করে লক্ষ্য করে সে বৈশাখীর পেশেন্টকে ৷ এ তার চেনা মুখ । ঝোথায় দেখেছে, কোথায় দেখেছে? তাবসবের মুহুর্তেই মনে পদে গিয়েছিল--এই সুখের ফটো দেখেছে সে। চিনতে পারে লোকটাকে । বেশাখীর হাত ছাড়িয়ে জে ছুটে এসে হাজির হয় পরম।নন্দের সামনে । পিত।পুত্রের সে সাক্ষাৎটাও নাটকীয় । _বৈশীখীব ঘরে যে ছেলেটি আছে ও কে? চশম[ট1 চোখ “থকে নাসিয়ে রেখে পরমানন্দ প্রতিপ্রশ্ব করেন-এ কদিন কোথায় ছিলে ? রক্ষীবাহিনীর কাজে বাইরে গিয়েছিলাম । কতকগুলো হুলিগান খু এসেছে এই এলাকায়। রেল-লাইনের ফিশ-প্লেট তুলে ফেলছে, টেলিগ্রাফের তার উপড়ে ফেলছে--তাই আমাদের ডিউটি পড়েছিল পাহারা দেওয়া ₹-.কিন্তু আমার কথাটা আপনি শুনতে পান নি। শুনেছি, ও ঘরে আছে একটি পেশেট--ওয় পায়ে একটা অপারেশন করেছি আমি । :- কিন্তু ও তোনাকে মিথ্যা কথা বলেছে। ভাকাতের গুলি নয়__ মহিষাদণ থানা লুট কেসে এ ছেলেটির নানে গ্রেন্তারা পরোয়ান! আছে। - ডাকাতের গুলি লেগেছে -এ কথ! কে বলেছে তোমাকে ? বৈশাখী । পরমানন্দ একবার ইতস্তত করেন। অদূরে বসে নীল! একটা! ভলের সোয়েটার বুনছিল ৷ ঘর পড়ে যায় তার কয়েকটা? কাটা থেকে। মিস গ্রেহাম উপের গুলি পাকিয়ে দিচ্ছিলেন ফেটি খুলে । জড়িয়ে জট পাকিয়ে যায় বাণ্ডিলটা । পরমানন্দ ছিধাসংকোচ ঝেড়ে ফেলে শেষ পর্যন্ত বলেন_ বৈশাখী ভুল বলেছে। ডাকাতের গুলি লাগে নি ওর । তুমি তাহলে সব জান? জনি! --জান ? তবু আশ্রয় দিয়েছ ওকে? ধীরকে পরমানন্দ বলেন_ তোমার রাজনীতিতে আমি কোনদিন হস্তক্ষেপ করি নি। আমার ট্কিৎস! ব্যাপারেও আমি আশা করব তুমি হস্তক্ষেপ করতে আসবে না । অলীম বলে : এটা আমার আগেই অনুমান করা! উচিত ছিল। সেদিন বুঝতে পারি নি, কিন্তু আজ নিঃসংশয়ে বুঝতে পারছি কেন তুনি নীলাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে কাগজগুলো । তোমাকে উপদেশ দিতে যাবার ধৃষ্টতা আমার নেই, কিন্ত তুমি কি জান যে ছেলেটিকে তুমি আশ্রর দিয়েছ সে একজন কর্তব্যরত সরক।রী কর্মচারীকে খুন করে এসেছে? নে খুনী আসামী ? ১ _খোকা !--থামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি পুত্রকে, । বলেছিলেন” আমার বিচার তুমি করতে বোসো না, আমার রাজনীতি তুমি বুঝবে না। পু অসীম উত্তেজিত হয়ে বলেছিল : আজ তোমাদের গান্ধীজী জেলের ৰাইরে থাকলে এইসব ন্শংস কাজের প্রথম প্রতিবাদ তিনিই করতেন। এদিকে জাপান ডিমাপুরে এসে পড়েছে_ফ্যাসিস্ট বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বের জনশক্তি আজ সভ্ববদ্ধ হচ্ছে_ আর তোমরা শুধু অন্তর্থাতী সংগ্রামে সে জনযুদ্ধকে সাবোঢাজ করছ । মিস গ্রেহাম শুধু বলেছিলেন_ প্লীজ অসীম" অসীম কর্ণপাত করে নি, সমান তলে বলে চলে : কতকগুলো ফন্দিবাজ এজন্ট প্রাভোকেটর মিথ্য। গুজব রটিয়ে বেড়াচ্ছে আর তোমরা মন্ধের মতো" -শাঁট আপ 1 গর্জন করে উঠেছিলেন আগ্নেয়গিরির মতো পরমানন্দ : তোমার যা কর্তবা মনে হয় তা করতে পার । কিন্তু এই অন্ধ বুদ্ধের চোখ ফোটাবার চেষ্টা কোরো না। যাও-_ _-আমার এক্ষেত্রে যা কতব্য তা করলে তার কী পরিণাম হবে জান ? সহ্য করতে পাববে তা? অপরিসীম ধৈর্ধে দ্ধারের দিকে অঙ্গুলিসন্কেত করে শুধু বলেছিলেন _ যাও মুহুতখানেক অসীম দাঁড়িয়েছিল নিশ্চল হয়ে তা সত্বেও। তারপর বললে-_ বেশ যাচ্ছি! যা কতব্য মনে করছি তাই করব আমি । চলে যাবার জন্য পা! বাড়ায় অসীম। পরমানন্দ আবার বলেন-র্দাডাও ! যা করতে চাও তার ফলাফল ভেবে নিয়ে কোরো । ঝৌকের মাথায় কিছু করে বোসো না। এর পরিণাম সহা করবার শক্তি তোমার আছে কিন! ভেবে দেখো একবার ।. তোমার কথাটার উপর ৰৌক পড়ে তার। মাথ। খাড়া রেখেই চলে যায় অসীম । মিস গ্রেহাম ওকে ফিরে ডাকেন। কর্ণপাত করে না সে। ৫২ সস নীল হয়ে বসে থাকে নীলা। হন হন করে স্বল্লালেকিত করিডোরটা দিয়ে অসীম চলেছিল । হঠাৎ পিছন থেকে জামায় টান পড়ে ওর । অসীম দাড়িয়ে পড়ে । _ কোথায় চলেছ? _অসীম আপাদমস্তক একবার দেখে নিল বৈশাখীকে । ছোপ- ছোপ জংল। রডের একটা শাড়ি পরেছে সে। এলো করে বাঁধা চলক! খোঁপা ভেঙে পড়েছে কাধের উপর । সেই ভাঙা খোঁপাতেই গৌঁজ। আছে একটা আধফোটা রক্তগোলাপ । একটু আগে বৈশাখীর শয়নকক্ষে রোগীর শয্যাপার্্বে রাখা ফুলদানিটাতে যে রক্তগোলাপের গুচ্ছ দেখে এসেছিল-_তারই একট! । _কোথায় চলেছ ? আবার প্রশ্ন করে বৈশাখী । --আয়াঙ্গারের বাংলোয়। _আয়াঙ্গার কে? এস ডি. ও। বৈশাখীর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, বলে_কা পাগলামি করছ ছুমি! জান এর কি পরিণাম হতে পারে ? অসম জর কুঁচকে প্রতিপ্রশ্ব করে-কিসের কি পরিণাম হবে ? তুমি যদি ওর কথা বলে আস গিয়ে তাহলে কাকাবাবুর অবস্থাটা কি হবে ভেবে দেখেছ ? _-কেন ? ডাকাতের-গুলি-লাগা! পেশেন্টের চিকিৎস। করায় তো! কোনও অপরাধ হয় না। __ছেলেমান্ুষি কোরো না অসীম | ছেলেটির পরিচয় তুমি জান! _জজানি নাকি ? তাহলে ডাকাতের কথা মিথ্যা করে বলেও তোমার বয়ফ্রেণ্ডের পরিচয়টা গোপনে রাখতে পার নি তুমি ! বৈশাখী উত্তরে বলে, না, মিথ্যা কথা আমি বলি নি। তুমিই বুঝতে পার. নি। ইংরাজ শাসককে এ বাড়ির একটি প্রাণী ছাড়া সকলেই ভাকাত বলে মনে করে । €ত অসীম বলে- রাজনীতির তর্ক তোমার সঙ্গে আমি করব না বৈশাখী । ইংরাজ শাসকদের মিত্র বলে আমিও মনে করি না--কিস্ত এ কথাও আমি ভূলতে পারি না যে, প্রভু হিসাবে ইংরাজদের চেয়ে জাপানীরা বেশী মনোরন হবে না। কিন্ত যাক ও কথা-_ছাডে। আমাকে, তে দ।ও | অসীমের পাঞ্জাবিন একটা! প্রান্ত তখনও ধরা ছিল বৈশাখীর মুঠিতে । সে বুঝাত পারে অসীমকে ছেড়ে দিলে সে একটা সর্বনাশ করে বসবে এখন 1 বশাঘীৌর উপরেই তার রাগটা হয়েছে সবচেয়ে বেশী,না হলে কখনও “বৈশাখী” বলে সান্বাধন করত ন! তাকে, ডাকত “সাকী” বলে। বৈশাখী বলে- এ বাড়ির মন্যে যদি ও ধরা! গড়ে তাহলে আমর! সকলেই ধর পড়ব এটা ভেবে দেখেছ ? ধরা তো তুমি পড়ে গেছ বৈশাখী । নতুন করে আর কি ধরা পড়বে তুমি ? _- আমার কথা হচ্ছে না, কিন্তু তুমি কি স্স্তত কাকাখ।বুর কথাটা ভেবে দেখেছ ; _বাবার কোনও বিপদ নেই এতে তিনি আমাকে যে কথা বোঝাতে চেয়েছেন সেই কথাই বলধেন। তিনি ওকে চিনতে পারেন নি। ভেবেছিলেন সত্যিই বুঝি ড/কাতের গুলি লেগেছে ওর্‌ পায়ে । তারপর যে মুহুর্তে বুঝতে পেরেছেন ছেলেটি পল।ভক রাজ/দ্রোহী সেই মুহুতই তার ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছন এস, ডি. &-র কাছে । এতে তাঁর বিপদটা (কোথায় তা তো বুঝছি না৷ আমি । বৈশাখী ওর হাত দুটি ধরে মিনতিমাখা কণ্ঠে বলে--তোমার পায়ে পড়ি অসীম, এ কাজ তুমি কোরো না । ভরু কুঁচকে ওঠে অনীমের- ব্যঙ্গের এক চিলতে একটা হাসিও খেলে যায় ওর ওষ্ঠে, বলে-কিস্তু কেন বলো ভো ? এত কাতিরভাবে প্রার্থনা করার কারণটা কি ? --আমার ভয় করছে ! আমার মনে হচ্ছে ভয়ঙ্কর একটা কিছু ৪ ঘটতে যাচ্ছে এই নিয়ে । কাকাবাবু ভীষণ আহত হবেন। __হওয়াই উচিত। তিনি ওকে বাঁচাবার চেষ্টা করছেন৷ সেটাকে তিনি কর্তব্য বলে মনে করেছেন । কিন্তু কর্তব্য কর্ম করার অধিকার তো তার একলার এক্তিয়ারভূক্ত নয় । মামাকেও করতে হবে-যা আমি করণীয় মনে করছি । তুমি আমাদের বাড়ির আবঙ্ীওয়ার কথা জান না। আমার আইডিওলজি আমি অনুসরণ করলে বাবা কখনই কিছু মনে কববেন না। তবু আমি তোমাকে মিনতি করছি অসীম" "তা ছাড়াও মাঁনে, -* ঠিক বুঝিখে বনতে পারছি ৷ তোমাকে আমার মনেব আশঙ্কা -"" আমি মিনতি করছি অপীম প্লাজ! অসীম আর হাস্য মংারণ করতে পারে না, বলে- নবাবপুত্রী ! এ উত্তম ! | কি টান্তম গীম 7 --নিশীথে একাকিনা বন্বিসহবাস নবাবপুত্রীর পক্ষে উত্তম ! --এ-নব কথার মানে ১ মানে আয়েষা বেগমের এ অনুরোধ রক্ষা কর! আপাতত ওসমানের পক্ষে অসম্ভব । ওর হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল অসীম । বৈশাখীর সঙ্গে অসীমের এ সাক্ষাৎকার প্রতাক্ষ করেন নি পরমানন্দ । এ শুধু তার অনুমান । এবং সেইটাই তাঁর সবচেয়ে বড় ছুঃব। তিনি যদি জ্ঞানতে পারতেন যে, অসীম আদর্শপ্রণোদিত হয়ে, সংবাদ দিতে গিয়েছিল 'এস. ডি. ও.-র বাংলোতে তাহলে বোধকরি তিনি তাকে ক্ষমা করতে পারতেন । ক্ষমা না করলেও অস্তত এটুকু সাস্তবনা তার থাকত ষে, দুর্ঘটনাট৷ শুধুমাত্র পিতাপুত্রের আদর্শগত বিরোধজনিত । কিন্তু আসলে কি তাই? অসীম কি খবর দিতে ছুটে- ছিল এস. ডি. ও.-কে ঈর্ধাপ্রণোদিত হয়ে ? শুধু ক্ষণিক উন্মাদনায় কি এ কাজটা করে বসে ও? অবশ্টু এ কথা নিশ্চিত যে, তার ফলাফলটা ষে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা ছিল এ নাবালক রাজনীতিকের ্তী ছঃম্বপ্রেরও অগোচর । বোক। ছেলে 1 সে তার বাপকে চিনক্ে পারে নি । _-একটা সই লাগবে ভাক্তার সাহেব। টাইপকরা একখণ্ড কাগজ কে যেন বাড়িয়ে ধরে গর সামনে । কিসের কাগজ ওটা? কে জানে । পরমানন্দ শুধু এইটুকুই দেখলেন একসার সই রয়েছে তাতে । অন্যান্ত সব ভাইরেক্টবের দস্তখত করা! আছে। না পড়েই একটা সই করে দিলেন পরমানন্দ । কাগজখানা চলে গেল পা ।বতী উদ্রলোকের হাতে । তন্ময়তা ভাণ্ড নি পবমানন্দের । তিনি ভাবছিলেন সেদিন সন্ধ্যার কথা । অন্ধকার হয়ে 'এসেছে । ডাক্তার চৌধুরী নিজেই ড্রাইভ করে ফিরছিলেন বাংলোয়। কীঞ্বব্ছানো লাল পথ দিয়ে গাড়ি এসে ্াড়াল গাঁটিবাবান্দার নীচে । চৌধুরী ডাক্তার গাড়ি থেকে নামলেন । একা | নেমেই দেখেন সন্ধ্যাব অনালোকে বাইরে কয়েকখানি চেয়ার পাতা । বামে আছেন আধা শন্ধকারে কয়েকজন ভদ্রলোক । অনুমান তাহলে তাব ঠিকই হয়েছিল। * সীম আছে, আছে নীল। এবং মিঙ্গ গ্রেহাম। সেদিকে অগ্রসর হতেই এস ডি. ও. মিস্টাল আয়াঙ্গার বলেন -গুড ঈভনিং ডক্তর চৌধুবী । প্রতাভিবাদন কবে চৌধুরী সাহেব এসে বসেন একটা বেতের চেয়ারে । মিস গ্রেহাম কয়েক গ্রাস পানীয় প্রস্তুত করছে বাস্ত। নিথিকার মৃত্তি তীর । নীলা বসে আছে একট৷ অরেঞ্জ স্কোয়াশ হাতে । »াদ টসেছে শুরু সপ্তমী কি অষ্টমীর। তারই ম্লঈন আলোয় রক্তশৃন্ঠ দেখাল নীলাব মুখ । চোখাচোখি হতেই মনে হল কি 'একটা কথা বলবার জন্তা সে যেন ছটফট করছে । চৌধুরী আন্দাজ করেন কথাট। কী। আয়াঙ্গীর সাহেবকে দেখেই বুঝতে পেরেছেন তিনি---অসীম কি কাণগুটা করে বসে আছে। অসীম বসে আছে সামনের চেয়ারটায়__ মেদিনীনিবন্ধ দৃষ্টি । কতদূর ঘুবে এলেন? _এই তো।--অস্পষ্ট জবাব দিলেন উনি সৌজন্যরক্ষার্থে। মিস ১৪০০ গ্রেহাম প্রশ্ন করেন_-তীকেও একটা পানীয় দেওয়া হবে কিন1। ডাক্তার চৌধুরী সম্মতি জানান । আয়াঙ্গার সাহেব আর কালবিলম্ব ন। করে সোজ! নেমে আসেন আসল বক্তব্যে _ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ডক্টর চৌধুরী । উপযুক্ত সময়েই আপনি খবর পাঠিয়েছিলেন অসীমবাবুকে দিয়ে । সমস্ত বাড়িটাই আমরা ঘিরে রেখেছি । অপারেশন করে আপনি ভালোই করেছেন আর তা ভাড়া ওর পরিচয় তো শুনলাম আপনি প্রথমে বুঝতেই পারেন নি। সুতরাং আপনার কোনও আশঙ্কা নেই । নাউ কাম টূ পয়েন্টস। কোথায় আছে আপনার পোশন্ট ? পরমানন্দ একটু ইতস্তত করে বলেন--নীলা” আমার চুরুটের প্যাকেটটা প্লীজ । মিস গ্রেহাম উঠে পড়েন_ আমি দেখছি | প্লীজ লেট হার সেণ্ড ইট। নল ত্রীর পদে উঠে যায়। ইঙ্গিতটা সে বুঝতে পেরেছে । চুরুটের 'প্যাকেটটা তাকে আনতে বলা হয় নি--পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে । নন্দ চুরুটের বাক্সটা এনে নামিয়ে রাখে টেবিলে । ভার থেকে একটা বার করে নিপুণভাবে ধরান ডাক্তার সাহেব । বাক্সটা এগিয়ে দেন আয়াঙ্গারের দিকে । তিনিও ধরান একটা । -কোন পেশেণ্টের কথা বলেছন আপনি ? যার খবর দিয়ে আপনি আপনার ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন আমার কাছে। ০ - আই থিষ্ক যুআর মিস্টেকন্‌। আমি তো কোনও খবর পাঠাই নি। অসীম, এসব কি শুনছি ? অসীম চমকে ওঠে । কী বলবে তা বুঝতে পারে না । পরমানন্র যে এটাকে বেমালুম অস্বীকার করে বসতে পারেন এটা তার স্বপ্রেরগু অগোচর। সে ভেবেছিল আয়াঙ্গার সাহেব যখন হাতেনাতে আসামীকে ধরে ফেলবেন--তখন প্রমানন্দের সামনে দ্বিতীয় কোনও পথ থাকবে না? ঠার গায়ে কোনও আচড় লাগার কথা নয়। তিনিই ৫৭ ছেলেকে পাঠিয়েছেন আয়াঙ্গার সাহেবের কাছে, গোপনে সংবাদ দিয়ে। তিনি বিপ্লবীটিকে আশ্রয় দেন নি--আটকে রেখেছেন শুধু পুলিস আসা পর্যন্ত । স্ুতর।ং পরমানন্দের এতে বিপদ নেই বিন্দুমাত্র বরং সরকার থেকে পুরস্ক'র পাওয়।র সম্ভাবনা আছে। কিস্তু কার্ধক।লে ঘটনাটা ঘট অন্ত রকম । স্দলবলে আয়াঙ্গার সাছে: এসে ঘিরে ফেললেন বাড়িটা । চৌধুরী সাহেবকে পাওয়া গেল ন। বাড়িতে । গাডি ।নয়ে একাই কোথায় রুগী দেখতে গেছেন তিনি । তার অন্তুপস্থিতিতেই বাড়ি সার্চ কণ। হয়ে গেছে । ছেলেটিকে পাওয়া যা নি ! নেই, কোথাও নেই-সেহ ছেলো?। অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে আয়াঙ্গার ঝূলন-ডক্টির চৌধুরী ! আগুন নিয়ে খেল করপেন না আপনি। মরুণ।ভ নন্দী এ বাটিতে এসেছিল-- চীর্‌ পাঁচ দিন এখানে ছিল--ছার সন্দেহাতীত প্রমাণ আমরা পেয়েছি । অসীমবাবু সব কথা স্বীকার করেছেন আমার কাছে । আর অ'পনার বাড়ি সার্চ করেই পাওয়া গেছে এই অকাটা প্রমাণ । এক বাগ্ডিল কাগজ তিনি বর কবে রাখেন সামনের টেবিলে । নিষিদ্ধ প্রচারপছ্জের একা গা কাগজ । আগার গ্রাউও প্রেস থেকে ছাপা। নালার বিছানা হল! থেকে যে কাগচগুলো একদিন উদ্ধার করেছিল অসীম ! আপনি শিশ্চযই বলবেন না যে এগুলি জাপনার পুত্র অথবা কন্যার সম্পত্ত । স্থতর।ং অরুণ নন্দী আপনার বাড়িতে এসেছিল «এটা আপনাকে মেনে নিতেই হবে। কি জবার দেবেন বুঝতে পারেন না চৌধুরী সাহেব । এস. [ড. ও. আয়াঙ্গার কম্বর নীচু করে বলেন_ ডক্টর চৌধুরী, আমি জানি, ছেলেটিকে আপনি বাচাতে চাইছেন । হঠাৎ অসীমবাবুকে দিয়ে খবর পাঠিয়ে এখন আবার কেন তাকে বাচাতে চাইছেন তা অবশ্ট জানি না । কিচ্গ এখন আর উপায় নেই ডাক্তারণাহে | পরমানন্দ তখনও নীরব থাকেন । --আমার সন্দেহ হচ্ছে আপনিই অসীমবাবুকে পাঠিয়েছিলেন, £৮৮ কিনা। সম্ভবত আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই খবর দিতে গিয়েছিলেন অসীমবাবু; তাই নয় অসীম তাড়াতাড়ি প্রতিবাদ করে--না না, শামাকে উনিই পাঠিয়েছিলেন । আয়াঙ্গার মুখ থেকে একরাশ ধোয়া ছেড়ে বলেন- সম্ভবত কথাটা! সত্য নর--তবু আমি তাই ধবে নিতে রাজী আছি। কারণ আ।মি চাই ন1 ডক্টর চৌধুরী এ খ্যাপ'রে বিন্দুমাত্র বিব্রত হন। নাউ গীজ- কোথায় আপনার পেশেন্ট * এতক্ষণে মনস্থির করেছেন পরমানন্দ । অজেনগখিলছি' পস্থুন, আমি আলছি এখনি । ঈঠে পড়েন চৌধুরী সাহেব । --এক্সকিউজ মী! আমার প্রম্মের জনাব না দিয়ে কোথাও যোতে পারাথেন না আপনি । --আম আই আগার আ্যরেস্ট দেন ? আায়াঙ্গর আর একবার নিষ্নকণ্ঠে উচ্চারণ করেন তার শেষ সাবধানবাণী- অনেক আগেই আমার উাচত ছিল আপনাকে আযারেস্ট করা। আমি তা করি নি। কারণ আমি ভুলতে পারছি না সেই রত্রিটির কথা--যে রাত্রে আমার বেবি টাইফয়ড-ক্রাইসিম পার হয়েছিল । আনি আপারাত্র ছিলেন আমার বাসায়। তবু সব ভিনিস্রেই একটা সীমা আছে ডক্টর চৌধুরী। আমি আপনাকে শেষবার গশ্ব করছি--গাড়ি কা কোথায় পৌছে দায় এলেন আপনার পেশেণ্টকে ? --এর জবাব না পেলে মামাকে আপনি গ্রেপ্তার করবেন ? -_আযাণ্ড উইথ নো রিগ্রেট। কারণ আত্মরক্ষার পুর্ণ সুযোগ আপনাকে বারে বারে দেএয়া হয়োছে। _-ওয়েল, দেন ডু আযরেস্ট ম.। আপনাকে প্রশ্নের জবাব আমি, দেব না। চীংকার করে ওঠে অসীম- বাবা ! - ইট্স্টু লেট খোকা! ভূলে যেও না আমাদের কৃতকর্মের, রী পপ ফলাফল করবার জন্ত আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । নীল! রইল তোমার গ্র্যানী রইল ! :_ আয়াঙ্গার সাহেবের দিকে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুটি বাড়িয়ে দিয়ে পরমানন্দ বলেছিলেন- আমি প্রস্তুত বন্ধু! ননীমাধব বলেন চলো, এবার ওঠা যাক 1 ওঃ! সাড়ে দশটা বাজে | চলো; চলো । যস্ত্রচলিতের মতো! ননীমাধখের সঙ্গে আবার এসে বললেন মোটরে । এতক্ষণে আবার বর্তমানে ফিরে এসেছেন তিনি । মনে পড়ে খায়--ধর্মঘটের জন্য জরুরী মীরটিঙে এসে বসেছিলেন তিনি । মনে পড়ে যায় নীলা চলে গেছে বাড়ি ছেড়ে । কিন্ত এ কি হচ্ছে? এতবড় জরুরী মীটিডে উপস্থিত থাকলেন পুরো ছুটি ঘণ্টা অথচ তিনি কিছুই জানেন না। কা সিদ্ধান্ত হল ডিরেকটরদের সমাবেশে লকআউট চলতে থাকবে? একবার মনে হল ননীমাধবকে প্রশ্নটা করেন । তারপর নিজেরই কেমন সস্কোচ হল । নাঃ, এ রকম মানসিক অবস্থায় ছোটাছুটি করে বেড়ানোর কোনও অর্থ হয় না। আগে তাকে স্থির হতে হবে। ভারপর কাজ! --এখান থেকে সোজ। জিতেনদার ওখানে যাবে তা? --না, আমি একবার গুরুদেবেব আশ্রমে ষাব। মেকি? সাড়ে দশটায় জিতেনদার বাসায় জরুরী আপয়েন্ট- সেন্ট ।. কিশলয় গান্গুলারও সেখানে আসবার কথা । এত বড় একট! সিরিয়স এনগেজমেন্ট ! সব কথা৷ মনে পড়ে যায় পরমানন্দের ৷ কিশলয়বাবু ভোটযুদ্ধের একজন যোদ্ধা । পরমানন্দের কনস্টিটুয়েন্দি থেকেই অবতীর্ণ হচ্ছেন বিপক্ষ শিবির থেকে । তার পিছনে সম্মিলিত কয়েকটি দলের শক্তি। এই আসনে হয় তিনি অথবা কিশলয়বাবু নির্বাচিত হবেন । আরও একজন স্বতন্ত্র প্রাথী আছেন, অধ্যাপক গিরীল্দ বনু । সকলে মনে করেছিল তিনিই নমিনেশন পাবেন পরমানন্দের বদলে । দীর্ঘ দিন জেলে সাজ জেলে কেটেছে তার। আকৈশোর দেশসেবায় যুক্ত আছেন তিনি । শেষ পর্যন্ত কিস্তু তার ব্দলে প্রমানন্দকেই নমিনেশন দেওয়া হয়েছে । গিরিক্দ্রবাবু অকৃতদার সন্য।সী মানুষ । ভোটযুদ্ধ পাড়ি দেবার মতো আধিক. সঙ্গতি তার নেই । ফলে সকলেই মনে করে এ আসনের জন্ত হবে একটা ঘ্বৈরধ সমর । ধুরদ্ধর কয়েকজনের প্রচেষ্টায় কিশলয়বাবুর নাম প্রত্যাহারের একটা সম্ভ।/বন! দেখা গিয়েছে । কথা আছে জিতেন- বাবুর মধ্যস্থতায় আজই একটা বোঝাপড়া হয়ে যাবে । শোন! যাচ্ছে কয়েকটি শর্তে কিশলয়বাবু সরে দীড়াতে রাজী আছেন। জিতেন বাড়জ্জে কোনও রাজনৈতিক দলভুক্ত নন। স্থানীয় বারের একজন লন্বপ্রতিষ্ঠ উকিল । ক্রিমিনাল সাইডের সবচেয়ে নামকরা আইনজীবী । ভোট প্রার্থীদের যদিও ঠিক ক্রিমিনাল পর্ধায়ভুত্ত করার কোনও নজির নেই--তবু এঁ জিতেন বীডুজ্জের মাধ্যমেই একটা! সমাধানে আসার চেষ্টা-করেছেন ছুপক্ষ । এ কথাও আছে যে, জিতেনবাবুর বাসায় যদি ছুপক্ষ একটা মোটামুটি সিদ্ধান্তে আসতে পারেন তখন সকলে আসবেন তারিণীদার কাছে । গুরা সকলেই জানেন যে, তাপ্সিণীদা ভোটযুদ্ধে যদিও নিজে নামেন নি তবু তিনিই স্ুইচ-বোর্ড কণ্টেশাল করেন-সে পরিচয়ে পরমানন্দ ল্যাম্পপোস্ট মাত্র । - তোমার গুরুদেবের কাছে যেতে চাইছ কেন? -যদদি ও তার কাছে গিয়ে থাকে ? ৮কে ? নীলা ? পাগল হয়েছ! সে যাবে তোমার গুরুদেবের কাছে? গুরুদেবকে তোমার কত ভক্তি করে সে তা মনে নেই? সেবারকার কথা ভূলে গেছ নাকি? _কিস্ত তাহলে কোথায় গেল ও ? ব্যারাকে খোজ নেব ? -সে-দব পরে হবে। এখন চলো! তো জিতেনদার ওখানে স্রিমারের সঙ্গে বাঁধা গাধাবোটের মতোই ননীমাধবের সঙ্গে চললেন পরমানন্দ । জিতেন বাঁডুজ্জের বাসায় হবে বুদ্ধির প্রতিযোগিতা । নাম প্রত্যাহারের শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে-_স্থুতরাং প্রতিটি সেকেগ ফুল্যবান । কিশলয়বাবু তীক্ষ্ী রাজনীতিক, বাঘাডাগ্! কলোনির ১৩ সলিড ভোট তার মূলধন । তা ছাড়াও আছে কয়েকটি বিরুদ্ পাটির সম্মিলিত শক্তি। যুদ্ধজহের সম্ভাবনা তারও অল্প নয়। অথচ তিনি সরে দাছালে পরমানন্দের জয়যাত্র।র পথ শিরস্কুশ। ফলে কিশলয়বাবু আদে সবে দ।ঠাঁতে র।জী হবেন ঠিনা বল1শক্ত হলেও তর শর্তগুলি খুব সহজপাচ্য হনে না কিস্ত সম্মত ত।/কে করাতেই হবে। পণমানণন্দকে যেতেই হবে শ্যাসেম্রিতে | না হ'ল দেশের কতটুকু সেবা তিন ঞণতে পারবেন এখানে থেকে ? যে মাহনের বলে দেশ চালিত হবে সেই আইন যেখানে জন্ম মেণে, বিতিন্ন খাতে সরকাব কত টকা ব্য।11দ 1শর্ধাবিত করতেন তা যেখানে স্থির করা হবে, খানে যেতেই হবে তাকে । ত।ব দেশসেব।কে বৃহত্তব পিধিতে বিস্তৃত করে (দতে হবে। আইনম পাব মহাবজ্ছে পাতি না হতে পাবলে তর দেশসেবার বাখন। তপু হবে না। এঙ!দন পরে পার্টি তাকে নমিনেশন দি,য়ছে- দুর্লভ এ সৌভঙান্য । এত ৭৬ স্থুযেগের সদ্যবহার যদ্দি ন। ক তে পাপেশ তবে মার ভবিষ্যতে আশা নেই । পারবেন নিশ্চয়ই পা পেন তিনি কিশভঘ়বাধুকে রাজী +বাত-উঠতেই হবে তা্ছে স।ফ্লোব শিখবচুড়াম । ওখ।নেই যে তা যাত্রা শেব হবে তাই বা কে বলতে পারে ঘেতে পাবেন কা।বিনেটেও একদিন ! ' আর হতভাগা মেষেটা ণঙো বিনা তিনি লক্ষ্যত্রষ্ট । তিনি স্বাখ- পণে!পিত হয়ে ছুটে চলেছেন একমুখো ৷ দেশের কথাই তার কাছে ন। শেষ কথ! নয়_নিজের কথ।ই তিনি শুধু ভাবেন। (নিজের কা কথা ? কোন স্বার্থ? অন্থায়ভাবে তিনি কি জীবনে একটি রজতখণ্ডও ₹প।্জন কবেছেন ? অনেক বঙ বড প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আজ ভিনি যুক্ত। অনেক ক্লাবের পেট্রন কয়েকটির উপদেষ্টা, কিছুসংখ্যকের কোষা ধ্যক্ষ। একট পয়স।ও কখনও এদিক ওপধিক হয়েছে তীব হাতে? তবে? স্বার্থ! কোন স্বাথে এশাদিত হে তিনি অকনাভ নন্গ।ন সন্ধ।ন দিতে অস্বীকার করোছিলেন লোধন ? আয়াঙ্গারকে যাদ সেদিন 1৬নি বলে দিতেন সেই সন্ধ্যায় কোন পথের কৌন বাকে কাদের জিন্মার নানয়ে য়ে এসে।ছলেন সেই অন্তুস্ক মানুষটাকে তাহলে এত নিধাভন সহা করতে ৬ হত ন! তাকে । নির্যাতন ! কী অপরিসীম যন্ত্রণাময় সে দিনগুপা। ! দীর্ঘদিন বিনা বিচানে আটক ছিলেন তিনি । রাজদ্রোহের মপরাধে তখন প্রকাশ্য বিচারের ব্যবস্থা ছিল না। নিরাপত্তা মাইনেই আটক ছিলেন দীর্ঘদিন । অকথ্য অত্যাচার হরেছিল বৃদ্ধেব উপব-- তবু একটি কথাও বার হয় নি ত।ব মুখ দদিয়ে। হ্যা, অসাম সিকই 'লেছে। অরুণ।5 নন্দী নামে একটি ছেলে আশ্রয় নিয়েছিল ত।র বাড়িতে । তার পাশে তিনি অপারেশনও করেছিলেন। সন্দেহ হওয়।য় ছেলেকে পাঠিয়ে এস. ডি. ও -বে খবরও দিয়েছিলেন । তারপর কি করে সে তার বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল তা তিনি জানেন না। এই তা জবানবন্দি । অসীম পাগলেব মতো! ছে।টাছুটি করতে থাকে । ঘরে-বাইরে পমানের চুড়ান্ত হ। তার। সেই নাকি বাপকে ধা৫য়ে |দয়েছে ! তবু অদমের এঁকপ্তিক প্রস্ট্রোতিই [চার উঠল আদাশতে। বোকা ছলে ! কেঁচো খুঁচিতে গিয়ে বেব হয়ে পড়ল সাপ। সন্ধানী পুটাসের তীক্ষদৃষ্তিতে ডদ্ঘাটিত হল পরশুরাম চৌধুধীর জী এবৃত্তাস্ত । প্রম।নিত হল পরশুরাম আর পরমানন্দ অভিন্ন বাক্ত। যেটুকু আশা ছিল পরিত্রাণেৰ নিমূ'ল হল তা৷। যারা ওর “জাপানকে ক্খতে হবে»চীৎকাগে [বিরক্ত ছিল তারা বললে অস'মই প্রকাশ করে দিয়েছে বাপের খিপ্লবা জীবনের গোপন ইতিহাঁস। কথাটা পরোক্ষভাবে সত্য | খিচাস্রে প্রচেষ্টা না করলে হতো তার যৌবনের ইতিহ।ন এমনভাবে জাপাজা।ন হয়ে পড়ত না। চিহ্ত হয়ে পড়লেন পরমানন্দ-খিপ্লবীর সহকারী খলে নয় স্বয়ং রাষ্ট্রদ্বোহী বলে। ধরা পড়েছিল অরুণাভও | সে কিন্তু তার জবানবন্দিতে অস্বীকার করেছিল পরমানন্দের পরিচয় । না, তার পায়ের উপর পরমানন্দ অপারেশন করেন নি। কে করেছিল? তা সে বলবে ন।। অসীমের অবস্থাটা কল্পনা করা শক্ত নয়। বেয়।ল্লিশের আন্দোলন তখন অতীত ইতিহাসের পর্যায়ভুক্ত । লালকেল্লায় এতিহাসিক বিচার দি তখন চলছে আজাদ হিন্ন নেতাদের । জাপানকে রুখবার জন্ক কয়েক বছর আগে যারা উঠেপড়ে লেগেছিল--তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করা কষ্টকর বোধ করছে । অসীমের অবস্থা আরও করুণ । বাড়িতে কেউ তার সঙ্গে কথা বলে না। লীল! তো নয়ই, মিস গ্রেহামও নয়। বৈশাখী পধস্ত ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নেয় । নন্দ-বেহ।রাও ওর মুখের দিকে চোখ তুলে তাকায় না । মামলার জন্য তদ্বির তদারক সমস্ত করতেন ননীমাধব । বন্ধুর কর্তব্যে ক্রটি হয় নি তার । এমন কি এজন্য রাজরোষে পড়বার সম্ভ।বনা থাক! সত্বেও তিনি বিরত হন নি বন্ধুকৃত্য থেকে । সংসারের সমস্ত দায়িত গ্রহণ করেছিল নীল! মিস গ্রেহাম শধ্য। গ্রহণ করলেন । এই শহ্যাগ্রহণই তার শেষ শয়ন। দেশে আর ফিরে যেতে পারেন নি তিনি । দীপক আস্ত সকাল-সন্ধ্যায়। নীলার সঙ্গে পরামর্শ করত । মামলা-সংক্রান্ত কথাবাতা হত। কখনও বসত সিস গ্রেহামের শধ্যাপার্্ে। বৈশাখীকে ডেকে হয়তো! দুটো পরামর্শ দিত। তারপর যাবার সময় বারান্দা থেকেই দেখে যেত অসীম বসে আছে নিজের ঘরে জানাল! দিয়ে একদৃষ্টে বাইরের দিকে “চয়ে। কখনও কখনও সিডির মুখে মুখোমুখি দেখা হয়েছে ছুজনের । দীপক মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে গেছে নীরবে । দীপক অসীমের সহপাঠী ছিল একদিন ! যেদিন মামলাব দন পত সেদিন দেখা ঘেত অসীমকে মাদালতের কামরায় । কেউ তাকে ডেকে নিয়ে যেত না, কেউ তার সঙ্গে একসঙ্গে ফির৬ না । ও নিজেই খবর রাখত মামলার দিন কবে পড়েছে । ঠিক সময়ে ম্লান মুখে এসে দাডাত জনারণোর একান্তে ৷ হয়তো কেউ চিনে ফেলত তাকে--ওর দিকে আঙুল দেখিয়ে ওরা কি যেন বলাবলি করত । কি “য ওরা আলোচনা করে তা হান্দাজ করতে পারত অসীম-_তাই চোখ তুলে তাকাত না কখনও । তবু ন। গিয়েও পারত না, এখানে দাড়িয়ে দীড়িয়েই সে দেখতে পেত সামনের একখানা .বেঞ্চিতে ননীমাধব, দ।পক অ।র নীলা বসে আছে উকিলবাবুর কাছে । দেখত চোখ তুলে আসামীর কাঠগড়ায় ফাডানে! লোকটাকে ! একঘৃষ্টে ৬৪ চেয়ে থাকত সেদিকে ৷ তারপর কোট বন্ধ হলে। জনারণ্যে মিশে যেত পাছে ও কেউ ডাকে একপঙ্গে বাড়ি ঘেতে। যদি চোখাচোখি হয়ে ঘায় নীল! অথবা! ননীমাধবের সঙ্গে । একদিন সাহস ভর করে সেমিয়ে হাজির হয়েছিল ননীমাধবের বাসায় । ননীমাধব ওর মুখের উপরই দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন । অসীম কাদে নি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল সে। নিজের ঘরে বস থাকত দিনরত। কদাচিৎ বার হত ঘর থেকে । লোকচক্ষুৰ মন্তরালেই সঙ্গে শনে উদ্ঘাপিত হত তার ম্বেচ্ছাবন্দী জীবনের দিনগুলি। নন্দ তার ঘরে পৌছে দিয়ে যেত চা, খাবার, ভাতের থালা । একসঙ্গে ডিনার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বন্ুদিন। খাবার অভুক্ত পড়ে থাকলেও কেউ এনে অনুযোগ করত ন1। উঠিয়ে নিয়ে যেত মভুক্ত থালাখানা । বাপের মামলায় সাক্ষী ।দিতে হয়েছিল তাকেও । কি বলেছিল তার মনে নেই । মাটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্বের জবাব দিয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন চলে মামলা । নীলা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে, বৈশাখী না থাকলে বোধহয় মারাই পড়ত বেচারি । নীলার সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করত অসীম । দিন দিন ম্লান-হয়ে-মাস। ছোট বোনটির চেহারা দেসুখ হু সু করে উঠত অসীমের সার] অন্তঃকরণ--কিস্তু উপায় নেই । ছোট বোনটির মাথায় হাত বুলিয়ে ছটো সাস্তবনার কথ! বলার অধিকার থেকে সে বঞ্চিত। তারপর মামলার রায় বের হয়ে এল একদিন ! রাজদ্রোহী পরশুরাম চৌধুরীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ! এ বৃদ্ধের! অবিচলিত চিত্তে সে আদেশ করলেন প্রমানন্দ । অসীম ছিল আদালতে । থরথর করে কেঁপে উঠল সে দণ্ডাদেশ শুনে। বসে পড়ল ধুলার উপরেই । চোখের সামনে ঝাপস। হয়ে এগ পৃথিবী ! সংবিৎ যখন ফিরে এল তখন আদালভ জনশূন্য । ঝাড়,দার ঝাঁট ৬৫ ক্রাতা--”৫ দিচ্ছে বারান্দাটায় । একটা পেয়াদ! শ্রেণীর লোক একগোছ! চাৰি হাতে ঘরে ঘরে তালা লাগিয়ে চলেছে । তারই ডাকে সংবিৎ ফিরে আসে অসীমের। ফ্যালফ্যাল করে চারিদিকে তাকায় । কোথায় গেল এতগুলো লোক 1? সন্ধ্যা নেমে এসেছে পৃথিবী জুড়ে । রাস্তায় জলে উঠেছে বিজলী বাতি । অনীম উঠে দীড়ায়। ঝাড়দার থমকে দীড়িয়ে পড়ে । চাবি হাতে পেয়াদ।টা তাকিয়ে থাকে ওর দিকে । আদালতের কানিসে একজোড়া পায়রার নিভৃত কজন ছড়া চরাচর স্তব্ধ । মাতালের মতে টলতে টলতে চওড়া সিঁড়িটা বেয়ে নীচে নেমে আসে । অনেকক্ষণ তাহলে বসে ছিল সে এ ধুলার উপর । আজ আদালতে নীলা এসেছিল--ছিলেন ননীমাধব আর দীপক । তারা কখন গেল * যাবার সময় নিশ্চমু তার! দেখেছিল দ্বারের পাশে মাটিতে বসে আছে অসীম । আশ্চর্য ! আজকের দিনেও তারা প্রয়োজন বোধ করল না তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার । কেন? সেও কি এ পরমানন্দের সন্তান নয়। তার বুকের ভিতরটাও কি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে না আজ? সেকি ইচ্ছা করে এই সর্বনাশ ডেকে এনেছে! এ যে নিয়তির একটা চরম নিঠুর পরিহাস তা কি কেউ একবার ভেবে দেখবে না! না, অসীমের চোখ দিয়ে কেউ দেখল ন। একবার বিয়োগাস্ত নাটকের এ দিকটা! ! হাটতে হাটতে একসময়ে অসীম এসে পৌছায় সেই পরিচিত পয়েন্টি-করা লা'ল বাড়িটার সামনে । প্রেতমৃতির মতো! দাড়িয়ে আছে ছুর্গের আকারের এ বাড়িটা । আলো জ্বলছে না সামনের কোনও জানালায়) কোথ।ও প্রাণের কোনও সাড়া 'নেই । সগ্ভোবিধবার মতো মৃ্ণাতুর প্রা লদটা আজ মৌন_ স্তব্ধ । গেট খোলাই ছিল। চিরদিনের মতো! গেটের ডান পাশে দারোয়ানের ছোট্ট ঘরটার সামনে চারপাইয়ে বসেছিল দারোয়ান উদাস দৃষ্টি মেলে । ব্যতিক্রমের মধ্যে আজ আর সে উঠে দাঢাল না তার ছোট হুজুরকে দেখে । হয়তো এটুকু অসম্মানের মপ্যেই বেচারি জানাতে চাইল তার প্রতিবাদ । অপমানটা বাজল না অলীমের। সে লক্ষ করেনি এ-সব। ল।ল কাকর-বিছানো তত পথটাও যে ও প্রতি পদক্ষেপে অব্যক্ত ভাষায় প্রতিবাদ জানাল তাও কানে বাজে না তার। অবশেষে এসে পৌছায় গাড়িবারান্নার তলায়। ভিতরে প্রবেশ করতে মন হল না । বসে থাকে দ্বারের পাশে মেজের উপরেই । বাড়ির গাড়িট। এসে পৌছায় শল্প পরেই | ধরাধরি করে ওর! নামাল নীলাকে । আদালত থেফে ফিরছে সে। এত দেরিতে ? হবে না? দণ্ডাদেশ শুনে নীলা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে । আদালত থেকে তাই ও£ক নিয়ে বাওয়া হয় ননীমাধ্বের বড়িতে। সেটা মাদালত থেকে কাছে । এতক্ষণ সেখানেই ছিল সে মন্গন্ুস্থ হওয়ার পর ওকে নিয়ে আদ! হচ্ছে। দীপক মার ননীমাশবের সাহ।য্ো টলতে টলতে নীল! নেমে এল গাড়ি থেকে । উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি তার। খোপাটা ভেঙে পড়েছে পিঠের উপর। কাপড় ও ব্লাউসের অনেকটা ভেজা । মুখ আর মাথাও। বোধহয জলের ঝাপট। দেওয়া হয়েছিল-_-শুকোয় নি এখনও । চোখ ছুটো অস্বাভাবিক বকমের লাল। কোনদিকে তাকায় না নীলা । লক্ষ্য হয়না অপীমকে । সে উঠে দঈ।ছিয়েছিল দেওয়াল থেষে। দেওয়।লের সঙ্গে যেন মিশে যেতে চায়। ওকে কেউই গ্রাহা করে না। নালাকে ওর! নিয়ে এসে শুইয়ে দেয় ড্রইংরূমের একট। সোফার । অলীন ভয়ে ভষে নন্দকে প্রশ্ন করে-ডাক্তার দেখানে। হয়েছে ? নন্দ একবার থেমে পড়ে । কি যেন বলতে যায়। তারপর কিছু না৷ বলেই চলে যায় ভিতরে । অসীম বসেই থাকে বাড়ির প্রবেশপথের ধারে। এ বাটিতে সে অপ্রয়াজনীয়। শুধু অপ্রয়োজনীয় নয়" আবাঞ্চনীয়। এ বাড়িৰ সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাব। সম্পর্ক নেই বা কেন? সবাই জানে দেই এচরম সরনাশের মূল! সমস্ত জেনে শুনেও নাকি বাপকে ধরিয়ে দিয়েছে সে! কলঙ্কের বোঝ! নিয়ে কেমন করে দাড়াবে অলীম ছুনিয়র সামনে ? এত বড লজ্জার বোঝা! বহন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব ? শন দীপক বেরিয়ে আসে একটু পরেই । গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় ॥ কেজ্জানে কোথায় গেল ও । অদীম মনে মনে বলতে থাকে £ তুমি তো জানতে, এ আমি হ্বপ্নেও ভাবি নি। কেন এমন করে দলিত মথিত করে গেলে আমাকে ? কেন সমস্ত অপরাধের বোঝা! এমন করে তুলে নিলে নিজের মাথায়? কেন নৌপন করেছিলে আমাদের কাছে, তোমার যৌবনের ইতিহাস ? কেন? কেন, কেন:'"? '**আচ্ছাঃ বাবা এখন কি করছেন? খুবকি ভেঙে পড়েছেন ? দণ্ডাদেশ শোনার পর সে যেমন ধুলার উপর বসে পড়েছিল, তিনিও তেমনি করে ভেঙে পড়েছিলেন ? যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ! অর্থাৎ লৌহকপাটের ওপারেই ফেলতে হবে তীকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস! তার পায়ের উপর মুখ রেখে জীবনের শেষ ক্ষম। চেয়ে নেবার স্বযোগ আর মাসবে না অসীমের জীবনে !""'আস্ডা, চুরুট ন! খেয়ে কেমন করে আছেন তিনি। রাজবন্বীদের কি চুরুট খেতে দেয় ? ওঁকে কি দেই ডোরাকাটা একটা জাম! পরিয়ে দিয়েছে ! শিউরে উঠল অসীম । স্পষ্ট দেখতে পেল বাপের সেই মৃ্তিটা। নীল-সাদ! ডোরাকাটা একটা হাতকাটা জামা, আর হাফপ্যান্ট পরা ডাক্তার পরমানন্দ চৌধুরী দাড়িয়ে আছেন লোহার গরাদ ছুটো ধরে-_ছই গরাদের ফাঁকে চেপে ধরেছেন গলাটা । আর্তন'দ করে ওঠে অসীম- বাব! ! হঠাৎ ছুই হাটুর মধ্যে মাথা গুজে ফুঁপিয়ে কেদে ওঠে ছেলে মানুষের মতে। | কতক্ষণ এভীবে বসেছিল খেয়াল নেই । গাডির শবে আবার মুখ তুলে তাকায় । গাড়িটা এসে দ্লাড়িয়েছে দরজ্জার সামনে । ডাক্তার বাবুকে নিয়ে দীপক নেমে আসে । পাশ দিয়ে চলে যায় ওর! ভিতরে । ওকে অন্ধকারে ওভাবে বসে থাকতে দেখে থমকে চাড়িয়ে পড়েন ডাক্তারবাবু : এ কে? এমনভাবে বসে আছে কেন ওখানে ? ও অসীম । ডাক্তার চৌধুরীর ছেলে । ৮ --আই সী! ছাট সান? -হ্যা, আপনি ভিতরে আসুন । ওরা চলে যায়। গ্াট সান্‌ ! সেই ছেলে! যে ছেলে পিতৃগণ শোধ করেছে বাপকে জেলে পাঠিয়ে ! যে ছেলে". না! আর পারবে না অসীম। একট কিছু এখনি করতে হবে। হঠাৎ ওর বাহুমূল ধরে কে ষেন আকর্ষণ করে। -কে? ও, বৈশাখী! ওপরে যাও! - কেন? --পথের উপর এভাবে বস থেকে এক্কটা সীন কোরো না! টলতে টলতে উঠে যায় অলীম দোতলায় নিজের ঘরে । _- নামো এবার । নেমে আসেন পরমানন্দ ননীমাধবের অনুরোধে । জিতেন বাড়জ্জের বাড়ির সামনে এসে পৌছেছেন শুরা । এইবার শুরু হবে রাজনৈতিক বুদ্ধির লড়াই । সাদরে ওদের ঘরের ভিতর নিয়ে বসান 'জিতেন বাবু! বড় ঘর। চত্ুদ্দিক আলমারিভন্তি আইনের বই । পিছনের দেওয়ালে বিরাট বড় একটা বাঁধানো ফটো । সম্ভবত জিতেনবাবুর স্বর্গত পিতৃদেবের । তিনিও নামকরা উকিল ছিলেন বোধহয় । উকিপের পোশাকেই তোলা ছবি । কিশলয়বাবুও এসেছেন । একক । আবার. মামুলী সৌজন্য বিনিময়ের পালা । কিন্তু সময় অল্প, সুতরাং সোজা আলোচন। শুরু করতে হয়। পাটোয়ারী বুদ্ধিতে কিশলয়বাবু কিন্তু কম যান না। তবে পরমানন্দের পক্ষেও আছেন ননীমাধব । তিনি লক্ষ্য করেছেন পরমানন্দের ভাবাস্তর ৷ এজাতীয় সেন্টিমেন্টাল লোক নিয়ে ভারি মুশকিল | ননীমাধবই অলোচনা চালান বন্ধুর পক্ষ থেকে। কিশলয়বাবু পশ্চাদ্‌পসরণ করতে গররাজী নন এবং শর্তও তার আত্র একটি । সম্গাজ-উন্নয়ন-পরিক্পনার জন্য এ জেলায় একটি গ্রামনগরী চি স্থাপনের কথা। ছুটি স্থানের মধ্যে চূড়াস্ত নির্বাচন এখন্ও সমাপ্ত হয় নি। রতনপুর আর বাঘাভাঙা। রতনপুর একফালকার বরিষু অঞ্চল অর্থাৎ বর্তমানকার ক্ষয়িফু গ্রাম । বড় বড় মোটা থামওয়াল!. ছোট- ছোট পাতল! ইটের প্রাসাদ হৃতগৌরব জমিদারদের শেষ স্মৃতি বহন করছে। সেখানকার ভূতপৃব রায়সাহেব আর রায়বাহাছর জমিদারেরা তদ্বির তদারক করছেন রতনপুরেই গ্রামনগরী প্রতিষ্ঠা করার। অপর পক্ষে বাঘাডাঙা হচ্ছে মাঠের মাঝখানে হঠাৎ-গড়ে-ওঠা গ্রাম_ পূর্বব্জ থেকে উদ্বাস্ত এসে বসেছে সেখানে দলে দলে । কিশলয়বাবু এই জনপদের প্রতিষ্ঠাতা ৷ অল্পমূল্যে এই ডাঙাজমিটি ভিনি ক্রয় করে উদ্বান্ত পত্তন করেছেন । 'কিশলয়বাবু এবং তার পার্টি, চান এই বাঘাডাঙাতেই প্রত্িষ্টিত হোক প্রস্তাবিত গ্রামনগরী | কিশলয়বাবু প্রতিছ্বন্দিত থেকে সরে দরীড়াতে রাজী আছেন যদি তীকে প্রতিশ্রুতি দেওয়। হয় যে, তাদের পছন্দমত বাঘাডাডীতেই নতুন গ্রামনগরী গড়ে তোলার অন্থমোদন দেওয়া হবে। দেশবিভাগের আগে পূর্ববঙ্গে রাজনীতির সঙ্গে কিশলয়বাবু যুক্ত ছিলেন_-এখনও আছেন । তারই প্রচেষ্টায় অনেক পরিবার এসে বসেছে বাঘাডাভায় । একটা অবলা আশ্রমও করেছেন ওখানে কিশলয়বাবু-_মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন। এদের নুতন জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টায় মেতে আছেন উনি। কো-অপারেটিভ গড়ে তুলেছেন একটা ওদের নিয়ে। বাঁঘাডাঙা সমাজ-উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল নির্বাচিত হলে এই ধ্বস নরনারীগুলির অশেষ উপকার হয়। গ্রামনগরীর অচ্ছেছ্য অংশরূপে আসবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুলিশ ফাঁড়ি, কমিউনিটি হল, বাজার, ছোটখাট শিল্পপ্রচেষ্টা । জমজমাট হয়ে উঠবে অঞ্চলটা । এ-সবই জানেন পরমানন্দ। কিশলয়বাবু যে এ উদ্বাস্ত নরনারীগুলির স্বার্থে এতবড় আত্মত্যাগ করেছেন এতে মনে মনে খুশীই হলেন ভিনি । তবু বলেন : কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিশ্র্ত দেবার কতটুকু অধিকার আছে আমার 1 আমি যদি রিটার্নও হই--তবু আমার ইচ্ছায় তো দি. ডি পি টাউনশিপের স্থান নির্বাচন হবে না। জও । কিশলয়বাবু হেসে বলেন : অক্নঙ্গিভাবমজ্ঞাত্বা কথং সামর্থানির্ণয়ঃ ? আপনার ক্ষমতা কি? আপনি তে! জ্যাম্পপোস্ট মাত্র! -ত্তাহলে এ অন্যায় অনুরোধ করছেন কেন ? _ডাক্তার চৌধুরী, আমি ছেলেমানুষ নই । রাজনীতি করে আমারও চুল পেকেছে। এ লোকগুলো ল্যাম্পপোস্টকেই ভোট দিয়ে আসে কেন জানেন? কারণ তারা জানে যে, এ চলৎশক্তিহীন একেপায়ে খাড়া ল্যাম্পপোস্ট গুলোর সঙ্গে ক্ষীণ ঘোগাযোগ আছে এক- গোছা তারের । সে তারের মধ্যে দিয়ে ঘে বিছাৎ বয়ে যায় তাতে ৪৪০ ভোল্ট .কারেন্ট.। শুধু এখানেই শেষ নয় -সে তার আবার যুক্ত আছে কে. ভি. লাইনের সঙ্গে । তার সঙ্গে যোগাযোগ আছে মেন শ্রিট সিস্টেমের । ল্যাম্পপোস্ট নড়ে বসতে পারে না-_কিস্ত তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত আছে যে বৈদ্যুতিক তার-_-তার ক্ষমতা অসীম। পরমানন্দ কি একট! জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই মনীমাধব বলেন_তাহলে সেই প্রাইম-মুভারের সঙ্গে পরামর্শ না করে কি করে আমরা প্রতিশ্রুতি দিই বলুন । _পে তো বটেই। তবে আপনারা না পারলেও আপনাদের কিং-মেকার-অভ-দি-ডিপ্রিক্ এ বিষয়ে আমাকে কথা দিতে পারেন। অন্তত একটা ট্রাঙ্ক করার পর তিনি জানাতে পারেন। হা-হ। করে হাসতে থাকেন কিশলয় গাঙ্গুলী । _-বেশ, তবে তার কাছেই চলুন যাওয়া যাক । পরমানন্দ বলেন। বাধ। দিয়ে ননীমাধব বলেন-__কিস্ত তাহলে আপনাকেও একটা প্রতিশ্র্তি দিয়ে হবে কিশঙলয়বাবু। আরও একটি কাজ আপনার করতে হবে এই সঙ্গে । _ বলুন। _আমাঁদের ফ্যাক্টরির ধর্মঘটটা তুলে নিতে হবে। বাঘাভাঙ। বিষয়ে নিশ্চিত প্রতিশ্রতি পেলে আপনাকে বিন! শর্তে ধর্মঘটটা বন্ধ হবরতে হবে। | --এ আপনি কী বলছেন ন নীমাধববাবু? আপনাদের কারধানার ১০, স্ীইকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি? আমার ক্ষমতাই ঝা কতটুকু? পরমানন্দের কাছে কথাটা খুবিই যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কারখানার শ্রমিকেরা কোনও রাজনৈতিক দলযুক্ত নয়। ওদের কোনও স্বীকৃত মজদুর ইউনিয়নও নেই । সুতরাং কিশলয়বাবু কেমন করে এজাতীয় প্রতিশ্রতি দেবেন ? সে কথাই হয়তো! বলতে যাচ্ছিলেন তিনি, কিন্তু তার আগেই ননীমাধব বলে ওঠেন-_মিস্টার গান্ুলী, ছেলেমানূষ আমরাও নই। আপনি তো সামান্য চড়াই পাখি। কতটুকু ক্ষমতা আপনার ? তবু এ সংস্কৃত শ্লোকটাই বলছে নাকি যে সামান্য টিট্রিভ পক্ষীও সমুদ্রকে ব্যাকুল করে তুলতে পারে! আপনার পার্টিটাকা না টাললে একাদিক্রমে বাইশ দিন স্রাইক চালাতে পারে কোন শ্রমিক দল-যাদের ইউনিয়ন পর্যস্ত নেই? অবশ্য আপনি বলতে পারেন, নিজ দায়িতে এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া আপনার পক্ষে সম্ভবপর নয়---তা, কি বলে ভালো, আপনাদেরও একজন লীভার-অভ-দি-অপোজিশন পার্টি-মেকার আছেন না এ জেলায়_তীর সঙ্গেই না হয় একটু কথা- বার্তা বলে নিন টেলিফোনে । কিশলয়বাবুর হা-হা-করা হাসিটা এতক্ষণে প্রতিধ্বনিত হয়ে ওঠে ননীমাধবের কণ্ে। ভালোমানুষ জিতেন বাঁডুজ্জে বল্নে--একটু চা হোক এবার ? কেউ কর্ণপাত করে না কথাটায়। কিশলয় বলেন আপনার সঙ্গে কথা বলে সখ আছে মশাই। আমি এই রকম খোলাখুলি কথাই ভালোবাসি । একক'লে ফ্লাশ খেলতাম, জানলেন, কিন্তু বলাই খেলি নি কোনদিন । পাওয়ামান্্ তাস তিনখানা টিপে টিপে দেখে নিতাম-_-তারপর হাত বুঝে স্টেক করতাম । _-আপনি খেলেন না কি তেতাশ ? তাহলে আসবেন না আমাদের বোর্ডে । আমরা তো রোজই সন্ধ্যার পর... ননীমাধবকে থামিয়ে দিয়ে কিশলয়বাবু হেসে ওঠেন, সীয়ারাষ, নীয়ারাম ! ভূলে ধাচ্ছেন কেন আমরা বিপক্ষ শিবিরের লোক । স্‌ আমরা সর্বহারার দলে আর আপনারা হচ্ছেন ক্যাপটালিস্ট বুর্জোয়া শ্রেণীর লোক । আপনাদের ক্লাবঘরের দরজায় মাথা গলাতে দেখলে যে আমাদের আর লোকে বিশ্বীদই করতে চাইবে না। _আহা, সেইজন্যেই তো ক্লাবঘরে একটা পিছনের দরজা বানানে। হয়েছে। ছুজনেই হেসে ওঠেন আবার । _-কিন্ত যে কথা হচ্ছিল। আপনাদের স্্বীইকের কথা । হ্যা, ওটার ব্যবস্থাও হতে পারে-কিস্তু একেবারে মৌফতসে ওটা কি করে আশা করেন আপনি ননীবাবু? বাঘাডাঙার এক্সচেঞ্জ আমি উইথ করতে রাজী আছি | দ্দি ডীল ইজ. কমগ্্লীটেড । এই একই ্র্যানজাকশনে যদি আপনাদের ধর্মঘটটাও জুড়ে দিতে চান তবে অমার তরফেও একটা এন্টি, হওয়া উচিত, নয় কি? ফর এভরি ডেবিট দেয়ার সত্য বি এ ক্রেডিট--না হলে ব্যাল্যান্স শীট মিলবে কেন অআ্যা? যেন চবম রসিকতা হল একটা । ছুজনেই আবার হেসে ওঠেন। অন্বস্তি বোধ করতে থাকেন পরমানন্দ। এ কি মেছোহাট্টায় এসে পড়েছেন তিনি ! ছজনেই দেশসেবা করতে চান--অথচ রাষ্ট্রের আইনে একজনই পেতে পারেন সে অধিকার । সুতরাং একজন যাবেন আইনসভায়-_অপরজন তাকে স্থান ছেড়ে দেবেন। যিনি স্বার্থত্যাগ করছেন তিনি কতকগুলি সুবিধা পাবেন ; কিন্তু সে সুবিধা আদর্শগত, নীতিগত হবে, এটাই পরমানন্দের আশ! ছিল । কিন্তু ব্যাপারটা! তো! সেই নৈর্যক্তিক স্থুলতামুক্ত থাকছে ন1। ” ৬ -বেশ বলুন, কেমন করে ব্যালান্স শীট মেলানো! যায়। গ্রশ করেন ননীমাধব । কিশলয়বাবু চামড়ার হ্যাগুব্যাগ থেকে বার করেন একটি নীল কাগজের ব্ুপ্রিন্ট । বাঘাডাডা মৌজার সেট্ল্মে্ট ম্যাপ । প্রস্তাবিত গ্রামনগরীর এলাকাটায় একটা লাল দাগ দেওয়।। তার ভিতরে রেল-লাইনের বরাবর সমান্তরাল লম্বা একটি ফালি জমির উপর নীল পেন্সিলের ভোর কাটা। , খি কিশলয় গাঙ্গুলী বলেন- প্রস্তাবিত টাউনশিপ্র সীমানা হচ্ছে এই লাল-পেন্সিলের অংশটা । তার ভিতর এই নীল-পেন্সলের দাগ দেওয়া এই কট! প্লট ডি-রিকুইজিশন করিয়ে দিতে হবে । --কতটা জমি হবে ওটা? _-দাঁগ নম্বর ১১০৭ থেকে ১১১৩, একুনে তেতাল্লিশ একর । _-ত্রেভো ! হেসে ওঠেন ননীমাধব । বেশ, চলুন তাহলে, আর দেরি করা নিরর্৫থক । ওঁরা উঠে পড়েন। সদলবলে রওনা হয়ে পড়েন তারিণীদার আস্তনার উদ্দেশ্বো কিছুই ভালো লাগছিল না পরমানন্দের । কোথায় যেতে পারে মেয়েটা ? সত্যিই কি কুলি-ব্যারাকে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে সে? এতটা নীচে সে নেমে যাবে? সকলেই চেনে তাকে _ডাক্ত।র চৌধুরীর কন্তা বলে। ওখানে গিয়ে য্দি আশ্রয় নিয়ে থাকে তার বিদ্রোহী আত্মজা ভাহলে লোকসমাজে তিনি মুখ দেখাবেন কি করে? মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন, মানুষ করে তুলেছেন । ফিলসফিতে এম. এ. পাশ করেঙ্ছে নীলা । বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন_নীলা রাজী হয় নি। কারাণটা জান! ছিল না এতদিন--সম্প্রতি জেনেছেন । অবিশ্বাস্ত মনে হয়েছিল প্রথমটা । তারপর বুঝেছেন, এ ছুনিষ্াতে বিশ্বাসের অতীত সত্যই কোনও কিছু নেই হয়তো । কৈশোরে যে মেয়েটির দেব-দ্বিজে ভক্তির ছিল বাড়াবাড়ি--পরবর্তী জীবনে সেই হয়ে উঠেছিল নাস্তিকতার কালাপাহাড়। অথচ কী আশ্চর্য-শৈশবে কৈশোরে সে মানুষ হয়েছিল বিজাতীয় আবহাওয়ায় । মারের ও দিদিমার প্রভাবে তার পক্ষে বার- ব্রত-পুজা-অর্চনার দিকে ঝৌকাটা সে যুগেই ছিল অশ্বাভাবিক। কিন্ত তা সত্বেও সে মেতেছিল এ-সব নিয়ে । হয়তো তার এ-সব ব্রতপৃজার জন্য ব্যঙ্বিদ্রপ করা হত বলেই সে বেশী জোর দিয়ে করত সেগুলো । বরাবরই একট! বিদ্রোহের ভাব ছিল তার রক্তে। স্কুলের দিদিমনিদের কাছ থেকে গঙ্জাস্তভোত্র আওড়াতে আওড়াতে বাথরুমে সে জঙ ঢাল ন্গ মাথায়। আজও স্পষ্ট মনে আছে পরমানন্দের_ বাখরমের দরজা ভোৰ -ফরে বেরিয়ে আসত শীতে-কীপুনি-ধরা নীলার কীপা ক্ট-_-মাতর্গজ্গে তৈ ষে ভক্তঃ। আরও একদিনের ঘটনার কথা মনে পড়ছে আজ । ও তখন বোধহয় ফিফথ ক্লাসে পড়ত-_ফিফ ক্লাস তো নয়, ওর! বলত ক্লাস সিক্স । অর্থাৎ ম্যাট্রিক দেবার তখনও বছর চারেক বাকি। একদিন হাউমাউ করতে করতে নীলা এসে হাজির বাপের দরবারে । কী ব্যাপার ? না, দাদা! আমার পুণ্যিপুকুর নই করে দিয়েছে! কি পুকুর ? না, পুণ্যিপুকুর ৷ পুণাপুকুর আবার কি রে বাবা? অনুসন্ধান করতে হয় ব্যাপারটা । তদন্তের পর বোঝা গেল, বাগানের এক কোণায় আছে একট ছোট গর্ত। তার চারপাশে কিছু শুকনে! ফুল, বেলপাতা আর পুকুরের মাঝখানে কিছু মুরগীর পালক-_-মাটিচাপা। দেওয়া । জরুরী আদালত বসেছিল সেদিন বাড়িতে । বাদী নীলা, আসামী অসীম, সাক্ষী নন্দ-বেয়ারা আর বিচারক স্বয়ং পরমানন্দ । আসামী দোষ অস্বীকার করে বপায় মামলাটা বাঁকা পথ ধরল । জবানবন্দিতে আসামী বলে- হ্থ্যা, মুরগী একটা কেটে খেয়েছিল বটে ওর! কজন বন্ধু মিলে । বেওয়ারিশ মুরগী, কার তা জানে না”-উড়ে এসে পড়েছিল বাগানে । তার ঠ্যাং আর পালকগুলো তাড়াতাড়ি সমাধিস্থ করার প্রয়োজন বোধ করেছিল ওরা । তৈরী গর্ত পাওয়ায় পরিশ্রমটা লঘ্ব হয়েছিল তাদের । পুণ্যিপুকুর কি তারা জানে না। তা তো স্বয়ং বিচারকও জানেন না। বাদী তখন বিচারককে বুঝিয়ে দেয় পুণ্যিপুকুরের মাহাত্ব্য । কি যেন শোলোকটা ? মনে নেই এতদিন পরে। খালি. একটা কথা মনে আছে--আমি সতী লীলাবতী !” এ কথট! তার বেণীদোলানো মেয়েটির যুখে শুনে হোহো করে হেসে উঠেছিলেন সেদিন । বিচারকের এই ব্যবহারে আদালত অবমাননার ভয় না করে বাদী সেদিন সভাত্যাগ করেছিল প্রতিবাদে ।-বেশ ! বুঝলাম। তুমিও তাহলে এ দলে! বারবার ওকে ফিরে ডেকেছিলেন। ফেরেনি অভিমানিনী মেয়েটি-_না! শুনব না আমি তোমার কথা। ৪ এ দলে! ০ তুমিও এ দলে ! কোন দলে? সেদিন বালিকাবয়সী নীলা বলেছিল-তুমি এ দলে। অর্থাৎ দাদার মতো নাস্তিকদের দলে--যার! পুণ্যিপুকুরের মাহাজ্যযে অবিশ্বাসী । শুনে হেসেহিলেন তিনি । আরও বছর পাঁচেক পরে এ একই অভিযোগ এনেছিল অসীম ।-_বলেছিল-_তুনিও তাহলে এ দলে!” মর্থাং নীলার দলে, বিপ্লব-অন্ুরাগীদের দলে । সেবার তিনি হেসেছিলেন । আজ আবার নীল৷ বলছে এঁ কথাই - তুমিও এঁ দলে । এবার, এ দন হচ্ছে স্বার্থপর আত্মভো গীদের দল । এবারও হেসে উড্টিয়ে দেবেন পরমানন্দ । চিরদিন তিনি একটিমাত্র দলেই আমআছেন__সত্যপর্মের দলে। বিবেকবুদ্ধি যা ভালো বলে বুঝেছে- তাই সবলে আকড়ে ধরেছেন । একচুলও বিচ্যুত হন নি নিজের দুটমত থেকে । সে কথা নীলা জানে । তাই এ কথাও তার বোঝা উচিত ছিল যে, হুমকি দেখিয়ে কোনও লাভ হাবে না। নীল ঘদি তাকে তাগ কবে এ কুশি-বস্তিতেই গিয়ে আজ আশ্রয় নেয় তো নিক। সেই ভয়ে তিনি পশ্চাদপসবণ করবেন ন! নিজ আদর্শ থেকে । যে পথে বৃহত্তর মানবসমাজের, প্রভৃততর কল্যাণ করতে পারবেন_ফ্েই পথেরই অভিষয।ত্রী আজ তিনি । মেয়ের হুমকিতে সে পথ ত্যাগ করে আসার মানুষ তিনি নন। প্রথম যৌবনে লক্ষ্য ছিল; বন্ধনদশা থেকে দেশম। তকাকে উদ্ধার করবেন। বিদেশী শাসনভার থেকে শৃঙ্খলমুক্ত করবেন দেঁশকে ! একদল বিপ্লববাদীদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ হয়েছিল তার; তখন তিনি কলকাতায় মেডিকেল কলেঙ্গের প্রথম বাধিক শ্রেণীর ছাত্র ও'র বাবা হঠাৎ টের পেয়ে গেলেন । পিতাপুত্রে একটা সম্মুখযুদ্ধ হবার উপক্রম হল। প্রমানশ্দের বাবা কলকাতার এই পরি[শ থেকে ছেলেকে সরিয়ে নেবার জন্যই তাকে বিলাত পাঠালেন । খুশী হয়েছিলেন তাতে পরমনন্দ ৷ দলপতি জ্যে(তির্ময় পাঠক বলেছিলেন -এ শাপে বর হুল, আমরা একটি বিশ্বস্ত লোককে ভারতের বাইরে পাঠাতে চাইছিলাম । ভালোই হবে- তোমাকে দিয়েই কাজটা হবে অথচ খবচ দেবেন ১০ তোমার বাবা! তারপর দ্রুত পরিবর্তন হুয়ে গেল দেশের ইতিহাস। ভারতজোড়া বিপ্লবজাল মূহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। পঞ্জাব থেকে চট্টগ্রাম-_-জাল গুটিয়ে অনেককেই ধরে ফেলল ওরা । কেউ মরল গুলি খেয়ে, কেউ ফাসির মঞ্চে। অত্যন্ত সুকৌশলে অতীত জীবনের ইতিহাসকে লুকিয়ে ফেললেন পরমানন্দ অপ্রকাশের অনালোকে। শতাব্দীর দীর্ঘ পঞ্চমাংশ তার জীবনে রাজনীতির কোনও স্থান ছিল না। ছিল না প্রকাশ্টে-াকস্ত অন্তরের নিভূতলোকে নিশ্চয়ই য়ে চলেছিল বিপ্রোহের ফ্তধারা । হঠাৎ নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গের মতো একদিন পাষাণকার! ভেদ করে বের হয়ে এল সে। উপায় ছিল না। শচীশ নন্দীর ছেলের সন্ধান বলে দেওয়া অসম্ভব ছিল সেদিন তাঁর পক্ষে । পঁচিশ বছর অ।গে গীতা-হাতে দলপতি কাছে যে গোপনীয়তার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা ভাঙতে পারেন নি তিনি। কারারুদ্ধ ছিলেন দীর্ঘদিন। জীবনটাই কেটে যেত সেই অন্ধকারার অন্তরালে ৷ অন্তত সেদিন মনে হয়েছিল, এটাই অনিবার্ধ নিয়তি । দেশ স্বাধীন না হলে এই পরিণতিই ছিল্‌ অবধারিত । জেলে থাকতেই ছুঃসংবাদটা পেয়েছিলেন । প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড়ে তাকে কাবু করতে পারে নি_ পুলিশী অত্যাচারে তিনি ভেঙে পড়েন নি- মাথা সোজা রেখেই গ্রহণ করেছিলেন মিস গ্রেহামের হার্টফেল করার সংবাদ । কিন্তু এ সংবাদটা বজ্রাঘাতের মতো দাউদাউ করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার অন্তঃকরণ ! অনীম শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছিল । | নীলাকে আশ্রয় দিতে চেয়েছিলেন ননীমাধব । মে রাজী হয় নি। এ বাড়ি ছেড়ে সে কোথাও গিয়ে থাকতে পারবে না । মিস গ্রেহাম গত হয়েছেন, অসীম নেই, বাবা নেই, বৈশাখী কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। পুরনো আমলের লোক একমাত্র মাটি কামড়ে পড়ে আছে, নন্দ বেয়ারা। বোধকরি নিয়মমত মাহিন। না পেলেও সে চলে যেত না। দৈনন্দিন আহার না! জুটলেও। এ বাড়ির অনেক সুখহ্ঃখের ইতিহাসে সে ছিল নীরব সাক্ষী । দিদিমনিকে সে ছেড়ে যায় নি। ৭৭ নীলা অসীম ধের্যে নিজেকে সংহত করেছিল । অসীচমর মৃত্যুর পর প্রথম কয়েক মাস সে কেমন আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল । তারপর ধীরে ধীরে সে নিজেকে সংযত করে তোলে । পড়াশুন! শুর করে আবার ॥ বাবা ফিবে আসবেন নাঁ_-আর কেউ নেই তার । নিজের পাঁয়ে উঠে দাড়াতে হবে। ধাপে ধাপে পার হয়ে গেল কলেজের সোপানশ্রেনী ॥ সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে । অন্ধকারার অন্তরাল থেকে যেদিন বার হয়ে এলেন পরমানন্দ, সেদিন নীলাকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অদ্ভুত পরিবতন হয়ে গেছে নীলার । দেহে এবং মনে। অনেক বড় হয়ে গেছে-অনেক ভাবিকে । বুদ্ধ বাপকে সে ছোট্ট শিশুর মতোই টেনে নিল নিজ ক্রোড়ে। ভার অধর্তম।নে নীল।র জীবনযাত্রা সম্বন্ধে কিছু সংব।দ পেয়েছিলেন নন্দ বেয়ারার ক।ছ থেকে, কিছুট। ননীমাধব অথবা দীপকের মারফত । নালা ঘোর নাস্তিক হয়ে উঠেছিল দিনে দিনে । ঈশ্বরের অস্তিত্ব সে স্বীকার করে না। এ বিশ্বত্রক্ম্ডের উপর আনন্দঘন কোনও সত্তার কথা সে স্বীকার করতে নারাজ । যে সর্বশক্তিময় সত্তা তার সুখের সংসারকে ছারখার করে দিয়েছে_-তার বাপকে করেছে নিধাতন - তার নিরপরাধ ভাইকে নিষ্ঠুর নিয়তির নিম্পেষণে দলিত মথিত করে ঠেলে"দিয়েছে অবমাননাকর মৃত্যুর মুখে_ তাকে মঙ্গলময় বলে স্বীকার করে না নীলা, করবে না কখনও | কিন্তু পবমানন্দ তখন একটা অবলম্বন খুঁজছেন। জীবনের তিনপোয়া অংশে ঈশ্বরের কোনও প্রয়োজন বোধ করেন নি। তিনি থকেন ভালো১ না থাকেন বয়ে গেল- ভাবটা ছিল এই । এখন কিন্তু জীবনের সায়াহেঃ এমে একটা কিছু আকড়ে ধরতে চাইছিলেন তিনি। ফিরে এসে বুঝতে পেবেছিলেন, সংসারে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তার অবততমানে নাপ্সিং হোম উঠে যায় নি। ননীমাধবের তত্বাবধানে সেটা চপছে ঠিকই । তার নিজস্ব সংসারেও তিনি বাহুল্যমাত্র । শেয়রের ডিভিডেণ্ড আর বাড়িভাড়া থেকে সংসার- খিংখ্ক্দ ঠিকমতো! রসদ যোগান দের নীলা । কোথাও সংসার তাকে ৭৮ দেখে বললে না__এই যে, এসৌ ! কোনও দায়বক্কি নেই বৃদ্ধের ।. নকালে খবরের কাগজ পড়তে পার, ছুপুরে নিদ্রা যাও না কেন? বিকালে একটু সান্ধ্য ভ্রমণ করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে । রাত্রে-_-ন এই বয়সে বেনী রাত জাগা ভালো নয়-_সকাল সকাল খেয়ে শুয়ে পড়ো বরং। ব্যরস্থাটায় প্রথমে আহত বোধ করেছিলেন । তারপর মনে হল- এই তো ছুনিয়া। একদিন তিনি ছিলেন এ সংসারের কেন্দ্রস্থলে__তিনিই ছিলেন এর কর্ণবার। তার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে গড়ে উঠেছে নতুন বাবস্থাঁ-এই তে! স্বাভাবিক । আবার কেন সে মতুন ব্যবস্থায় আঘ।ত হানবেন উনি ? পরমানন্দ অন্তরে অন্তরে বিদায় নিলেন সংসার থেকে । এই সময়েই তিনি দীক্ষা নেন গুরুদেবের কাছে । উদ্দাসীন সন্গ্যাসী মানুষ । সাক্ষাৎ পান হরিদ্বারের আশ্রমে । কোনও জাগতিক বন্ধন নেই। দৃ্নি তার কোন ছুনিরীক্ষ দিগন্তে ফেরানো । তার সঙ্গে কথ! বলে অদ্ভূত সান্ত্বনা পেলেন পরমানন্দ__অভিভূত হয়ে পড়লেন । মনে হল ইনিই তাঁকে পথ দেখাবেন । গুরুদেবের উপদেশমতো! সাধনমার্গের পথে শুরু হল তার নূতন অভিযাত্রা । অপূর্ব আনন্দের আন্বাদ পেলেন ঠারই প্রসাদে। নৃতন লক্ষ্যের দিকে নৃতনতম অভিযান । জানতে হবে ভাকে--ধাকে পাওয়ার পর অন্য সমস্ত পাওয়াকে মনে হয় তুচ্ছ অকিঞ্চিংকর। গুরুদেবের আশ্রম শহরের অপর প্রান্তে । গুটি তিন- চার অনুরাগী শিষ্য আছে-__তাদের আছে অনুসন্ধিংসা, আছে নিষ্ঠা নেই আড়ম্বর, নেই উপকরণের বাহুল্য । সন্ধ্যাবেলা ওদের সঙ্গেই এসে বসতেন গুরুদেবের কাছে । বর্ষায় ও শীতে খড়ে-ছাওয়া মেটে ঘরের প্রদীপজ্বালা আধো-অন্ধকারে ; অন্যান্য খতুতে বাগানের ছাতিমগাছ* তলায় । গুরুদেবের কণ্ঠে ছিল ঈশ্বরদত্ত মাধুর্ব-_গানই করুন কথকতাই করুন, অথবা পাঠই করুন, গীতা অথবা উপনিষদ্_-তন্মর হয়ে শুনতে শুনতে অভিভূত হয়ে পড়ত শ্রোতা । সংস্কৃতটা ভালে জান! নেই পরমানন্দের__তাই যখন ভাম্য না করে শুধু ব্রহ্মনুত্র আওডে যেতেন, মর্ঘগ্রহণ হত না-কিন্ত অভিভ্থত হয়ে থাকতেন তখনওএ ছন্নছাড়া ৭৪ জীবনে শান্তি পেলেন তিনি । রঃ নীলাকে তিনি নিয়ে আসতে চাইতেন এই স্থৃশাস্ত পরিবেশে । পরমানন্দ জানতেন, নালার মনের ছুঃখের দাহন তাই তাকেও আনতে ইচ্ছা হত সঙ্গে করে৷ নীল! রাজী হত না! এ নিয়ে মতান্তর হয়েছিল পিতাপুত্রীর, মনান্তর হতে পাবে নি। কারণ সংসারের চতুঃসীমায় অপরের মতকে সহা করবার যে অলিখিত আইন ছিল, সেটা অতিক্রম করে নি কোনও পক্ষই । কালাপাহাড-কন্তা ও প্রহ্ন।দ-পিতার মধ্যে কোনও ফাটল দেখা দেয় নি এইজন্য ! এই কারণে একজন অপরের সান্নিধ্য ত্যাগ করার কথ! কল্পনা করেন নি। দিন কেটে যায়। হঠাৎ একদিন টপলব্ধি করলেন পরমানন্দ-ব।ন প্রস্থ নেবার মতো মানসিক প্রস্ততি হয় নি তার । জাগতিক প্রয়োজন তার ফুরিয়ে যায় নি। কর্মযোগ ত্যাগ করে ভক্তিযোগে তাকে পাওয়।র চেষ্টাটা তার ঠিক হয় নি। দেশ স্বাধীন হয়েছে, সফল হয়েছে তাদের স্বপ্প ; কিন্তু কই, দেশজননীর অভাব অনটন তে দূর হয় নি। অনাহার, অশিক্ষা স্বাস্থ্যহীনত। তো তেমন করেই চেপে ধরে আছে হতভাগ্য দেশের কণ্ঠনালী। তবে বৈরাগাসাধনের পথে কেন মুক্তির সন্ধানে তিনি মুমুক্ষু আজ? নানান প্রতিষ্ঠান থেকে এই নির্যাতিত দেশকর্মীটির আহ্বান আসতে শুরু করল । হিন্দ্র লৎকার সমিতি হবে, মেয়েদের ফুল হবে, হরিজন পল্লীতে প্রাথনিক বিগ্ধালয়ের ভিত্তি গাড়া ' হবে সবাই ডাকে পরমানন্দকে । তর গলায় পরিরে দেয় ফুলের মালা--প্রশস্তি পড়ে শোনায় । তাকে পুরোভাগে রেখে চলতে চায় ওরা । এ আহ্বানকে তিনি উপেক্ষা করবেন কিসের জোরে? ক্রমে ক্রমে কখন বন্ধ হয়ে গেল গুরুদেবের আশ্রমে যাতায়াত--নিজের অজান্তেই নেমে এলেন তিনি সমাজসেবার কাজে” সেখান থেকে আর এক ধাপ--সক্রিয় রাজনীতিতে । এই নময়েই বাটন আযাণড হ্ারিস কোম্পানির একগোছা শোয়ার, চলে এল তার হাতে । পরমানন্দ বুঝতে পেরেছিলেন শিল্পের উন্নয়ন ন! |. করতে পারলে অর্থনৈতিক বন্ধনদশা ঘুচবে না দেশের । আত্মনিয়োগ করলেন তিনি শিল্পক্ষেত্রে ! একনিষ্ঠ সেবায়, অনলস পরিশ্রমে অনতিবিলম্বেই অনেকগুলি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অঙ্গাল্গিভাবে যুক্ত হয়ে পড়লেন । প্রতিষ্ঠা হল, শুধু নির্ধাতিত দেশকমী বলে নয়-_ভূতপুব রাজবন্দী বলে নয়-- প্রতিষ্ঠাবান শিল্পপতি বলে। কিন্তু একটা কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে-__এট! ভুলতে পারেন নি। নীলাকে সংসারী কর! হয় নি। বয়স হয়েছে মেয়ের শিক্ষাও শেষ করেছে সে। মনোনীত পাত্রটি অবশ্য বরাবরই রয়েছে হাতের মুঠোয় । শুধু হু হাত এক করে দেওয়া । শুধু পরমানন্দ আর ননীমাধবই নয়-_ নীলাও নিশ্চয় পছন্দ করে ওকে । না হলে এ দীর্ঘদিন ওর সঙ্গে কখনও এত ঘনিষ্ঠভাবে মিশত না । বন্ধু বলতে একমাত্র সেই আসে নীলার কাছে। কথাটা একদিন পাড়লেন তিনি | নীল] শুধু বললে--সে হবার নয় । _-হবার নয় ! কেন? অমতটা কার ? তোমার ন! দীপকের ? __-ওটা অবান্তর প্রশ্ন । দীপক জানে তার সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়া অস্ভ্ব | এর পর দীপককেই প্রশ্নটা করতে হয়েছিল । স্পষ্টই তাকে জিজ্ঞাস! করছিলেন : তুমি কি নীলাকে যোগ্য মনে কর না ? জবাবে দীপক বলেছিল- নীলাকে অযোগ্য মনে করবে এমন পুরুষ মানুষ তো কই আজও নজরে পড়ল না । কিন্ত এ হবার নয় জ্যেঠাময়শাই। _-হবার নয়! কেন? --কারণ নীলার মন অন্যত্র বাধা আছে । পরমানন্দ চুপ করে গিয়েছিলেন । নীলার মন অন্যত্র বাঁধা আছে! অর্থাৎ নীল! অন্য একটি যুবকের প্রতি আসক্ত। কে সে? সমস্ত পরিচিত ছুনিয়া তন্নতন্ন করে হাতড়াতে থাকেন । না, সম্ভাব্য কাউকেই মনে পড়ে না। কিন্তু তাই বা স্থিরনিশ্চয় হন কি করে তিনি? তার দৃর্ির অস্তরালে নীলা অতিবাহিত করেছে জীবনের রক্তধাতুর দিনগুলি । কে জানে, কোন রক্তিম ইতিহাস লেখা হয়ে গেছে সেই ৮৮৯ জাহা--৬ জীবনবসন্তে | পরমানন্দ কেমন করে জানবেন জীবনেন্ধু, কোন মধুপ এছ্ে্ছিল গোপনে সে যৌবনের মৌবনে । আজ আর ওটা অজান। নয়! আজ তিনি জানতে পেরেছেন কার প্রত্যাশায় শবরীর প্রতীক্ষায় দিন গুণছিল তার আত্মজ! ; কিন্তু এ যে অসম্ভব আজ ! দ্ু'টেকুডুনীর ছেলের সঙ্গে কুচবরণ রাজকন্তের বিবাহ হত যে যুগে তা গত হয়েছে ঘিয়ের প্রদীপজ্বল। সন্ধ্যাবেলা- গুলোর জঙ্গেই | মিরাব্রএর যুগ এ নয় | জীবনটা নাটক নয়__ নভেল নয়। অপম্তবের স্থান নেই জীবনে । আর সবচেয়ে বড় কথা তফাতটা অর্থনৈতিক নয়__তা' হলে সহজেই সমাধান করতে পারতেন, জাতের নয়--তাহলে উপেক্ষা করতেন । বাধাটা শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, জীবনদর্শনে, বাধাট! নীতিগত | ওরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের বাসিন্দা । একজন কারখানার সর্বশক্তিমান ডিরেকটার-তনয়া অন্যজন সেখানকার পদচ্যত মেহনতী মানুষ চুরির দায়ে যাকে বরখাস্ত করা হয়েছে ! ছিছিছিছি! পরমানন্দ প্রায় জোর করেই নেমে গেলেন মাঝপথে । ননীমাধবকে বললেন, তারিণীদার কাছে গিয়ে আলাপ-আলোচনা চালাতে । তিনি গুরুদেবের আশ্রমটা ঘুরে একটু পরেই আসবেন ওখানে। ননীমাধব প্রথমটা গীড়াঁলীড়ি করতে থাকেন সঙ্গে যাবার জন্য_ কিন্ত একগুয়ে বন্ধুর প্রকৃতি তার জানা ছিল ভালে! রকমই । তাই শেষ পর্যস্ত ধলেন _ন। হয় চলে! তোমাকে আশ্রমে নামিয়ে দিয়ে যাই | না, তাতেশ্ড আপত্তি পরমানন্দের । এটুকু পথ হেঁটেই যেতে পারবেন তান । অগত্যা পাঁকা রাস্তা থেকে কাচা মেঠো রাস্তাট! যেখানে বাক ঘুরে যাত্রা করেছে এঁ নির্জন আশ্রমটির দিকে সেই পথের মোড়ে তাকে নামিয়ে দিয়ে ওরা চলে যান । মুক্তির নিঃশ্বাস পড়ে একটা । একটু নির্জন অবকাঁশই খু'জছিলেন এই মুহুর্তটিতে । ভালোই হয়েছে। নীলা যদি এখানে এসে থাকে ভালোই- না হলেও দীর্ঘদিন পরে আজ গুরুদেবের সঙ্গে আলো চনা ৬. করে মনট। হালকা! করে নেবেন। এই শান্ত মনোরম বাতাবরণে মনটাকে ল্লিগ্জ করে নেবেন। নীলা কি এখানে এসেছে? সম্ভবত এঁর নীলা এখানে আসবার মেয়ে নয়। সে সহা করতে পারে না'ও'র গুরুদেবকে । একদিন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই প্রায় জোর করে ওকে নিয়ে এসেছিলেন গুরুদেবের কাছে । আশা করেছিলেন ও'র প্রভাবে হয়তো! অবিশ্বাসের অচলায়তন ভেঙে পড়বে নীলার তা! কিন্ত বাস্তবে হয় নি। রীতিমতো সমকক্ষের মতো তর্ক করেছিল শীলা, শুধু তর্ক নয়__খাঁনিকটা উপেক্ষা, খানিকটা ব্যঙ্গও ছিল সেই 'তকের সঙ্গে। গুরুদেব অবশ্য কিছু মনে করেন নি- কিন্তু লজ্জায় মাটিরসঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন পরমানন্দ | বেল। বারোটা বাজে । অন্যমনস্ক হয়ে কাচা সড়কটা ধরে পায়ে পায়ে চলেছেন তিনি আশ্রমের দিকে । আশপাশে নজর পড়ল হঠাৎ। আশ্চর্য মিষ্টি লাগল পরিবেশটা । শহরতলীর মাধূর্ধে মোহিত হায় গেলেন যেন । স্তর্ধ মধ্যাহ্নের অভ্ররৌদ্র বন্দী হয়েছে ঘন কাঠালপাতার ঠাস- বুনানিতে__মাঝে মাঝে পথের ধূলায়' পড়েছে পাতার ফাক দিয়ে টুরি- করে আসা টাকা-টাকা রোদের ছোপ । ধুলোর গন্ধ এসে মিশেছে বনতুলমীর সৌরভে ৷ পথেব ধারে নয়ানজুলিতে বদ্ধ কুলের ঘিরে রঙের কাদায় গ এলিয়ে নিশ্চিত আবেশে পড়ে আছে একটা মিশকালো। মোষ । রাস্তার ওধারে মেঠো ঘরে ঘুম নেমে আসছে কোনও দামাল ছেলের আধবোজা চোখের পাতায়-_গাড় কালে নিথর ঘুম । ওর মায়ের সুরেলা কণ্ঠের ঘুমপাড়ানিয়ার সঙ্গে সঙ্গত জমিয়েছে বিরলপত্র বাবল!। গাছের স্ুঘুটা। এমন কিছু বিরলসন্ধান তুর্লভ দৃশ্ট নয়। পথের ধারে এমনি করেই চিরকাল ফুটে থাকে এ-দৃশ্ট শহরতলীর দেশে । তবু যেন হুন্ু করে উঠল ওঁর মনের মধ্যে । কেমন যেন বঞ্চিত মনে হল নিজেকে। কে যেন এই পল্লীর শাস্ত দৃশ্টটিকে সরিয়ে রেখেছিল তার দৃষ্টি থেকে । ক্রুতগতি মোটরের জানলায় এ দৃশ্ট ধর! দেয় নি এতদিন তার কাছে। লতি এতদিন উপকরণের ছুর্গে অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি- এখবর্ষের ঠলি এঁটে দিয়েছিল কে যেন তার চোখ ছুটিতে। পায়ে পায়ে উনি এসে পৌছলেন আশ্রমে । গুকদেবের সাঙ্গ দেখা হল না কিস্ত। তিনি সকালের ট্রেনে কোথায় যেন চলে গেছেন। কোথায় গেছেন, কেউ বলতে পারল না । যাবার আগে না কি একখান! চিঠি লিখে গেছেন পরমানন্দের নামে । চিঠিখানাও পেলেন ন!। সেখানা নিয়ে নাকি ছোট মহার।জ সকাল বেলাতেই বাব হয়েছেন তাকেই চিঠিখানা পৌছে দেবার জন্য | এখনও ফি.বধ আসেন নি। পরমনণ্দকে ম্বগচর্মের একটি আসন এনে দিল আশ্রমেব একটি ঠত্য | গুরুদেবেব সেধার জন্য তিনিই বাহাল করেছেন ছেলেটিকে-_ ম।হিনাও তিনিই দেন । মার কেউ নেই আশ্রমে । উনি বসে অপেক্ষা করতে থাকেন । যদি ফিবে আসেন ইতিমধ্যে ছেট মহাবাজ। সৌম্য শান্ত আশ্রমেব বাতাস । ছোট্র কট! পগান পাঁচিল- বা আঙিনায় । ভা, পাচিপিটা ভিনিই খবচ কনে গেঁথে দিয়েছেন । সিমেন্ট দিয়েই গেঁথে দেখার ইচ্ছা ছিল-কিস্ত কলে! বাজাব ছাড়া € দ্ববাটি পাওয়ার উপায় নেই | কারখানার এক্সটেনশনটার বেলায় যা করেছেন করেছেন--তাই বলে এ ভাবে জোগাড়-করা সিমেন্ট দিয়ে তো তিশি আশ্রমে পাঁচিল গাঁথতে পাবেন না। তাই চুন-স্ররকি দিয়েই গেঁথে দিয়েছেন প্রাীর। কি যেন ভাবছিলেন ! হ্যা, বাগান-_ সুন্দর ধুলেব বাগ।ন । পুজার ফুলের জন্য অস্থুনিধা হয় না আর গুরুদেবের | বড্ড গরম ল!গ্ছে! ব্জিলী নেই আশ্রমে- সুতরাং ফ্যানও নেই। পরমানন্দ ইলেকট্রিক কনেকশন করিয়ে দ্রিতে চেয়েছিলেন_-কত আর খরচ হত? আর হত তো হত। পরমানন্দের মতো শিষ্য থাকতে গুকদেব কষ্ট পাবেন গরমে ? কিন্ত গুরুদেবই রাজী হন নি। পরমীনন্দ খব্দরের পাঞ্জাবিটা খুলে আরাম করে বসেন। এই আশ্রমেও আজকাল আর আসা হয়ে ওঠে না তার। অথচ বছর ৮৪ কয়েক আগে ঝডবৃত্টিমঘিত কোনও একটি সন্ধ্যাবেলায় যদ্দি এখানে না আসতে পারতেন, তো৷ মনে হত একটি দ্রিন বৃথা গেল । আর আজ বোধহয় কয়েক মাস পর আসছেন তিনি এ আশ্রমে ৷ সরে গেছেন, উপকরণের ছূর্গে বন্দী হয়ে পড়েছেন নিজের অজান্তেই । শেষ কবে এসেছিলেন এ আশ্রমে ? হ্যা, মনে পড়েছে, নমিনেশন যেদিন পেলেন সেদিন এসেছিলেন গুরুদেবকে প্রণাম করতে । মনে পড়ল সেদিনকার ঘটনাটা ৷ নেদ্দিন নিভৃতেই পেয়েছিলেন গুরুদেবকে, জনাস্তিক অবকাশে । সামনের এ যে তালাবন্ধ ঘরট] দেখা যাচ্ছে এখানে একটা প্রদীপ জ্বেলে বসে কি একখানা গ্রন্থ পড়ছিলেন তিনি । পরমানন্দ এসে বসলেন তার পায়ের কাছে, প্রণাম করলেন । গ্রন্থখানি মুড়ে রেখে গুরুদেব জিজ্ঞান্ু নেত্রে তাকালেন শিষ্যের দিকে । লজ্জিত বোধ করেছিলেন সেদিন সে-দৃ্টির সামনে । নীরব দৃষ্টির জিজ্ঞাসা-_কি ব্যাপার ? দীর্ঘদিন পরে এমন হঠাৎ? পরমানন্দ বলেছিলেন নমিনেশন তিনিই পেয়েছেন । এবার ভোটযুদ্ধে নেমে পড়বেন । তাই সংগ্রামে সক্রিয় অংশ নিতে যাবার আগে আশীবাদ ভিক্ষা করতে এসেছেন । মনে আছে, গুরুদেব হেসে বলেছিলেন--হঠাৎ আাসেম্রিতে যেতে বাসনা হল যে? সত্য কথাই স্বীকার করেছিলেন তিনি । বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রসারিত করে দিতে চান নিজ কর্মক্ষেত্র । এই শহরের ছোট গন্ভীর চতুঃসীমায় তার দেশসেবার একাস্তিকতাকে তিনি সীমিত হতে দেবেন ন1। সমগ্র দেশের ভালোমন্দ নির্ভর করে যে আইনসভার নির্দেশে, সেখানকার মণিকার হবেন তিনি--সে আহ্বান তিনি শুনতে পেয়েছেন-_-আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজের নিমন্ত্রণ এসেছে আরও বড় ধরনের কাজ ! _-এখানকার কাজ কি তোমার শেব হয়ে গেছে ? কি শিশুর মতো সরল প্রশ্ন! কাজের কি শেষ আছে; যে শেষ হবে? এখানকার কাজ তো. আছেই--আরও গুরুতর কাজের মধ্যে ৮্ধ ডুবে থাকতে চান তিনি । কর্মযোগী পরমানন্দকে দেশ ভাকছে নির্দেশ দেবার জন্ত, সে আমন্ত্রণ এসে পৌছেছে তার কর্ণকৃহরে ৷ তাই রাজী হয়েছেন ইলেকশনে দীড়াতে । নূতন যাত্রীপথে অভিষাত্রার মঙ্গলমুহুর্তে তিনি উপদেশ নিতে এসেছেন গুরুদেবের পায়ের তলায় বসে। উপদেশ দিয়েছিলেন গুরুদেব । কিন্তু খুব ভালে! লাগে নি সেদিন কথাগুলি । বস্তুত তিনি আহতই হয়েছিলেন । কি ভাবেন আসলে গুরুদেব ! হঠাৎ ও-কথ। বললেন কেন? পরমানন্দের অস্তরবাসী নিলিপ্ত ত্যাগব্রতীর স্বরূপটা কি গোপন রইল গুরুদেবের মর্মভেদী দৃষ্টিতেও--তিনি কি দেখলেন শুধু অহমিকায় ভর মোহান্ধ একজন ক্ষমতালিগ্প, সাধারণ ভোগীকেই ? সেদিন তিনি নীরবে উঠে গিয়ে- ছিলেন প্রণাম সেরে খানিকট! আহত হয়েই । আজ মনে হয়, কিছুটা প্রয়োজন বোধহয় ছিল তার সেই উপাখ্যান পরিবেশনে । নীলাও তো এ একই কথা বলে গেল । _স্বার্থ বলতে আমি স্থুল কিছু বে!ঝাতে চাইছি না বাবা । টাক পয়সা বাড়ি-গাড়ি হচ্ছে স্থল স্বার্থ-হয়তো সে লোভকে তুমি জয় করেছ__করেছ কিনা তা তুমিই জান! আমি স্বার্থ” শব্দটা] অন্য অর্থে ব্যবহার করেছি । অপরের চোখে নিজেকে মহত্রূপে প্রতিপন্ন করাও স্থার্থেরই অভিব্যক্তি । প্রতিপত্তি, প্রতিষ্ঠা, স্থনাম__এগুলে1ও কি স্বার্থ নয়, অহমিকার প্রকাশ নয়? গুরুদেবের কাহিনীটা! আবার মনে করতে লাগলেন । না, ভোলেন নিতিনি। ভালো কথক ওর গুরুদেব। সামান্য উপাখ্যানও বাচন- ভঙ্গির গুণে হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে ওর শ্রীমুখে । সেদিনকার গল্পটা! মনে পড়েছে । বলেছিলেন- প্রজাপতি ব্রহ্মার আদেশে বিশ্বকর্ম পুথিবী স্যপ্টি করলেন । ফুল-ফল-পশু-পক্ষীতে সুন্দর সুষমায় পূর্ণ হয়ে উঠল স্থষ্টি। ক্রমে সজন করলেন মানুষ । ষোলে! কলার ষোড়শ কল! যেন! নিপুণ চিত্রকর যেমন অনিমেশ নয়নে চেয়ে দেখে তার সম্ভ- শেষ-কর] আলেখা--তেমনি এক লৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখলেন বিশ্বকর্ম। ১০১৬ তার স্গ্সমাপ্ত শিল্পকর্মের দিকে । মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি । কী অপূর্ব তার এ স্থ্টি! তুষারশ্ুত্র ধ্যানস্তিমিত গিরিশুঙ্গমালার স্তব্ধ গাস্তীর্য, সমুদ্রমেখলা বেলাভূমির ব্বর্ণসম্তার, গহন অরণ্যের ফোগমগ্নতা, মৌন শান্ত জনপদ-_অপূর্ব, অপূর্ব ! মানুষের মুখে মাধুর্য, বুকে স্েহ-প্রেম- ভালোবাসা । মায়ের বুকে মধুক্ষরা নেহধরা, বাসরঘরের দ্বারপ্রান্তে নববধূর লঙ্জাজড়িত চরণক্ষেপ, আর শিশুর নিষ্পাপ সরল দুটি ! তার স্থষ্ট জগৎ বুঝি স্বর্গকেও অতিক্রম করে গেছে ! নিজের প্রভূত সাফলো বিশ্বকর্মীর মনে দেখ। দিল অহঙ্কার । মনে হল, যে শিল্পচাতুধ তিনি দেখিয়েছেন তা বুঝি স্বয়ং পরিকল্পনাকার প্রজাপতি ব্রহ্মার কল্পনাকেও অতিক্রম করে গেছে । জগৎ স্য্টির কাজ স্ুুসম্পন্ন করার সংবাদ নিয়ে বিশ্বকর্মী এলেন ব্রহ্মলোকে-্বয়ং ব্রহ্মার কাছে। ভগবান প্রজ।পতি বললেন- স্থ্টি শেষ হয়েছে ? করজোে বিশ্বকর্মী নিবেদন করলেন স্থ্যা প্রভু । আমার শিল্পকর্ম অসম্পুর্ণ থাকতে আমি কখনও তৃপ্ত হতে পারি না । কোথাও কোনও খুতরাখি নি আমি । শ্রেষ্ট সাধনায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি । আমাকে আমশীবাদ করুন । ব্রহ্মা বললেন_যুঢ় ! এত অল্পেই তোমার অহঙ্কার হয়েছে ! মোহান্ধ হয়েছ বলে এতদূর থেকে এ শিল্পকর্মের দৌষক্রটি তোমার নজরে আসছে না, তাই এঁ পুথিবীতেই তোমাকে নির্বামিত করলাম । যার্দের তুমি গড়েছ_-তাদের মধ্যে গিয়ে এবার জন্ম 'নাও । তাদের জীবনের অপূর্ণতার বিষয়ে অবহিত হও--সেট! সংশোধনের চেষ্টা করো । বিশ্বকর্মা মর্মাহত হালেন ; আর্তকণ্ঠে প্রশ্ন করেন, তা হলে কি কোন দিন আর স্বর্গরাজ্য ফিরে আসতে পারব না? _যেদিন 'অহংজ্ঞান থেকে তোমার মুক্তি হবে যেদিন বুঝতে পারবে নিজের ক্ষমতার সীমানা আর জাগতিক ছুঃখ অতিক্রমণের উপায়, সেদিন স্বর্গরাঁজ্যের দ্বারে এসে করাঘাত কোরো । আমি তোমায় পরীক্ষা করব। উত্তীর্ণ হলে ফিরে পাবে ব্বর্গবাসের অধিকার । নির্বাসিত হলেন বিশ্বকর্মী। জন্ম নিলেন সাধারণ মানুষের ঘরে । ৮৭ দেখলেন তার স্থষ্ট জগতে কোথায় কোথায়, অপূর্ণতা রয়েছে । রোগ- শোক-মৃতাকে দেখলেন, লোভ-হিংসা-কামকে উপলব্ধি করলেন। ংসারের শত ছুঃখকষ্টের মধ্যে জাগতিক যন্ত্রণার উপলব্ধি হল ভার । দূর থেকে যা মনে হয়েছিল টাদের মতো সুন্দর, কাছে এসে দেখলেন মেটা সমতল নয় ।মোটেই-সেখানে আছে ইবড়োখাবড়। গর্ত, প্রতি পদক্ষেপে দের কলঙ্ক ! ৃ বিশ্বকর্মা অত্যন্ত লজ্জিত হলেন। কঠিন তপন্তায় আত্মনিয়োগ করলেন। এই রোগ-শেক-জরা-মৃত্যুর বন্ধন থেকে যুক্তির উপায় উদ্ভাবনে কঠিন তপশ্চর্ধায় নিমগ্ন হয়ে রইলেন। দীর্ঘ তপস্তার পর উপলব্ধি হল__পরমত্রদ্দের পদে পূর্ণ আত্মনিবেদন করতে পারলেই এগুলি থেকে মুক্তি সম্ভব | ফিরে গেলেন তিনি স্বর্গদ্ধারে। করাঘাত করলেন.সিংহদরজায়। ভিতর থেকে প্রশ্ন হল-_কে তুমি? / বিশ্বকর্মী বললেন_-আমি বিশ্বকর্মা, পৃথিবী স্বজন করেছি । আমার সে স্গ্রিকার্ষের অপূর্ণতার কথা৷ আমি জানতে পেরেছি । সেই অপূর্ণতার হাত থেকে মুক্তির উপায়ও উপলব্ধি করেছি। দ্বার খুলুন প্রভু । অবরুদ্ধ ব্বর্গদ্বার উন্মোচিত হল নাঁ। বিশ্বকর্মা বিশ্মিত হলেন। নিশ্চয় কিছু ভূল হয়েছে । উত্তীর্ণ হতে পারেন নি পরীক্ষায়। ফিরে এলেন তিনি। কঠিনতর তপস্তা! করলেন । অনল ত্যাগ করলেন_-শুধু বাযুভূক হয়ে সাধনায় মগ্ন রইলেন এক কল্পান্ত। ধীরে ধীরে নিজের ভ্রান্তি আবার অনুধাবন করলেন। হ্যা, ভূলই হয়েছিল তার। আমি পৃথিবী স্বজন করেছি এ জ্ঞান তো তখনও ছিল ! আমি কে? আবার ফিরে গেলেন স্বর্গের প্রবেশতোরণে । করাঘাত করলেন ঘ্বারে। ভিতর থেকে প্রশ্ন হল--কে এসেছ ? বিশ্বকর্মা! বললেন : আমি বিশ্বকর্মা-আপনি আমাকে নিমিত্ত মাত্র করে যে পৃথিবী স্জন করেছেন--তার ভিতর আমার ভূলে কিছু ৬৮ ক্রি রয়ে গেছে। তাই আমার দোষে আমার স্ষ্ট জগতে দেখে 'এলাম রোগ-শোক-জরা-মৃত্যুর মন্ত্রণা । কিন্তু সে যন্ত্রণার হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার পথের সন্ধান আমি পেয়েছি প্রভু । দ্বার খুলুন । দ্বার অবরুদ্ধই রইল । স্তম্ভিত হলেন বিশ্বকর্মী। একী! এখনও কি পূর্ণজ্ঞান হয্ম নি তার ?. ফিরে এলেন মত্যে। এরপর যে তপশ্চর্ধী করলেন তার আর তুলনা নেই। বায়ু পর্বস্ত গ্রহণ করলেন না। নিবিকল্প সমাধিতে ধ্যানমগ্ন হয়ে রইলেন যুগযুগান্ত । কঠিনতম যোগীভ্যাসে জ্ঞানমার্গের শিখরচুড়ায় উঠলেন অবশেষে । বুঝলেন, কোথায় ভুল হচ্ছিল। যে জাগতিক ছুঃখকষ্টরকে তার শিল্পকর্মের ক্রটি বলে মনে হয়েছিল-_ আসলে তা-ও বিশ্বনিয়স্তার সুপরিকল্পিত জগৎব্যবস্থার একটি পর্যায়। মায়ায় বদ্ধ মানুষ, অহংবোধের বেড়াজালে আবদ্ধ জীব, এগুলিকে দুংখকষ্ট বলে মনে করে মাত্র । অসীম নিয়ে ধার 'কারবার তার হিসাবে লাভও নেই, লোকসানই নেই-_ন1 যোগ, না বিয়োগ--কিছুতেই তাঁর কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। পূর্ণের পুজি থেকে গোটা পূর্ণ বিয়োগ দিয়ে দিলেও নেই পূর্ণই অবশিষ্ট থাকবে । তিনি বুঝলেন শুধু আনন্দই আছে-__ আর কিছু নাই। তবে সে আনন্দের মূল উৎস-_-সেই সচ্চিদানন্দই ! বিশ্বকর্মা এবার দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে এসে দীড়ালেন স্বর্গছারে । করাঘাত করামাত্র ভিতর থেকে অর্গল মোচনের শব্দ শোনা গেল। আশান্বিত হলেন বিশ্বকর্ী। দ্বার কিন্তু খুলল না; ভিতর থেকে প্রশ্ন হল-_ কে এসেছ? _ আমি বিশ্বকর্ম। ! প্রভু, আমি মুক্তির উপায় খুঁজে পেয়েছি। এবার আর কোনও ভুল নাই। শুনুন সশব্দে অর্গল পুনরায় বন্ধ হয়ে গেল । দূরে মিলিয়ে গেল কার ষেন পদধ্বনি। বিশ্বকর্মীর বক্তব্য পর্যস্ত শুনলেন না এবার প্রজাপতি ব্রহ্ম! ! পরমানন্দ আর স্থির থাকতে পারেন নি। ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করে” ছিলেন_কেন? এবার কী ভূল হল বিশ্বকর্মা? হেন্দে বক্তা বললেন- সেই কথাই ভাবলেন বিশ্বকর্মা। কোথায় ৮৮০ তুল হচ্ছে? কেন প্রশ্নের সমাধান পর্যস্ত শুনতে রাজী হলেন না প্রজাপতি ব্রহ্মা? ধীরে ধীরে দ্বিতীয়ার চাদ্দের মতো একখানি হাসি ফুটে উঠল তাব ওটপ্রাস্তে। পুনরায় মাঘাত করলেন তিনি দ্বারে। যথানিয়মে ভিতর থেকে প্রশ্ন হল : কে এসেছ ? বিশ্বকর্মী হেসে বললেন : প্রভু । তুমি এসেছ! মার কিছু বলতে হল না। দ্বাব খুলে গেল ! পবনানন্ ন্যগ্র উদ্দীপ্ত ছু চোখ “লে বনে থাকেন । গুরুদেব বলেন : পরমা নন্দঃ এই হচ্ছে অহং থেকে মুক্তি । বিশ্বকর্মা শেষ পধায়ে উপলব্ধি করেছিলেন যে, তিনি উপলক্ষ মাত্র, তিনি অতি অকিঞ্চিতকর, সমস্তই সেই অনাদি-মনন্গেব লীলা । এ জগৎ-ব্রহ্মাণ্ডের সাফল্যেও তান কৃতিত্ব নেই-_ এব শাপাত দ্বোষক্রটিত্েও নেই তার লজ্জিত হবার ,কান€& কারণ। এ পযন্ত তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন_- বাকি ছিল এটুকু বোঝা যে, তিনি নিজেও এ ্থপ্টিকর্তারই একটি শিল্পকমম । তিনিও এ জগৎবাপাবের একটি নিমিত্তরূপে ক্যষ্ট হয়েছেন এ প্রজাপতি ব্রহ্মাব ইচ্ছায় । তিনিও তাই তারই অংশ । তাই যখন “আমি এসেছি” একভ্রান্তি পধন্ত অপনে।দিত হল-_-তখনই তিনি ন্বর্গ- বাজো ফিবে যাবাব অধিকার "পলেন। পবমানন্দ' এই হচ্ছে জ্ঞানযোগীর শেষ শিক্ষা | এই হচ্ছে অং" জ্ঞান থকে শ্রুকৃত যুক্তি _-সাহেল। তন্দ্রার ঘেব থেকে জেগে ওঠেন যেন পরম 'নন্দ : কে? _এটা খেয়ে নিন স্তাব ! নি ওটা * _-ড(বের জল। আশ্রমের “ষ ভৃতাটি ওকে মৃগচমের আসনে সমাদর করে বসিয়েছিল, মাসাস্তে যে তার কাছ থেকে নিয়ে যায় মাহিনা, সেই ছেলেটিই নিয়ে ৮ এসেছে কালো একটি পাথরের গেলাসে ডাবের জল । অত্যন্ত তৃষা পেয়েছিল। তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে ওটা গ্রহণ করেন । পানীয়টিতে শরীর শীতল হল । হঠাৎ হাসি পেল পরমানন্দের । তার পরিধানে খন্ধরের ধুতি- পাঞ্জাবি- পায়ে বি্ভাসাগরী চটি-_ুগচর্মের আসনে তিনি বসে আছেন এক সন্ন্যাসীর আশ্রমে । তবু তাঁর পরিচয় হল “সাহেব” স্যার" | উপকরণের যে ছুর্গে তিনি বন্দী হয়ে আছেন এত সহজে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না । শুধু বাইরের খোলসটাকে বদলালে যে কোনও লাভ হবে না-_এই শিক্ষাই যেন দিতে এসেছিল এ চাকরটি, একগ্লাস ডাবের জল নিয়ে। ধার আশ্রমে এসে বসে আছেন এ তারই সংঘটন। আনন্দস্বরূপ মাধবের পায়ে পুর্ণ আত্মনিবেদন করতে হবে_ অহংজ্ঞান থেকে মুক্ত হতে হবে একেবারে এ বিশ্বকর্মীর মতোই ৷ না হলে মুক্তি নেই ! আশ্রমের ভূৃতাটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, ছোট মহারাজ কখন বেরিয়েছেন ? _ঠাকুর দিদিমণিকে নিয়ে রওনা দেবার সঙ্গে সঙ্গেই উনি বেরিয়েছেন স্যার । _দরিদিমণি ! কোন দিদিমণি ? _কেন” আমাদের দিদিমণি - নীল দিদিমণি। কাল রাতে তো তিনি এখানেই ছিলেন। আজ খুব ভোরে উঠে ঠাকুরের সঙ্গে কোথায় চলে গেলেন। _নীল কাল রাত্রে এখানে ছিল ! আজ সকালে উঠে চলে গেছে গুরুদেবের সঙ্গে ! কোথায় গেছে? _-তা তো জানি নাস্তার। ছোট মহারাজ জানেন। সেই তো চিঠি নিয়ে বেরিয়েছেন তিনি-_আপনার ওখানেই গেছেন । অনেকক্ষণ চুপ করে থাকেন পরমানন্দ। বুকের একটা পাষাখ- ভার নেমে গেল। যাক, মেয়েটা তাহলে ওখানে যায় নি। তাকি যেতে পারে! হাজার হোক তারই মেয়ে তো৷। মুখে গরম গরম ১ বললেও সত্যিই কখনও লজ্জার মাথা খেয়ে 'এ চোর-মাতাল-বদমায়েশ- গুলোর আড্ডায় গিয়ে রাত্রিযাপন করতে পারে? _কাল রাত্রে সেকোন ঘরে ছিল ? চাকরটি কে নিয়ে যায় গুরুদেবের পাশের ঘরটিতে। ছোট্ট একখানি ঘর। একপাশে একটি চৌকি পাতা । গদি-তোশক নেই, শুধু সতরঞ্জির উপর একটি সাদা চাদর পাতা। খেয়াল হল গদির কথা, যখন অন্যমনক্কের মতো বসলেন চৌকিটাতে। বালিশটার মাঝখানে একটু বসে গেছে । কোলে তুলে নিলেন সেটা- মাথার তেলের একটি মুদছু সৌরভ । বিছানায় পড়ে রয়েছে একট। লোহার কাটা। খোঁপায় গোৌজার মাথার কাঁটা । তুলে নিয়ে বুক পকেটে রাখেন সেটাকে । অনেকদিন আগে তিনি মাঝে মাঝে এখানে এসে রাত্রিবাস করতেন । এ ঘরেই থাকতেন তিনি তখন । চাঁকরটাকে বললেন : এ ঘরে গদি-আটা যে পালক্কট! ছিল--সেটা কোথায় ? "গুদামঘরে আছে স্যার ! _ও | একটা দীর্ঘনিশ্বাস পড়ে । আশ্চর্য! নীল! শেষ পর্যস্ত কাল রাত্রে আশ্রমে এসে আশ্রয় নিয়েছিল ! এ কথা তো কল্পনাও করেন নি তিনি। কি করে করবেন-তিনি তো জানতেন, গুরুদেবকে একে- বারেই সহা করতে পারত না নীল! । ঈশ্বরবিশ্বাসী এ উদাসীনের প্রতি তার ছিল একটি তীত্র অনীহা । একবার জোর করে মেয়েকে আঙ্মমে ' নিয়ে এসেছিলেন । নীল! আসতে চায় নি, তিনিই বলে-কয়ে রাজী করিয়েছিলেন। নাস্তিক কন্তাটিকে সাধুসঙ্গে সংশোধিত করতে চেয়েছিলেন। লাভ হয়নি। সে এসে মুখে মুখে তর্ক করেছিল ংসারত্যাগী সন্গ্যাসীর সঙ্গে । --আপনি ব্রহ্মকে প্রত্যক্ষ উপলদ্ধি করেছেন ? লা মা! তবে যাকে জানেন না, যাকে উপলব্ধি করেন নি, তার .কুখা পাঁচজনকে বলেন কেন? যা আছেকি নেই--তা আপনি নিজেই প্‌ জানতে পারেন নি -তার দিকে লোককে আকুষ্ট করেন আপনি কোন অধিকারে ? আমি তাকে পাই নি; কিন্তু তিনি তো অলভ্য নন। তাঁকে পাওয়া যায়। --কেমন করে জানলেন ? এমন মহাপুরুষ আছেন যিনি তাকে উপলব্ধি করেছেন! সেই জোতিময় পুরুষেব স্বরূপ সমস্ত চৈতন্য দিয়ে অনুভব করেছেন । _কেসে? উদাহরণ দিন । _ আমাদের দেশের মন্ত্র্রষ্টা খ্ষিরা তাকে জেনেছিলেন, মা। ধারা উপনিষদের সামগান গেয়ে গেছেন সেই দ্রষ্টা আর্ধলাফিরা। ধার! বলতে পেরেছিলেন “বেদাহমেতং পুরুষং মহাস্তম্‌ অ।দিত্যাবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ ।' -আর আমি যদি বলি, তাবাও প্রকৃত সেই আদিত্যবর্ণ পুরুষকে জানতে পারেন নি? যদি বলি, ভাবা দল ভারী করবার উদ্দেশ্যে অনুতভাষণ করেছিলেন । শিউরে উঠেছিলেন পরমানন্দ। এ কী ভয়ঙ্কর কথা উচ্চারণ করল নীলা তকের ঝোকে । উদাসীন সন্গ্যাসী কিন্তু তিলমাত্র বিচলিত হন না, বলেন_তোমার এ কথা মনে হওয়ার তেতু ? হেতু এই যে, এ মন্দ্রষ্টা এষিরাই বলেছেন 'যন্সনস! ন মন্বতে, ষেনানুর্মনোমতম্‌্-_মন দিয়ে তাকে জান! যায় না। বলেছেন “ন তত্র চক্ষুর্গচ্ছতি ন বাগগচ্ছতি নো মন$ ন বিদ্প ন বিজানীমো”-_-তিনি অজ্দেয়। তিনি অবাডমানসগোচর-_ সুতরাং হঠাৎ ভেলকি লাগাবার জন্ত উপনিষদ্কার যর্দি বলে বসেন “বেদাহমেতং_তা তো আমি মেনে নেব না। আমি তাকে প্রশ্ন করব_ কোনটা মিথ্যা আর কোনটা সত্য ? __ছুটোই সত্য নীল! । ছটে।ই আপেক্ষিক সত্য। একটি সত্য তোমার আমার প্রতি প্রযোজ্য-__-যারা সাধনার শেষ সোপান পর্যন্ত পৌছাতে পারে নি, তাদের কাছে তিনি “যন্সনসা ন মনুতে” আবার নত বাধ দিয়ে নীলা বলেছিল : সত্য আপেক্ষিক জাগতিক বিষয়- বস্তুর | যেখানে বিচার্ষ বিষয় নিত্যসত্য--_ সেখানে আপেক্ষিকতার প্রশ্ন আসে না । যিনি অস্বতের পুত্রদের ডেকে সগরে ঘোষণা করেছিলেন__ তোমরা শোনো, আমি তাকে জেনেছি, তার নাগাল পেলে তারই তৈরী কেনোপনিষদের আর একটি মন্ত্র তাকে আমি শোনাতাম--িদি মন্তসে স্ববেদতি-__দভ্রমেবাঁপি' নূনং তং বেখ ব্রন্মণোরূপম্‌। যদস্থ "বং যদস্, দেবেধথ নর মীমাংস্যমেব তে মন্যে বিদিতম্‌ ॥' তুমি যদি মনে কর যে শামি তাকে জেনেছি-তাহলে মমি বলল সে জ্ঞান তোমার দভ্র- 'অল্পমাত্র ; কারণ ব্রন্মের যে রূপ টপলন্ষিগোচব তা সামান্যতম অংশমাত্র_-অতএব তোমার ব্রহ্মচ্ঞান,। যা নিয়ে তুমি “বেদাহমেতং? বলে বড়াই করছ, তাও মীমাংসার অপেক্ষা রাখে। নীলার সামনেই পরমানন্দ গুরুদেবের চরণ স্পর্শ করে ক্ষমা চেয়ে- ছিলেন । বলেছিলেন : অপরাধটা আমারই । আমি স্বপ্পেও ভাবি নি ও এসে এভাবে আপনার সঙ্গে তর্ক করছে বসবে । আমি বুঝতে পারি নি যে, আপনার উপদেশ শুনতে আসার যোগাতাও অর্জন করে নি নীলা । গুরুদেব হেসে বলেছিলেন তুমি ভূল করছ পরমা নন্দ । নীলা তোমার চেয়েও অর এক ধাপ এগিয়ে আছে সীধনমার্গে । ওর অন্তরে সঞ্চারিত হয়েছে চৌন্বকবৃত্তি। যে আকধণে জীবাত্মা ছুটে ঘায় পরমাত্মার দিকে, সেই শক্তি সঞ্চ'রত হয়েছে ওর অন্তরে- শুধুমাত্র বিপরীত দিকে মুখ ফিরিয়ে মাছে চুন্থকখ্গ্ড। একদিন নেমে আসবে চরম আঘাত--দিক পরিবর্তন করবে ওর মনের চুম্বক- বিকর্ষণ পরিণত হবে আকধণে । সেই শুভ দিনের প্রতীক্ষাতেই আমি প্রহর গুনব নীলা-মা । ত।ই আজ তোমার প্রশ্নের জবাব আমি দেব না। নীলার ও্প্রন্তে ফুঠে ওঠে অগ্রতায়ের এক চিলতে হাসি । বাঙ্গ- বিদাপের কি? হতছুটি এক করে সে নমস্কার করে উঠে দাড়ায়। ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে না। গুরুদেব বলেছিলেন আর কিছু বলবে আমায় ? ৯৪ বলব । শুধু বলব, “নেদং যদিদমুপাসতে ! মাটির সঙ্গে লজ্জায় মিশে গিয়েছিলেন পরমানন্দ, বিজ্ঞোহী আত্মজার এই স্পর্ধায়। গুরুদেব এবারও হেসে প্রত্যুত্তর করেছিলেন- আর আমি বলব : অগ্নে নয় সুপথা রায়ে অক্মান্‌ বিশ্বানি দেব বয়ুনানি বিদ্বান্‌। যুযোধ্যস্মজ্জনুরাণমেনো ভূষিষ্ঠাং তে নম-উক্তিং বিধেম ॥ ছঃখের আগুনে আমাদের অন্তরের সমস্ত কলুষ তুমি পুড়িয়ে ছাই করে দাও হে অগ্নিদেব। আমাদের কুটিল মনের সমস্ত পাপের সম্ধানই তো তুমি জান_এ থেকে আমাদের তুমি মুক্ত করো- তোমাকে আমরা বারংবার প্রণাম করছি । যুক্ত কর তিনি ললাটে স্পর্শ করেছিলেন মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে । সেই নীলা কি শেষ পর্যস্ত এখানে এসেছে আশ্রয়ের অনুসন্ধানে ? চরম আঘাতটা সে পেল কখন-_ন! হলে চুম্বকখণ্ড দিক পরিবর্তন করে কেমন করে? কোন হছুঃখের আগুনে ওর অগ্তঃকরণের সমস্ত কুটিল পাপ পুড়ে ছাই হয়ে গেল? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন একবার । না, আর অপেক্ষা করা চলে না। বেলা একটা বাজে । উঠলেন । পাঞ্জাবিটা গায়ে চডিয়ে আবার নেনে পড়লেন রৌদ্রদীপ্ত পথে। বাড়িতেই ফিরে যেতে হবে তাকে । ছোট মহারাজের সঙ্গে এই মুহূর্তে সাক্ষাৎ করার প্রয়োজন । খর রৌদ্রের মধ্যে হাটি হাটতে মেজাজটা আবার বিগড়ে গেল। কিক্লান্তিকর এই পথটা । এখনও হয়তো বাবলা গাছের ঘুঘুট৷ চুপ করে নি__মেঠো৷ ঘরের ঘুনপাঁড়ানিয়ার রেশ নি:শেষিত হয় নি স্তব্ধ মধ্যাহ্নের অনলবর্ধী আকাশে বাতাসে । মিশকালো মোষট! তখনও পড়ে ছিল গ1 এলিয়ে নয়নজুলির ঘিয়ে রঙের কাদায়। পর্মানন্দের কিন্ত দৃষ্টিগোচরে এল না এসব । মিহি খদ্দরের সুবাসিত রুমাল দিয়ে নি কপালের ঘাম মুছতে মুছতে কীচা পথটা পার হয়ে এসে উঠলেন পিচগল! বড় রাস্তায় । __এই রিকশা ! বাঁচা গেল । আর হাঁটতে হবে না তাহলে । বাড়িই ফিরে চললেন অবশেষে । একটা কথ তার বার বার মনে হচ্ছে আজকে ৷ রিকশায় বসে কথাটা ভালে করে ভেবে দেখবার চেষ্টা করলেন। দূর্লভ প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি । যাতে হাত দিয়েছেন- সোনা ফলিয়ে ছেড়েছেন । অদ্ভূত দৃঢ়তাও ছিল তার চরিত্রে । যা ভালো বুঝেছেন তাই করে এসেছেন আজীবন । কিন্তু তবু-_ নিশ্চয়ই কোথাও ফাকি ছিল। নিশ্চয়ই নিষ্ঠার অভাব ছিল তার। এতদিন মনকে বলে এসেছেন_ শেয়েছি ! পেয়েছি! যা পেতে চেয়েছি জীবনে ত! লাভ ন! কর! পর্যন্ত তৃপ্ত হই নি কোনদিন !.*"আজ হঠাৎ মনে হল সত্তিই কি তাই ?--কী পেয়েছেন তিনি? কিছুই তো! পাওয়া হয় নি। প্রথম যৌবনে মিশেছিলেন বিপ্লবীদের দলে দেশোদ্ধারের মহান উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গের সম্কল্প করেছিলেন ; কিন্তু কি হল? প্রবাসে গিয়ে সে পথ ছাড়তে বাধ্য হলেন । শল্য-চিকিৎসার ডিশ্রি নিয়ে ফিরে এলেন ভালোমানুষের মতো । তারপর স্থির করলেন রাজনীতিকে সম্পুর্ণ পরিহার করে চলবেন জীবনে । স্ত্রী-পুত্র-পরিবার নিয়ে রীতিমত সংসারী হবেন তিনি । দেশের সেবা করবেন- আরোগ্য-নিকেতনে | রোগীর রোগমুক্তিতে, আতের সেবায় তৃপ্ত হবে তার দেশসেবার কামন!। মিস গ্রেহাম আর আযানির সাহচধে গড়ে তুললেন এক অপরূপ আরোগ্য- নিকেতন । বুকের পাঁজরের চেয়েও ভালোন্নাসলেন তাকে । প্রতিজ্ঞা করলেন- এই হবে তার স্বপ্ন, সাধনা ! পারলেন ? এখানেও ব্যর্থ হলেন ভিনি। আরোগ্য-নিকেতন আজ কোম্পানীর সম্পত্তি । নাসিং হোম আজও আছে, কিন্তু তার স্বপ্নসাধনার শেষবিন্দ্ু পধস্ত বিকিয়ে গেছে। রাজনীতিকে পরিহার করবার সঙ্কল্পও রক্ষিত হল না। কারাজীবন শেষ কবে এসে স্থির করলেন ধর্মকর্মে শেষ জীবনটা! কাটিয়ে দেবেন ॥ ৯ মেতে রইলেন কিছুদিন গুরুদেব আর তার আশ্রম নিয়ে । কিন্তু টিকে থাকতে পারলেন না । ফিরে যেতে হল কর্মক্ষেত্রে রাজনৈতিক চক্রে। এখন তিনি পুরোপুরি ভোগী । মুখে বলেন বটে যে দেশসেবাই তার একমাত্র লক্ষ্য--কিস্তু সত্যিই কি তাই ? _হ্ঠ্যা নিশ্চয়ই ! পূর্বপক্ষের জবাব দিতে উত্তরপক্ষ উঠে বসল কোমর বেঁধে 9ঁর মনের মধ্যে । _কেন নয় ? এই যে দিনের মধ্যে বারো-চোদ্দ ঘণ্টা তাকে পরিশ্রম করতে হয় _এর কী উদ্দেশ্য ? কেন তিনি যুক্ত আছেন বার্টন আযাণ্ড হারিস কোম্পানীর সঙ্গে ? ভিভিডেণ্ডের লৌভে ? এককালে ম্যানেজিং এজেন্সি হাতে আসবে এই স্ুখন্বপ্রে বিভোর হয়ে? তা তো নয়। তিনি চাইছেন এটাকে একটা আদর্শ কারখানাতে রূপান্তরিত করতে । কুলি-ব্যারাকে ইলেকদ্রিক্ত বাতির ব্যবস্থা আছে কটা ফ্যাকটরিতে ? কিন্ত আছে সে ব্যবস্থা ওদের এখানে । তিনিই এটা বাধা করেছিলেন বোর্ডক মেনে নিতে । ওদের চীপ ক্যান্টিনটাও তারই প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে। কোম্পানি সাবসিডি দেয় ক্য।নিনকে । কেন দেয়? কেসে বাবস্থা করেছে? মনে পড়ছে, এ স্বল্পমূল্যের ক্যান্টিনটি যেদিন খোলা হয় সেদিন অনেক বড় বড লোক এসেছিলেন নিমন্ত্রিত হয়ে । ক্যান্টিনের সঙ্গে ক্লাবঘরও মাছে_সেখানে আছে রেডিও, সংবাদপত্র, নানা রকম খেলার সবঞ্জাম, ব্যাঘামাগার । মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন অভ্যাগতরা। এমন কুলি-ব্যারাক সত্যই দেখা যায় না কোথাও । ঝকমক করছে পরিষ্কার পাকা রাস্তা, পাকা নর্দমা, রাস্তায় বিজলীবাতি-_-ক্লাবঘরে শ্রমিকেরা ক্যারাম খেলছে, তাশ খেলছে ঃ ঢোল, খঞ্জনি, করতাল দেওয়। হয়েছে ওদের । ব্যায়মাগারে ব্যায়াম করছে স্বাস্থাবান শ্রমিকেরা ॥ সকলে উচ্ছুসিত প্রশংসা করেছিলেন সেদিন পরমানন্দকে--তিনিই এ-সব করিয়েছেন কোম্পানিকে দিয়ে । যারা এ কারখানার প্রাণ সেই মেহনতী মানুষরাই যদি ভালোভাবে ন৷ বাচতে পারল তবে কী দেশের সেবা করছেন তিনি, এ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ? ৮. বাত্য_« সেই দেশসেবাকেই বিস্তৃততর করে দেবেন তিনি আাসেম্ব্লিতে শিয়ে--এই ছিল কামনা । মনে আছে, নীলা এই সেদিন বলেছিল--আচ্ছ। বাবা, তুমি তো সারাদিন খদ্দর পর না, তাহলে মীটিঙে যাবার স্ময় এগুলি বার করে পর কেন? রুক্ষম্বরে উনি প্রতিপ্রশ্ন করেছিলেন : কেন, তাতে কি হয়েছে? _তুমি কি এটাকে একট! অন্যায় মনে কর না? এটা কি একটা লোকদেখানেো “শো” নয় ? _না? নয় ! যুদ্ধক্ষেত্রে ইউনিফর্ম পরতে হয় বলে সৈনিকের! কিছু গার্বস্থা জীবনেও ইউনিফর্ম পরে থাকে না। বিচারালয়ে গাউন আর হুইগ পরতে হয় বলে সারাদিন সেট? পরিধান করে থাকার কোনও যুক্ত নেই। রিকশখান1 শেষ পর্যস্ত এসে দীড়ায় শুর বাড়ির সামনে । নন্দ বেয়ারা ছুটে আসে কাছে। _-আমার সঙ্গে কেউ দেখা করতে এসেছিল ? _হ্যা স্যার, আশ্রম থেকে ছোট মহারাজ এসেছিলেন । তা আমি বললাম, আপনি কাকাবাবুর গাড়িতে বেরিয়েছেন- শুনে উনি সেখানেই গেলেন । --সেখানে মানে? _-কাঁকা'বাবুর বাসায়! ভু! একখান চিঠি হোখে গেছেন কি? --আজ্ছ ন!। _ইডিয়ট ! নন্দ চমকে ওঠে । বুঝতে পারে না, গালাগালট। কার উপর বব্বিত্ত হল । পরমানন্দ রিকশাওয়ীলাকে বলেন : ঘোরাও ! _আঁপনার লাঞ্চ? ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করে নন্দ । _ছোঁট মহারাজ যদি আবার আসেন তবে চিঠিখান। চেয়ে রাখিস। _-রাখল স্যার। শাপনি খেয়ে যাবেন না? ৪৮ না চলো । রিকশা বেরিয়ে এল আবার রাস্তায় । চলল ননীমাধবের বাড়ির দিকে । হাতঘড়িটার দিকে একবার তাকালেন । হটে পাচ । আশ্চর্য ! এখনও কোন সন্ধীন পাওয়া গেল না মেয়েটার ! কালরাত্রে সে আশ্রমে ছিল-_-কতকটা নিশ্চিন্ত। কিস্ত আজ সকালে উঠে কোথায় গেল? আত্মীয়বন্ধু কারও কথা মনে পড়ল না যেখানে গিয়ে সামায়িকভাবে আশ্রয় নিতে পারে নীলা । এক ছিল ননীমাধবের বাড়ি। কিন্তু সেখানে সে যায় নি। গেলে উনি সংবাদ পেতেন । '*১ই্যাঃ আর একটা সম্ভাবনা আছে। পি-নাইন ব্যারাক । কথাটা মনে হতেই আপাদমস্তক জ্বালা করে ওঠে গর । মনে পড়ে গেল সেই উদ্ধত ছেলেটির বিদ্রোহী মৃতি। একমাথা রুক্ষ চুল। পরিধানে একটা নীল পায়জামা । চেককাটা একটা হাফশার্ট গায়ে--- কাধের কাছে ফেঁসে গেছে । শার্টের নিচে যে গেঞ্জি নেই--তা বোঝা যায় এ ছিন্ন অংশটা দিয়ে । চেককাটা হ্যাগুলুমের সস্তা কামিজটায় লেগেছে ছোপ-ছোপ মবিল কিংবা গ্রীজ--চটচট করছে সেটা । এক- মুখ খোচা-খোচা দাড়ি, ছ হাতে ময়লা । অফিসঘরে ওর মুখোমুখি দাড়িয়েছিল এ অপরূপ মৃতিট!। _কাঁল আমার গাড়ি আটক করে কি বলতে চেয়েছিলেন? লোকটা চেপে বসে ভিজিটার্স চেয়ারে । আশ্চর্য সাহস তো! উনি ইচ্ছা করেই “আপনি? বলে কথা বলেছিলেন । সম্মান দেখাতে নয়__-কারখানার কোনও মেহনতী মানুষের সঙ্গেই এ ভাষায় তিনি কথ! বলেন না। লোকটা যদিও পদচ্যুত কর্মী, কারখানার মজুর আর সে নয়; কিন্তু সেজন্যও “আপনি; ব্ললে কথা শুরু করেননি তিনি। তিনি শুধু একট! দূরত্ব রাখতে চেয়েছিলেন মাত্র--পাছে তুমি” বলে কথা বললে সে পূর্বপরিচয়ন্ত্র ধরে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। লোকটা এই সুযোগে অল্লান বদনে বসে পড়ল সামনের চেয়ারে। বসে যখন পড়েইছে তখন আর উঠতে বলা যায় ন। -_আমার উপর অবিচার করা হয়েছে । তাই আপনার কাছে ৪৬৪ আমি স্ববিচার চাইতে এসেছি। আমাকে ডিসচার্জ করা হয়েছে অন্যায়ভাবে । না । তোমার /কসটা আমি নিজে দেখোছি । এ অপবাধে কর্মীকে পদচাত না কলে কারখানা চালানো! যায় না। তোমাৰ বিরুদ্ধে চুরিব চার্জ গাছে_এবং তাৰ প্রত্যক্ষ প্রমাণ আছে । _শাপনি এটা বিশ্বাস কবেন ? _আনাব বিশ্বাস-মবিশ্বাসেব প্রশ্ন উঠছে না । মেশিন পার্টসগ্চলো। (তোমার ঘব সাচি কবধার সময পাণ্যা ।,গছে। অন্তত দশ-পনেরে। জন সাক্ষী ছিল সার্চ কবার সময । অন্ত কেট চুবি কবে তোমার ঘাবে ওঙাবে সেগুলি লুকিয়ে রাখতে যাবে কেন? এব চেষে ভাইবেক্ এভিডেন্স আব কি হত পারে? _এভা ডন্সেব কথা হচ্ছে না । আমাব প্রশ্ন আপনি এটা অস্থুব থেকে শিশ্ব সকাব্ছন কিনা ? আপনি মামাব পুর্বইতিহ|স জানেন-__ তাই ভিজ্ঞানা কনছি+ "আপনি কি বিশ্বাস কবেন যে, এ কাজ আমাব দ্বাব! সম্ভণ ? _ক্বি। বিশ্বাস করি। “অভাবে স্বভাব নষ্ট কথাটার ভুমি একটি ঈজ্জল দৃষ্টান্ত! -_শুধু অভাবেই স্বভাব নষ্ট হয না ডক্টুব চৌধুবী-_প্রাচুর্যেও সেট" নষ্ট হয থকে তাবও উজ্জ্রনাতম প্রমাণ আমি দখাতে পারি। কিন্তু মেকথা যাক । আমি বলছিলাম-_যে উদ্দেশ নিয়ে আপনারা এই চুমিব কেসঢা সাজিযেছেন এস উদ্দেশ্ঠ কিন্তু এতে সিদ্ধ হবে না। _-তোমাব বক্তব্য শেষ হয়েছে আশা কবি । তুমি যেতে পার। _-না, হয নি। আমি শেষবাবেব মতো আপনাকে জানাতে এসেছি আমাদের মাথায় পা দিয়ে এভাবে চিবকাল আপনারা চলতে পারবেন না। আমাকে আপনাব বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় নি, কারখানা থেকেও (কীশলে সবিয়ে দেবাব চেষ্টা করছেন আপনি । কারখানার আপনি মালিক, আমাকে যে কোনও অজুহাতে আপনি তা়াতে পারেন, কিন্ত তা হলেও এ শহব ছেড়ে আমি চল যাব না। এতে বিজ আপনার এবং আপনার বন্ধুর কারও উদ্দেশ্টই সফল হবে ন1। ওর দুর্জয় স্পর্ধা দেখে মনে মনে হেস্ছিলেন । মুখে বলেছিলেন তাই না কি?তা কে আমার বন্ধু? আর আমাদের ছজনের উদ্দেশ্টুই বাকি? | -আপনার বন্ধু ননীমাধব মনে করেছেন আমাকে তাড়াতে পারলে মজছুর এঁক্য ভেঙে পড়বে- ইউনিয়ন গঠনের দাবিটা চাপা দিতে পারবেন। আর আপনি ভেবেছেন আমাকে আপনার কন্যার চোখের আড়ালে-__ _শাট আপ! যু স্কাউণ্ডেল ! বেরিয়ে যাও তুমি এই মুহুর্তে । “যাচ্ছি । তবে যাবার আগে একটা কথা! বলে যাই আপনাকে | বিদ্রোহী মজছুরই বলুন আর বিদ্রোহী আত্মজীই বলুন--মিটমাঁট করবার দিন আপনাকে ফিরে ডাকতে হবে এই অরুণাভ নন্দীকেই। ইলেকত্রিক কলিং বেলটার গলা টিপে ধরেছিলেন ।পরমানন্দ | একটানা! আর্তনাদ করে চলেছিল কলিং বেলটা-__মৃত্যুযন্ত্রণায়। এক সঙ্গে তিনজন বেয়ার এসে ঢুকল ঘরে-_সাহেবের খিদমত করতে । ওরা এসে দেখে সাহেব একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন সুইং ডোরটার দিকে । ঝোড়ো হাওয়ায় ঝাউপাতার মতো কাপছে সেটা । আর কেউ নেই ঘরে । এ হতভাগাটার কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে নীলা ! এ কি বিশ্বাস্ত ? ননীমাধবের বাড়িতে এসে দেখেন গৃহকর্তা তখনও ফিরে আসেন নি। দীপক ছিল। সে বলে-__এ কি, আপনি £ একা? _স্ট্যা ছোট মহারাজ এসেছিলেন আমার খোজে? দীপকের কাছে জান! গেল তিনি এখানেও এসেছিলেন পরমানন্দের সন্ধানে, দেখা না পেয়ে ফিরে গেছেন । চিঠি ? না কোনও চিঠি রেখে ষান নি। ৃ ক্লান্তিতে ভেঙে পড়তে চাইছে শরীর । সকাল থেকে পাগলের মতো কেবল ছোটাছুটিই করে বেড়াচ্ছেন । একটা সোফায় গা! এলিয়ে ১৬ দিয়ে বসে পড়েন : তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা ছিল, বোসে।। সামনের সোফাটায়. বসে দীপক প্রতিপ্রশ্শধ করে-_-আপনার আহারাদি হয়েছে তো ? --না, এবার বাড়ি গিয়ে খাব। --সে কি, তারিণীদার ওখানে না আজ আপনার মধ্যাহ্ন আহারের ব্যবস্থ! ? বাব। তে। তাই বলে গেলেন? ঠিক কথা৷ মনে পড়ে গেল পরমানন্দের ৷ বাড়িতে সে কথা বলতে ভুলে গেছেন। দীপককে বলেন--তুমি তারিণীদাকে একটু ফোন করে জানিয়ে দিও-_একটা বিশেষ জরুরী কাঁজে আমি আটকে পড়েছি । যেতে পারব না। --বেশ, বলে দেব। আমার সঙ্গে কি কথা আছে বলছিলেন ? -্্যাঠ নীলাঃ'কি কাল রাতে অথবা আজ সকালে এখানে এসেছিল ? --কই না তো, কেন বলুন ছে? _নীলার সঙ্গে তোমার শেষ কখন দেখা হয়েছে? _-তা চার-পাচ দিন হবে। কেন? একটু চুপ করে থাকেন। তারপর বলেন- অনেকদিন আগে "তুমি বলেছিলে নীলার মন অন্যত্র বাঁধ! আছে। জিনিসটা আমি আর একটু বিস্তারিত জ।নতে চাই । এইবার চুপ করে থাকার পালা দীপকের ৷ কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর জানালার বাইরে কোন দূনিরীক্ষা দিগন্তের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে আত্মগতভাবে বলে যায় তার বক্বা ; জিনিসটা! আরও আগে হয়তো আপনাকে জানানো উচিত ছিল আমার । আকারে ইঙ্গিতে অবশ্য জানিয়েছি । স্পষ্ট করে বলি নি--ছুটো কারণে, প্রথমত আমি ভেবেছিলাম আপনি সবই জানেন_ কিছুই অজ্ঞীত নেই আপনার কাছে। দ্বিতীয়ত আমি মনে করেছিলাম প্রসঙ্গটা আমার তরফে সঙ্কোচের, লজ্জার । কিস্ত পরে ভেবে মনে হয়েছে, সত্যিই আমার লজ্জা পাওয়ার কিছু ছিল কি? ১০২ আমি নীলাকে ভালোবাদতে পেরেছিলাম-__-এটা' নিশ্চয়ই আমার পক্ষে লজ্জার কথা নয়। সেপারে নি, সেটাও আমার অপরাধ নয়। কিন্তু ওর মন কোথায় বাধা আছে তা অনেক অনেক দিন আগে থেকেই জানতে পেরেছিলাম আমি । আপনাকে জানানো কর্তব্য ছিল আমার । জানাই নি, কারণ আমি আশ! করেছিলাম, ওর মন বদলে যাবে । সে মানুষটা নেপথ্যে রয়ে গেল চিরকাল--তার এক সপ্তাহের উপস্থিতির প্রভাব আমি কাটিয়ে উঠতে পারব না, এক যুগের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যেও ? কিন্ত হুর্ভাগ্য আমার, অকৃতকার্ধ হয়েছিলাম আমি । তারও কারণ ছিল। অসীমের শুন্য স্থানট! পূর্ণ করার একটা অবচেতন প্রেরণা ছিল নীলার মনের অস্তরতম কোণে । আমাকে তাই এনে বপিয়েছিল সেই শুন্য আসনে । তাই আমার সঙ্গে সে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছে, বন্ধত্ বজায় রেখেছে, স্রীতি-পৌহার্দ্ের আদান-প্রদান চলেছে, কিন্তু সেই নেপথ্যবাসীকে একচুল বিচ্যুত করতে পারি নি আমি । এ-সব কথা! আপনাকে কেমন করে বলি? তবু হয়তো সব কথা একদিন খুলে বলতাম -যদি না! শেষদিকে খবর পেতাম অরুণাভের প্রতি আপনাদের সাম্প্রতিক আচরণের কথা । বাবার কাছে আমি শুনলাম, দীর্ঘ কারাবাসের পর সাত রাজ্য ঘুরে অরুণাভ এখানে এসে পৌছেছিল। সে নাকি প্রথমেই আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসে-কিস্তু আপনি দেখা করেন নি। আপনার বাড়ির দরজা থেকে অরুণাভ ফিরে যায় । যে ছেলেটির জন্যে আপনি সব কিছু একদিন ত্যাগ করেছিলেন, কেন তাকে আপনি বাড়িতে ঢুকতে দিলেন না, তা আমি আজও জানি ন1। প্রথমে মনে হয়েছিল, বুঝি ছুরস্ত অভিমানেই এই অপমান করেছিলেন তাকে । এ ছেলেটির জন্তেই আপনার সুখের সংসার ভেঙে গিয়েছিল--ওর জন্যেই প্রাণ দিতে হয়েছে অসীমকে- তাই ওকে সহ করতে পারেন নি আপনি । কিন্তু পরে মনে হয়েছে, সেট! আসল কারণ নয়--আপনি ওকে নীলার সাম্গিধ্যে আসতে দেন নি। তাই ভেবেছিলাম--আজ আপনি আমাকে যে প্রশ্ন করছেন সেটা বাহুল্য মাত্র । তবু প্রশ্ন যখন আজ আপনি করছেন তখন আমাকে ১১৩ ধরে নিতে হবে ষে নীলার মন কোথায় বাধা পড়েছে কা আপনার অজানা । আমি কিন্ত প্রথম থেকেই সব জানতাম ৷ নীলার সঙ্গে ওর গোপন পত্রালাপ চলত কিনা আমি জানি না, শুধু এইটুকুই জেনেছিলাম যে অপেক্ষা করবে বলে ওর! পরস্পরের কাছে প্রতিশ্রুত ছিল। মাত্র সাত দিনের সান্নিধ্যে কেমন করে ওরা এত দ্রেত এত গভীরভাবে পরস্পরকে ভালোবাসতে পারল তাও আমার ধারণার বাইরে, কিন্তু এ কথা নিশ্চিত যে সেদিন থেকে ওর মন দিগদর্শন যন্ত্রের কাটার মতো একমুখে প্রতীক্ষা করছিল অরুণাতের প্রত্যাবর্তনের । তার পরের ঘটনা আপনি ভালো করেই জানেন, হয়তো আমার চেয়ে বেশীই জানেন । অরুণাভ আপনার বাড়িতে ঢুকতে পারে নিঃ কিন্তু ঢুকেছিল কারখানায় । নাম লেখায় সে ফ্যাকটরির মজছুর লিস্টের রেজিস্টারে। শুধু যে রোজগারের ধান্দাতেই সে এসেছিল এ কথা মনে করি না। অবশ্ট তার আসল লক্ষ্যটা কিসের উপর ছিল সে কথাও ঠিক জানি ন1। সম্ভবত অর্ধেক রাজত্ব এবং রাজকন্যা ছুটির উপরই ছিল তার সমান লোভ । জিনিসটা ঘনিয়ে উঠছিল অলক্ষ্যে । প্রথম নজরে পড়ে বাবার। তিনিই তাকে প্রথম চিনতে পারেন। অবশ্য তার আগেই তাকে চিনতে পেরেছিল নীলা । সে যাই হোক, দেখলাম বাব! ওকে তাড়াবাঁর জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন । আপনার সঙ্গে তার কি পথ্থাবার্তা হয় তা আমি জানি না, কিন্তু দেখলাম ছেলেটিকে তাড়ানোর বাবস্থাটা পাক? হল। চুরির দায়ে ধর! পড়ল শ্রমিক নেতা । বাবার বাবস্থাপনায় ত্রুটি থাকে না- প্রমাণিত হয়ে গেল অরুণাভ নন্দী একজন চোর । পরমানন্দ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলেন : এ কথার মানে? তুমি কি বলতে চাও চুরির কেসটা সাজানো ? ননীই 'ওটা সাজিয়েছে? বাবা সাজিয়েছেন, কি মাপনি সাজিয়েছেন তা নিশ্চিত কেমন করে বলব বলুন--তবে এটা! তো আপনিও স্বীকার করবেন যে, অরুণাভ নন্দী আর যাই করুক চুরি করবে না! স্ব হয়েবসে থাকেন বৃদ্ধ। নীরবতা ভঙ্গ করে দীপকই আবার; ক্ষোভগ্লান কষ্টে যেন নিজেকেই ধিক্কার দিয়ে ওঠে : আমার সবচেয়ে ছংখ হয় যখন বুঝতে পারি ষে শুধু শ্রমিকবিদ্রোহ এডাবার জন্তে বাবা এ কাক্জটা করেন নি _তিনি এ অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়েছেন আরও জঘন্থ স্বার্থের খাতিরে । তার মধ্যে নিজেকে জড়িত বুঝতে পেরে আমি নীলার দিকে মুখ তুলে চাইতে পারি না । _-তুমি কি বলতে চাইছ দীপক ? আমি বলছি-_এই চুরির কেসট! সাজানোর ব্যাপারে আপনার যে অবদান তার তবু একটা অর্থ হয়।__নীলাকে রক্ষা করা আপন।র কর্তব্য, হয়তো সেইজন্য এ অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছেন আপনি। কিন্ত বাবা? তিনি ওকে তাড়াতে চেয়েছেন শ্রমিকবিপব্রোহের কথা ভোবে নয়__আমার জন্যে ! এ লঙ্জ! আমি ভূলি কি করে? পরমানন্দ ধীরে ধীরে বলেন--নীলা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে দীপক ! - চলে গেছে! মানে? কখন গ কোথায় ? ওর কাছে বুকের ভার নামাতে থাকেন পরমানন্দ । উনি বুঝতে পেরেছেন, এ ছেলেটি সত্যিই ভালোবাসে নীলাকে ৷ দীপক চুপ করে শোনে সব কথা । পরমানন্দ শেষে জিজ্ঞাসা করেন : তোমার কি মনে হয় ও অরুণাভের ওখানে গেছে। _-অপম্তব নয়। --তবে সেখানেই চললাম আমি । দীপক উত্তেজিতভাবে ওঁকে বাধা দেয়-অমন কাজও করবেন না জোঠামশাই | ওরা ধর্মঘট করেছে-এখানে ওখানে মীটিও হচ্ছে । আপনাকে একল! পেলে ওরা ভালোমন্দ কিছু একটা করে বসতে পারে। আপনি বরং বাডি ফিরে যান । আমি খোঁজ নিচিন্ভ (লাক পািয়ে। ১৬৫ ননীমাধবের বাড়ি থেকে আবার রিকশা চেপে বেড়িয়ে পড়েন উনি। অনলবর্ষী সুর্য তখন ঢলে পড়েছে পশ্চিম দিগন্তে । চারটে বেজে শেছে। ক্লান্ত দেহটা রিকশায় এলিয়ে দিয়ে আকাশপাতাল চিন্তা করতে থাকেন। চিন্তার আর পারম্পর্ষ থাকছে না। কখনও মনে পড়ছে অসীমকে-_কখনও বৈশাখীকে, কখনও আানির মুখখানা ভেসে উঠছে মনের পটে । নীলা ? নাঃ নীলার কথা! আর তিনি ভাববেন না। যে মেয়ে তার বাপের সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে দিয়ে কুলি-ব্যারাকে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারে তার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই আর। অরুণাভ তাহলে সত্যিই চুরি করে নি! এটা তাহলে ননীমাধবের একটা কারসাজি ! ননীমাধব তাহলে ঠিকই চিনেছিলেন পরমানন্দকে ! তাই আসল কথাটা তার কাছেও গোপন রেখে গেছেন । প্রথমটা রাগ হয়েছিল ননীমাধবের উপর--এই হীন কাজের জন্যে । এখন কিস্তু আর রাগটা নেই-_মনে হচ্ছে এ ননীমাধবই তো। একমাত্র লোক যে সম্মান করেছে তার আদর্শনিষ্ঠাকে ৷ সাহস করে বলতেও পারে নি সাজানো চুরির কেসের কথাট!। কিন্তু অরুণাভ চুরি করুক আর নাই করুক- সে জন্য তো তার আপত্তি নয়। তার আপত্তি হচ্ছে অন্ত কারণে । আজ তিনি আর অরুণাভ নন্দী এক নৌকার যাত্রী নন। তিনি চলেছেন ভাটিতে আর অরুণাভ উজানে । তিনি চাইছেন দেশের শিল্প-উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করতে । শ্রমিক আর মালিক হাতে হাত মিলিয়ে গড়ে তুলবে নৃত্তন নূতন শিল্পসম্তার। বিদেশী মুদ্রা আহরণ করতে হবে। নামতে হবে বিদেশী পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় । জাতীয় পরিকল্পনা রূপায়িত হবে শ্রমিক-মালিকের যৌথ প্রচেষ্টায় । এ জন্যে অবশ্টু স্বার্থত্যাগ করতে হবে ছু পক্ষকেই । শ্রমিককে দিতে হাবে জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ । শুধু জীবনধারণ নয়-_উন্নততর জীবনযাপনের । ওদের জীবনের মান উন্নয়ন করতে হবে। তাই তো উনি ব্যবস্থা করেছেন কুলি-ব্যারাকে পাকা রাস্তা, পাকা নরম! ব্যবস্থা করেছেন প্রাথমিক শিক্ষার, স্বাস্থ্যরক্ষার। শ্রমিকও দেখবে ১৬ বৈকি মালিকের ন্থার্থ। গর কারখানার লোকেরাও গুকে দেবতার মতো! ভক্তি করে। চীপ ক্যান্টিন খোলার দিন ওঁকে ওর! পরিয়ে দিয়ে” ছিল একটা! মোটা গাঁদাফুলের মালা । অরুণাভ কিস্তু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখছে জিনিসটা । সে চায় ধর্মঘট করে, চাপ দিয়ে, শ্রমিক ইউনিয়ন পাকিয়ে মালিককে শায়েস্তা করতে । বন্ধুত্বের সম্পর্কটা সে স্বীকার করে না। শ্রমিক আর মালিক যেন খান্ক আর খাদক ! আশ্চর্ধ ! সেকোনেো আপস চায় না সে শুধু লড়তেই চায়। আর এই লড়াইয়ের জন্য যদি কারখানাটা বন্ধও থাকে কিছুদিন--দেশের শিল্প-উৎপাদন বাহত হয় তাতেও লে ছুঃখিত নয়। এই আদর্শগত বিভেদের জন্যই আজ তিনি ক্ষমা করতে পারেন না অরুণাভকে | সহ্য করতে পারেন না তার উদ্ধত বির্রোহীর ভঙ্গিট! | _ এই রোখো ! রোখো ! দাড়িয়ে পড়ে রিকশাটা । রিকশাওয়ালাকে বলেন হুডট। তুলে দিতে। পড়ভ্ত রোদে বড় কষ্ট হচ্ছিল তার। রিকশাওয়ালা! হুডটা তুলে দেয়। গাড়িটা চলছিল পশ্চিমমুখে! ; সূর্য দিগ্ববলয়ে হেলে পড়েছে । হুড তুলে দেওয়াতেও রোদটা আটকাল না। সামনে থেকে রোদ লাগছে । রিকশাওয়ালা] সামনের পর্দাটা! ফেলে দেয়। ঘেরাটোপের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়লেন উনি । হঠাৎ একটা! কথ! মনে হল তার । রিকশাওয়ালাকে বললেন বা দিকের রাস্তায় ঘুরে যেতে। কুলিবস্তিতেই যাবেন তিনি একবার । ঘেরাটোৌপের মানুষকে আর কে চিনবে? বরং রিকশা থেকে নামবেনই না ; রিকশীওয়ালাকে দিয়েই খোঁজ নেবেন । বা দিকের কাচা সড়কে নামল রিকশাটা। এ'কেবেঁকে চলল কুলি- ব্যারাকের দিকে । এ পথে তিনি কখনও আসেন নি ইতিপূর্বে । আসবার প্রয়োজনও হয় নি। তিনি উপরতলার বাসিন্দা--নিচের মহলের খবরদারির প্রয়োজন হলে লেবার-স্ট্যাটি সটিক্স-এর প্রোকষর্মাটাই ন্নেখেন | সেই চার্ট থেকেই জানতে পারেন লেবার ব্যারাকের সংবাদ । ১৬৭ আজ এখানে তাকে আদতে হয়েছে প্রাণের দায়ে। মনে পড়ছে ঠিক এ পথে না এলেও এ পাড়ায় একদিন এসেছিলেন তিনি, যেদিন চীপ ক্যান্টিনটা খোলা হয়। তিনি একা নন--অনেক গণ্যমান্য অতিথিই »এসেছিলেন সেদিন । রাস্তাগুলো ছিল ঝকঝকে-নর্দমাগুলো। ছিল পরিষ্ষার। কিছু দূরে দূরে বসানো ছিল সাদা-কালো ডোরাকাট! ডাম-_অর্থাৎ ডাস্টবিন | সমস্ত এলাকাটা লাগছিল ষেন চিত্রকরের আকা একখানা স্থন্দর ছবি। মনে আছে, সেদিন মনে মনে তৃপ্তির হালি হেসেছিলেন। বস্তিজীবনের যে চিত্র দিশী-বিদেনী উপন্যাসে পড়া ছিল--তার সঙ্গে আসনান-জমিন পার্থক্য লক্ষ্য করেছিলেন তাদের কারখানার । খুশী হয়েছিলেন । আজ বুঝতে পারছেন ভূলট!। রাজ্যের আবর্জনা এসে জমেছে পথে । নর্দমাগ্চলে! ভরে আছে ন)লচে কালো থকথকে কাদা-জলে । একটা কালভার্ট মুখ থুবড়ে পড়ে মাছে পথের উপর | নামতে হল অগত্যা । জলপ্রবাহ আটকে গেছে এখানে । একটা কুকুর চাপা পড়েছে লরিতে । ছূর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হয়, চার-পাঁচ দিন পূর্বেই ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে বেচারির--যদদিচ তার অন্ত্যেগ্রিক্রিয়ার কোনও ব্যবস্থা হয় নি এখনও । পথে লোকজন নেই । কয়েকটা শকুন এসে নেমেছে এই সুযোগে । আনেক মড়াকাটার অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে ভাক্তার চৌধুরীর গা ঘ্ুলিয়ে উঠল । খালি পেটে আছেন বলে কি? হর্ণ দিতে দিতে একখান। মনুলা-ফেলা লরি এসে পড়ল প্রীয় ঘাড়ের উপর ৷ রিকশাটা কাদায় নেমে পাশ দিল । পাশ দিয়ে চলে গেল লরিট।। কয়েকটা কাদামাথ। শাল্সপাঁতা উড়ে এসে পড়ল রিকশায়--৩র খদ্দরের সাদা পাঞ্জাবিটায় যেন রসিকতা করছে একে দিল একটা কলম্কচিহ্ধ । পরমানন্দ লক্ষ্য করে দেখলেন, ময়লা-ফেলা লরিটার তলদেশ প্রায় ঝাঝর। হয়ে গেছে। সমস্ত রাস্তায় দুর্গন্ধযুক্ত তরল পদার্থের একটা ধারাচিহ্ন আকা পড়ে যাচ্ছে_গাঁড়িটার পিছন পিছন। সম্ভবত গন্তব্য স্থানে পৌছবার পূর্বেই লরি ভারমুক্ত হবে। এই তা হলে ভার কুলি-ব্যারাকের জীবনালেখ্য ? রিকশাট। দাড়িয়ে পড়ে একটা পথের বাঁকে । রিকশাচালক জানায় পি-নাইন ব্যারাকে এসে গেছে গাড়ি। উনি ভাকেই বলেন দামনের বাড়ির কড়া নাড়তে, লোক ডাকতে । অল্প পরে লোকটা ফিরে আসে দুঃসংবাদ নিয়ে। এ বাড়ির বাসিন্দার চাকরি গেছে । নোটিশ পেয়েছিল কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে । কর্দিন আগে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে । কী আশ্চর্য! এই সহজ কথাটা খেয়াল হয় নি তার | অল্পবয়সী ছুটি ছোকরা এগিয়ে আসে রিকশা দেখে । খড়িওঠা কক্ষ দেহ-_ময়লা ভর্তি সারা গায়ে । উধ্ধাঙ্গ নগ্র- নিয়াঙ্গে খাকি ধুলিমলিন হাফপ্যান্ট । এসে বলে : ওক্তাদদ।কে খুঁজছেন £ --ওস্তাদদা! ? সেকে? আমি খুঁজছিলাম অরুণাভ নন্দাকে-- এই বাসাতেই থাকত না ? -স্ঠ্যা, ওকেই আমরা ওস্তাদদা বলি । ওক্তাদদাকে কোম্পানি তড়িয়ে দিয়েছে । ওই শালা ম্যানেজার আর এ হারামজাদা চৌধুরী ঠাক্তারের দমবাজি। চমকে ওঠেন পরমানন্দ । বলেন : চৌধুরী ডাক্তার কে? _-কে জানে, হবে কোন * কান ঝা ঝা করে ওঠে । ও ছোকরা কি জানে এ অঙ্লীল শব্দটার মর্থ? ছেলেটি আবার বলে-তা আপনি বু পার্টি অফিস থেকে আসছেন ? ওস্তাদদার কাছে? _স্থ্যা, কোথায় থাকে মরুণাভ বলতে পার? জানব না? আবে এ রিকৃশালা, শুন্‌! ওর! রিকশাচালককে হদিলট। বাতলে দেয়। পরমানন্দ তখন অবাক হয়ে ভাবছিলেন এদের কথা । কতই বা বয়েস ওদের ? এখন থকেই মনুষ্যত্বকে গল! টিপে ধরা হয়েছে । লেখাপড়া শিখবে না, ভদ্র কথা, ভঙ্র আচার কাকে বলে জানবে না কোনদিন । এই বিষ- নাষ্পের শ্বাসরোধী বাতাবরণে তিলে তিলে নীল হয়ে যাবে এ অস্বছের ১০৪ পুত্রেরা ৷ জীবনের চরম শিক্ষাই হয়ে গেছে ইতিমধ্যে! ম্যানেজার ইতিমধ্যেই হয়ে উঠেছে নিকট কুটুন্থ আর মালিক" এই তার কীতি | এর জন্ে মনের গ্রভীরে তিনি পোষণ করেন অহঙ্কার ! শিল্পোক্নয়ন করছেন দেশের । গঠন করছেন জাতি ! শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়ন__একমাত্র লক্ষ্য তার ! রিকশাওয়ালা বেঁকে বসল। সেই কোন সকালে ওঁকে রিকশায় তুলেছে । এখন একটা পয়সা হাতে পায়নি । ঘুরে মরছে সার! শহর। দে আর যাবে না। ওকে ভাড়া মিটিয়ে দেওয়া হোক এবার । --কত ভাড়া হয়েছে তোমার ? প্রশ্ন করেন পরমানন্দন। --তা টাক। তিনেকের কম নয়। একখান পাঁচটাকার নোট ওর হাতে দিয়ে বলেন : চলো-_-এ যে কি বস্তির 'কথা বলল ওরা ওখানে চলো । রিকশাওয়াল। নরম হয়। আবার প্যাডলে উঠে বসে । এঁকে- বেঁকে ফিরে চলে । পিছন থেকে বস্তির ছোকরাটি মন্তব্য করে ভার দ্বোস্তকে : মালদার লোক মাইরি ; দেখলি কেমন ঝড়াক্‌সে নিকলে দিলে কড়কডে নোটখানা ! ্‌ রিকশাখানা যখন এসে পৌছল বস্তিটায়, তূর্য তখন ক্রাস্ত দেহে এলিয়ে পড়েছে পশ্চিম দি্লয়ে । আকাবীকা পথের ছধারে মেটে ঘর, খাপড়ার চাল। পথের পাশে টিউকলের সামনে লম্বা কিউ। জলে থিকথিক করছে সেখানট' । ঘিনঘিনে এলাকাটা পার হয়ে হঠাৎ একটা ফাকা মাঠে এসে পৌছল রিকশাটা। এখানেই বোধহয় মীটিঙ হবে। কিসের মীটিঙ ? অনেক মেহনতী মানুষ জড়ে। হয়েছে মাঠে । কয়েকটা ফেস্টন দেখা যাচ্ছে । একেবেকে আছে বলে লেখাগুলো এখন পড়া ষাচ্ছে না । দরমা-চাটাইয়ের উপর খবরের কাগজ এটে তার উপর লাল কাঁলিতে কি যেন লেখা আছে। বাঁশের খু'টোর মাথায় এ দাবিটাকেই ৯১৭ ঘাড়ে করে নিয়ে এসেছে মীটিডে। ময়দানের মাঝখানে খান কয়েক চৌকি পাতা । পাশে একটা বংশদণ্ডে উড়ছে একটা! নিশান । রক্তচচ্ষু মেলে চেয়ে আছে পাতাকাটা পরমানন্দের দিকেই। রিকশাওয়ালাই খোজ নিতে নিতে এসে হাজির হল বাড়িটার সামনে । বাড়ি অবশ্ট গৌরবে । আসলে খোলার চালার একটা কামরা । সেখানেও অনেক লোক জটলা করছে। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে তখন ৷ রিকশ! দেখে জনতা পথ দেয়। ত্রিচক্রান এসে থামল চালাখানার সামনে । _-ওস্তাদ? হ্যা, এই বাড়িই। হ্যা আছেন ভেতরে । কে . এসেছেন ? পর্দা সরিয়ে রিকশা থেকে নেমে আসেন পরমানন্দ । ওরা! যেন ভূত দেখল ! গুঞ্জন উঠল একটা জনতার মধ্যে । জক্ষেপ করলেন না । সোজা উঠে গেলেন খোলার ঘরখানিতে। প্রথমেই নিচু চালাতে একট! ঠোকর খেলেন মাথায় । সেটাও গ্রাহ্য করলেন না। ঘরের ভিতরট! অন্ধকার । হ্যারিকেন জ্বলছে একটা । জনা আট- দশ লোক নিয়স্বরে কি যেন আলোচনা করছে । আগস্তককে দেখে চমকে ওঠে সবাই। ঘরে কোনো আসবাব নেই । একপাশে দড়ির একটি খাটিয়।- তার নিচে মাটির একটা কলসির মুখে চাপা দেওয়া এনাঁমেলের একটি গ্লাস। ওপাশে একটি টিনের স্ুটকেশ। দেওয়ালে ছুখান। ছবি-- একটি সুভাষচন্দ্রে। অপরখানা লেনিনের । দরমার দেওয়ালে কঞ্চির গৌজে টাঙানো আছে একটি হ্যাগুলুমের ময়লা হাফশার্ট । মেঝেতে তালপাতার একটি চাটাই পাতা । তার উপরেই বসেছিল লোকগুলো! পা মুড়ে। অরুণাভও ছিল ওদের মাঝখানে--পরনে তার পায়জাম। আর হাতকাটা গেঞ্জি । -কাকে চাই? --তোমাকেই। কয়েকটা কথা ছিল। বসুন । ১১৯ পরমানন্দ চাটাইয়ের উপর পা! ঝুড়ে বসে পড়েন। লোকঞ্চলো উঠে দাড়ায় সরে বসে। _বলুন, কি বলতে চান_নিবিকার কণ্ঠ অরুপাভের । ভার সামনে খোলা একটি খাতা অথবা বই-_-তারই পা! ওলটানে ওলটাতে বললে কথাটা । পরমানন্দ প্রতুাণ্তরে বলেন : শুধু তোমার সঙ্গে কথা! আছে আমার -নিভূতে | বইটা মুড়ে রেখে দের অরুণা্ । মুখোমুখি তাকায় এতক্ষণে পরমানন্দের দিকে । সোজা প্রশ্থ করে-ফ্যাকটরির ধর্মঘট সম্বন্ধে কথা কি? তা হলে এদের সকলের সামনেই কথা বলতে হবে । --না, আনি তোমার সঙ্গে কয়েকটি ব্যক্তিগত কথা বলতে চাই। ক;রখানার স্ীইকের সঙ্গে তার কোনে সম্পর্ক নেই । অরুণাভ তার অনুচরদের বলে বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে । অধি- কাংশই উঠে দাড়ায় । অল্পবয়সী একটি ছেলে হঠাৎ বলে বসে- ওস্তাদ, এ কাজ তুমি কোরো! না । ওদের কারসাজি বুঝতে পেরেছি আমরা । _. -বাদল, তুমি বাইরে যাও। ছেলেটি একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে ও'দের দুজনের দিকে । ভারপর বলে- ওস্তাদ! আগুন নিয়ে খেলা কোরো না তুমি । এতগুখলে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তার ফল ভালো! হয় না। এত সহজ কথাটাও বুঝতে পারব না আমরা ভেবেছ ? বাদল ! তুমি যাবে কিনা সুগ্টিবদ্ধ হয় অরুণাভের হাত। বাদল একবার আশেপাশে তাকিয়ে নেয়। লক্ষ্য করে দেখে অনেকেরই নীরব সমর্থন আছে তার ওুদ্ধত্যে । পাশ থেকে মোটা ভাঙ। ভাঙা গলায় প্রৌঢ় রহমৎ বলে ওঠে লেকিন ওস্তাদ । তুমিই হিসাব জুড়ে লেও ভাই-_উর কুন গোস্তাকি হল কিন1। তুমার সাথে মালিকের আর কুন কথা আছে ? ই লোগদের মনে ধেণক! লাগল তো কি ফিন আ্যান্যায় হল? ১১২ অরুণাভ উঠে াড়িয়ে বলে : বড়ভাই ! এটুকু বিশ্বাম যদি না থাকে তোমাদের তবে কেন আমার হাতে ঝাগ্ু তুলে দিয়েছিলে ? যদি মনে করে থাক-_একল! পেয়ে এক টুকরো রুটির লোভ দেখিয়ে ওর! আমাকে ধেোকাবাজি দেবে তবে আমাকে এ কাজের ভার দেওয়া ঠিক হয় নি। তুমি আজবিশ বছর আছ এ কারখানায়_ তোমাকে আমি বড়ভাই বলেছি-তোমাকে না জানিয়ে কোনও গোপন শর্তে মালিকের সঙ্গে আমি হাত মেলাতে পারি ? রহমত তার প্রায়-সাদ! দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলে খামোশ ! ব্যস খুব। আ যাঁও ভাইসব। অধিকাংশ লোকেই বেরিয়ে যায় এ কথায় । শুধু বাদলের অস্সি- বর্ষা অক্ষিতারক1 ছুটি তখনও জ্বলছিল জ্বলস্ত অঙ্গারের মতো । রুখে ওঠে সে: বড়ভাই, আমি ঘরপোৌড়া গোরু । এর আগে পীচ ঘাটে জল খেয়েছি আমি । এব্যাপার আমার জান! আছে। আমি যাব না । রহমৎ তার হাম্বরধরা লৌহকঠিন হাতখানা বাড়িয়ে দেয় সামনের দিকে । গেঞ্জি ন হয়ে শার্ট হলে বোতামগুলে। থাকত যেখানটায় বাদলের একমুঠো জামা সেখান থেকে আটকে পড়ে রহমতের ব্জ” মুগ্িতে । মুখে কিছু বলে না রহমত; বাঁ হাতখান। বাড়িয়ে দেয় দ্বারের দিকে । _ঠিক হ্যায় ।- বেরিয়ে যায় বাদলও। অরুণাভ ঝাপের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে বলে: বলুন এবার । _তুমিকি আশা কর এভাবে ধর্মঘট করে কোম্পানিকে জব করতে পারবে? | _-ধর্মঘট সম্বন্ধে আলোচনা করতে হলে আবার ওদের ফিরে ডাকতে হয়। --ও আচ্ছা ।__সামলে নেন পরমানন্দ নিজেকে । তারপর একটু ইতস্তত করে প্রশ্নটা সোজাসুজি করে বসেন- নীলা কোথায় ? ৯১৩ --আমি জানি না। জীন । চোখ তুলে অরুণাভ গর দিকে তাকায় । বলে- চোখ রাঙাবেন না এটা আপনার কারখান। নয় । _--সে আজ তোমার এখানে আসে নি? -না। _না? আমি বিশ্বাস করি না। --সে আপনার মজি | _-- তোমাকে আমি পুলিসে দিতে পাঁরি-তা জান? জেল খ।টাতে পারি--সেটা মনে আছে? --আছে, কাবণ যে পরিমাণ অর্থ থাকলে একজন নিরপবাধ ব্যক্তিকে জেলে পোরা যায় তা আপনার আছে, তা জানি । কিন্ত আপনি হিসাবে একটি ভুল করছেন ; জেলখাটা জিনিসটাকে আজ আপনি যতট ভয়াবহ মনে করছেন- আমি তা করি না। তাই তো সেদিন বলেছিলাম, অভাবেই শুধু স্বভাব বদলায় না ডক্টর চৌধুরী, প্রাচুষেও বদলায় । _-আমি নিশ্চিত জানি-_ আমার বাড়ি থেকে চলে আসার পর দে তোমার এখানে এসেছিল । ঠিকই জানেন আপনি । সে এসেছিল-- তবে আজ নয়-_কাল বলাতে । গভীর রাত্রে । _-ত'রপর ? _-তারপবৰ আধ কি জানতে চান বলুন ? হঠাৎ ভেঙে পড়েন কুলিশকঠোর পরমানন্দ-- আর্তকণ্ে বলে ওঠেন-- অরুণ, আমি মিনতি করছি । তুমি জান, আমি কি জানতে চাইছি । ধাপ হয়ে আর কিভাবে প্রশ্ন করতে পারি আমি ? অরুণীভ এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে । তারপর বলে-_ হা! জানি ; আপনাব প্রশ্রের উত্তরে তাই জানাচ্ছি ননীমাধববাবুর পক্ষে কোনও বাধা নেই আপনাকে বৈবাহিক বলে স্বীকার করায় । ১১৪ নৈংশব্যের একাধিপত্য পরের কয়েকটি মুহুর্তের উপর 1 নীরবতা ভেঙে অরুণাভই মার একটু টুকরো খবর অবজ্ঞায় ছুড়ে ফেলে দেয় পরমানন্দের ওৎন্থুকর সম্মুখে কাল রাত্রে সে এখানে থাকে নি-- চলে গিয়েছিল আপনার গুরুদেবের কাছে। আজ সকালে সেখান থেকেও চলে গেছে-_-কোথায় তা আমি জানি না। আর কিছু জানতে চান ? --সে আজ সকালে সেখান থেকে চলে গেছে তা তুমি জানলে কি করে? টাঙানে। কামিজটার পকেট থেকে একটা বন্ধ ভারী খাম বার করে সেটা অরুণাভ ছুঁড়ে দেয় পরমানন্দের দিকে, বলে-আজ সকালে আমার লোক এটা দিতে গিয়েছিল__জেনে এসেছে সে এখানে নেই। ভারী খামটার উপর গোটা গোটা অক্ষরে নীলার নাম লেখা । নাদাচাড়া করে বন্ধ খামটা পরমানন্দ ফেরত দেবার উপক্রম করেন। অরুণাভ বাধা দিয়ে বলে--ওটা আপনার কাছেই রাখুন । যদি কোন" দিন নীলার সন্ধান পান-_তাকে দেবেন । তারপর মুহূর্তখানেক ইতস্তত করে বলে_ আপনিও পড়ে দেখতে পারেন, যে প্রশ্ন আপনি করতে পারলেন না, তার জবাব পাবেন ওটায়। চিঠিখানা অগত্যা গ্রহণ করতে হয় পরমানন্দকে | _আর কিছু গলবার আছে কি? -্থ্যা, একটা কথা । একদিন তুমি আমাকে শ্রদ্ধা করতে । মেদিনীপুর থেকে খুঁজে খুঁজে এতদূর এসেছিলে শুধু আমাকে বিশ্বাস কর বলেই। তোমার সে বিশ্বাসের, সে শ্রদ্ধার কণামাক্রও কি অবশিষ্ট নেই আজ? ভেবেছিলেন খুন কঠিন প্রশ্ন করেছেন ? কিস্তু জশাব দিতে মুহূর্ত বিলম্ব হল না অরুণাভের । ব্ললে_না । কারণ আপনি আর. সেই মানুষ নন -আপনি আদর্শচ্যুত, আপনি ব্রাত্য । '--এই জন্তেই কি নীলার আশ্রয় হয় নি কাল এ বাড়িতে? ১১ _নাঁ। সেটার কারণ বুঝতে পারবেন আমার চিঠিখানা পড়লেই । কিন্ত এবার আনুন আপনি । আমাদের মীটিঙও শুরু হবে এইবার । ওরা অপেক্ষা করছে আমার জন্য । পরমানন্দ উঠে পড়েন । দ্বারের দিকে পা! বাড়ান । -্দাডান । আপনাকে বড় রাস্তা পর্ষস্ত এগিয়ে দিয়ে আসব । প্রয়োজন হবে না। _হবে। না হলে হয়তো আপন সুস্থ শরীরে ফিরে যেতে পারবেন না! এ পাড়া থেকে । যেছে হবে হালপাতালে। পরমানন্দ এতক্ষণে একটা জবাব দিতে পারেন-_হাসপাতাল জিনিসট!কে আজ তুমি যতটা ভয়বহ মনে কর অরুণ, আমি ততটা করি না। সঙ্গে যাবার দরকার হনে না তোমার । জামাটা গ।য়ে দিতে দিতে অরুণাভ বলে : একদিন ডাক্তার পরশুরাম চৌধুরী আমার চিকিৎসা করেই শুধু ক্ষান্ত হন নি- নিজে আমাকে পৌছে দিয়ে গিয়েছিলেন নিরাপদ আশ্রয়েতাই আপনি না চাইলেও আমাকে সঙ্গে যেতে হবে । আমি জানি বাদলরা ওত পেতে মে আছে আপনার 'প্রত্যানতনেব পথ চেয়ে । চলুন । পধম।নন্দ ওর প্রসারিত হাতটি গ্রহণ করে হঠ।ৎ বলে বসেন পরশুর!ম “চীধুবীর *ণ তুমি আজও মনে করে রেখেছ অরুণ ? ওর দিকে পুর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অরুণাভ বলে_ ডাক্তার পরশুরম চৌধুবীকে কোন বিপ্লবী চেষ্টা করেও ভুলতে পারবে নাঁতিনি আমাব যে উপকার করেছেন তা ভুলে যাওয়া অসম্ভব আমার পক্ষে । শুধু আমাকে ব'চাতে গিয়েই তিনি অকথ্য অত্যাচার সন্ধা করেছেন + তিনি আমার পিতববন্ধ' তাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি আমি ! যেমন আত্তরিকভাবে দ্বণা করি হবু এম. এল. এ" ডাইরেকটর পরমানন্দ চৌধুনাকে-যিনি মজছুর-উত্থান দমন করতে অনায়।সে মিথ্যা চুরির কেস সংজান, যিনি সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেন না তার বাড়ির ফটকের ভিতর | পরমানন্দের মুঠি আলগা হয়ে যায়! পাশাপাশি পথে নেমে, ১১ আসেন ওরা । রিকশায় বসেন পরমানন্দ । রিকশার পাশে পাশে চলতে থাকে অরুণাভ। বড় রাস্তা পর্ষস্ত ওকে এগিয়ে দিয়ে অরুণাভ ফিরে যায়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তখন । শহরতলীর বস্তি অঞ্চল । রাস্তায় জ্বলছে বিজলী বাতি । কারখানা এলাকার জনাকীর্ণ পথ । সিনেমার শো শুরু হচ্ছে। বিকৃত যাম্ত্রক আত্তনাদে পরিবেশিত হচ্ছে হিন্দী গান। বরিকশাট। ভিড় বাঁচিয়ে একেব্বেকে চলল শহরের অপর প্রান্তে । বুক ঠেলে একটা কাম আসছে। হেরে গেছেন। নিঃসংশয়ে হেরে গেছেন তিনি চূড়ান্তভাবে । শুধু নীলার দৃষ্টিতে নয়- শুধু অরুণাভের চোখেই নয়- সারা ছুনিয়ার কাছে মাজ তিনি আদর্শচ্যুত। তিনি পতিত । মজছুর-নেতা আজ আস্তরিক ঘ্বণা করে তাকে ! রহমৎ আর বাদলের তার পথের পাশে আজ ওত পেতে থাকে । এমন কি বস্তির এ বালকটা পর্যস্ত অশ্লীল বিশেষণ যুক্ত করে উচ্চারণ করে তার 'নান। কারখানার বস্তিজীবন আজ তিনি নিজের চোখে দেখে গেলেন --এই তার কীতি ! এত বড় কীত্তি প্রতিষ্ঠা করেও তিনি তৃপ্ত হন নি। আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে নৃতন কীত্তির সন্ধানে উঠে-পড়ে লেগেছেন এবার । বিনিময়ে কিশলয়বাবুর কয়েক শত একর জমির মূল্য বিশগুণ বাড়িয়ে 'দিতে হবে । গ্রামনগরীটা গড়ে তুলতে হবে এমন এলাকায় যেখানে সমস্ত জমিব মালিক তারই মতো আর একজন নিংস্যার্থ দেশকর্মী ! এই এদের দেশসেবা ! এই তাদের মতে! সমাজসেবকের কুস্তীরাশ্র কৃষক- মজুরদের জন্য ৷ দীপক পর্ধস্ত মনে করেছে পরমানন্দই চুরির কেসট। সাজিয়েছেন। সত্যরক্ষার জন্য একদিন যিনি অন্ধকুপের অভস্তরালে জীবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবার জন্ত প্রস্তুত হয়েছিলেন, একমাস পুত্রকে যিনি সত্যধর্মের ঘুপকার্ঠে ম্বহস্তে বলি দিয়েছেন সেই “পরমানন্দকে কী চোখে দেখছে ছুনিয়! ! চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এল তীর । ঠিকই বলেছে নীলা--আর কোনও সংশয় নেই। তিনি, 'আদর্শচ্যুত, তিনি ব্রাত্য ১১৭ রিকশা এসে থামল বড়ির সামনে । নেমে ভাড়া টুকিয়ে দিলেন । বাইরের দরজার পাশে বসে আছে- নন্দ বেয়ারা। ... সমস্ত বাড়িটা খাঁঁখী করছে । কত দিনের কত আনন্ষ্ঘন ইতিবৃত্ত জড়িয়ে আছে বাড়িটার রক্ধে রান্ত্ে। এ কদম গাছটার ডালে একদিন দোলনা ঝুলিয়েছিলেন। তখন নীলাও হয়নি । শুধু অসীম এসেছে সংসারে । ফুটফুটে এতটুকু একট! বাচ্চা । দৌলনায় বাচ্চাকে শুইয়ে আযানি দোল দিত। আর ঘুমপাড়ানিয়া পান গাইত-_নার্সারি লালেবাই । ঘাসেব উপর বেতেব ইঞ্ষিচেয়ারটায় গা এলিয়ে উনি চুকট খেতেন আর বই পড়তেন । এই বড় লনটায় কতদিন শীতকালে হয়েছে “পন এয়ার বুফে লাঞ্চ” ' যানি আব মিস শ্রেহাম প্রাণান্ত পক্শ্রিম করত অচষ্ঠানকে সর্বাঙ্সুন্দর করে তুলতে । কী মধুর সে-সব দিন- গুলি । বিবাহবাধিকীতে বরাদ্দ ছিল একটা! সান্ধ্য ভোজের ব্যবস্থ। | ছেলেমেয়েরা বড হবার পর খাত্য়াদাওয়াব ব্যবস্থা করা হত গাদর জন্মদিনে | অর্ধ শতাব্দীর স্মৃতিবিজড়িত লাল পয়েন্টিং কর] বাণ্ডিট।র সামনে আজও একটা বেতের চেয়ার টেনে বসে পড়লেন । সারাদিন অভুক্ত তিনি। প্রচণ্ড ক্ষিদে পেয়েল বিকালে-এখন যেন সে বৌধট।ও নেই । শুধু ক্রীস্তিতে ভেঙে আসছে পা ছটো। নন্দ এসে ওকে ডাকে-ঘরে যাবার জন্য | ঘর? নাঁথাক। ইচ্ভ। করছে ন আর এখন উঠতে । নন্দকে বলেন বাগানের আলোটা জ্বেলে দিতে । ওখানে বসেই তিনি ভারী খামটা খুলে ফেলেন। বাঁর হয়ে পড়ে অরুণাভর অবরুদ্ধ বাণী । “নীলা, এইমাত্র তোমাকে তোমার বাবার গুরুদেবের আশ্রমে পৌছে দিয়ে এলাম । মনে হচ্ছে সব কথা গুছিয়ে বলতে পারি নি। পারা সম্ভবও নয়। দীর্ঘ এক যুগ প্রতীক্ষা করে আছি তোমার আগমনের, |সেই তুমি এসে ঈাড়ালে আজ আমার দরজায় ; অথচ, ১২৮ এমনই ছুর্ভাগ্য আমার, ছ্বার থেকে ফিরিয়ে দিতে হল তোমাকে । তাই সব কথা বুঝিয়ে বলার মতো! আমার মনের অবস্থা ছিল না _-সম্ভবত শোনার মতো মানসিক স্থূর্যও ছিল না তোমার । তাই এ চিঠি দিচ্ছি। “তোমাকে আমার বাসার দ্বার থেকে ফিরে যেতে হয়েছে। উন্মুখ আগ্রহ নিয়ে ভুমি এসেছিলে এই দরমার ঘরে-_-বাকী জীবনের দিনগুলি এখানে বিকিয়ে দেবার সন্কল্প নিয়েই কিন্তু আমিই তা হতে দিই নি। তাই আমার কাছে তোমার একটা কৈফিয়ত পাওনা! বৈকি 1-... “ছেলেবেলার কথা মনে পড়ছে । ছুনিয়াটা আমার কাছে তখন ছিল অত্যন্ত সীমিত। বাবা ছিলেন-তুমি তো জানই--. বিপ্লবী । ইংরাজকে ভাড়াবার মন্ত্রণায় মেতে উঠেছিলেন তিনি । প্রাণ দিলেন এ স্বপ্ন দেখতে দেখতেই । আমার মাকে আঙ্ি তখনও কাদতে দেখি নি। বাবা যখন মারা যান, আমি তখন ছোট । সব কথা মনে নেই। তারপর জ্ঞান হওয়ার পর কখনও তাকে কাদতে দেখিনি । আমাকে তিনি গল্প শোনাতেন_ শিবাজীর গল্প, রাঁপা প্রতাপের গল্প, গুরু গোবিন্দের কথা, ক্ষুদিরামের কাহিনী । স্বামীকে হারিয়ে ষে তিনি হতোছ্ম হয়ে পড়েন নি এটা প্রমাণ করতেই যেন আমাকে এ পথের নির্দেশ দিলেন । আশ্চর্য মানুষ তিনি! তারই হাতে গড়া মানুষ আমি। তারপর একদিন তিনিও অস্তমিত হলেন আমার জীবনদিগস্ত থেকে । তার একটা কথা মনে মাছে আমার : যারা আমাদের মানুষ বলে মনে করে না-ষারা বাধ্য করছে আমাদের কুকুর-বেড়ালের মতে! জীবন যাপন করতে- তাদের কখনও ক্ষমা করিস না অরু। পরে এঁ কথাগ্লোই পড়েছিলাম “পথে দাবীতে । .. প্রীলা, আমার মা সম্ভবত ইংরাক-শাসকদের উদ্দেশ করেই ও কথা বলেছিলেন--অস্তত সে যুগে আমি সেই অর্থেই গ্রহণ করেছিলাম তার উপদেশ । ক্রমে আমার চিন্তাশক্তির প্রসার ৯)৪ হয়েছে আজ মনে হয় কথাটা দেশকালের অত ক্ষুদ্র আবরণে আবদ্ধ নয়। তাই আজ ইংরাজ শাসকদের অবর্তমানেও আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় নি । আজ তোমার বাবা এবং আমি সে সংগ্রামে বিপক্ষ শিবিরের সৈনিক । আজ তুমি উপরতলার বাসিন্দা আর আমি থাকি নিচের মহলে । জানি, তুমি বলবে- স্বেচ্ছায় এ উপরের মহল ছেড়ে নেমে এসেছ তুমি আমার সমতলে । পরমানন্দের প্রাসাদ ছেড়ে যখন পরমছ্ঃখীর কুটিরে এসে দাড়িয়েছ তখন ফিরে যাবার পঞ্থ যে তুমি রুদ্ধ করে দিয়ে এসেছ সেটা বোবা শক্ত নয়। আমি অবাক হয়ে যাই তোমার বাবার কথা ভেবে । ভদ্রলোকের সবই ছিল-_সবই খুইয়েছেন ৮ অথচ আশ্চর্যের কথা, আদর্শের কারবারে আজ যে তিনি দেউলিয়৷ এ খবরটাও তিনি জানেন না। সম্পদের সঙ্গে আদর্শের, চরিত্রের, বোধহয় একটা নিত্যবৈরী আছে। কী একটা নাটকে পড়েছিলাম নায়কের বাইরের ঘরে টাঙানো বাইবেলের একটা বাণী : 'স্থচের ছিদ্রপথে উট গলে যেতে পারে--কিস্ত কোন বড়লোক কখনও স্বর্গে যেতে পারে না)” সম্পদ, প্রতিপত্তি, সম্মান মান্থষের আদর্শকে পিষে মারে । অথচ মানুষ জানতেও পারে না যে সে আদর্শচ্যুত হয়েছে । তোমার বাবারও আজ সেই দশা । তুমিও তার সাহর্ধে সে কথা বুঝবার মতো বোধশক্তি হারিয়েছ । আজ সাময়িক উত্তেজনাতে সব ছেড়ে ভূমি আমার দ্বারে এসেছ দিয়েছ 'ণাটা সত্য ; কিন্তু জীবনটা তো নাটক নয় ! “সিনেমায় আর রঙ্গমঞ্ে যেটা বেশ স্বাভাবিক, জীবনে তাই অবাস্তব । তুমি যখন গতকাল রাত্রে এক এসে দাড়ালে আমার দরজ্জায় ঠিক সেই যুহুর্তটিতে যদি পঞ্চম অক্কের শেষ যবনিক! নিশ্চিত পড়বে জানতাম তাহলে আমিও তোমার হাতছুটি ধরে ভাবতে পারভাম “এতদিন পরে এলেছে কি তার আজি অভিলার রাজি ।' এটা নাটক হলে কোনও কথ! ছিল না। নাটকের দর্শক ১২৪ খুশী মনে বাড়ি যেত। কিন্তু জীবনের দর্শক জানে, নিশ্প্রভাত রাজি নেই । নিকষকালো! অমারাত্রির অন্ধকারে তোমার এ অভিসারের “রোমান্টিকতার পরেও আছে সকালবেলার চড়া রোদ! সকাল হলে তুমি দেখতে পাবে এখানকার চৌকিতে গদি নেই, আছে ছারপোকা ।--কফির কাপের বদলে আছে মাটির ভাড়ে জোলো চা; জঈীভনিং-ইন-পারী অথবা ক্যান্থারাইডিন নয়--পচা নর্দমার ভুর্গন্ধে বাতাস এখানে উদ্বন্ধনে আত্মহত্যা করেছে। “রাগ কোরো না নীলা। দোষ তোমার নয়।-তুমি এ জীবনে অভ্যস্ত নও । তোমার শিক্ষা দীক্ষা, রুচি গড়ে উঠেছে অন্ধ পরিবেশে ! ঝৌকের মাথায় তুমি সব ত্যাগ করে আসতে চাইছ ; 'কিস্ত কাল সকালে তোমার অন্থুশোচনার ভন্ত থাকবে না। কাল না হোক কালে এ কথা তোমার মনে হবেই ৷ এই একটি মুহুর্তের ভুলের বোঝা বয়ে ছলতে হত তোমাকে আজীবন। কারণ এ ঘরে একট! রাত্রি যাপন করা মানেই বাকী জীবনের রাত্রিগুলির 'মৃত্যুপরোযানায় সই দেওয়া | “ভুল বুঝো না আমাকে । আমি আজও ভোমাকে তেমনিই 'ভালোবামি । বছর দশেক আগে বিদায় নেবার সময় বলেছিলাম, “তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব 1 আজও বিদায় দেবার সময় বলছি, '£ একই কথা । এ কথা বলছি না যে, আমার সঙ্গে জীবন যুক্ত করা তোমার পক্ষে একান্ত অসম্ভব । তবে তার জন্ত প্রস্ততি চাই, শুধু মানসিক নয় শারীরিকও । ঝৌকের মাথায় সেটা যেন ন) হয় । আমি ভোমাকে অনুরোধ করব- নিজের মন তুমি ভালো করে যাচাই করে দেখো । যদ্দি তোমার বাবার মেকী দেশসেবায় সত্যই অতিষ্ঠ বোধ করে থাক, যদি প্রশ্বর্ষের বেড়া ভেঙে নেমে আসতে চাও এই সংগ্রামময় জীবনের সমতলে, তাহলে কিছুদিন (তোমাকে এ পথে চলবার শিক্ষানবিশি করতে হবে । আমি বলব ব্বেচ্ছাদারিফ্রোর মধ্যে বাস করতে হবে কিছুদিন তোমাকে । 'তোষ়ার বাবার কাছ থেকে কোনও সাহায্য নিতে পারবে না । ১২১ তোমার পরিচিত সমাজ থেকে এভাবে স্মেচ্ছা-নির্বাসন নিয়ে বদি কয়েক মাস আমার জীবনের স্ুখ-ছঃখের আম্বাদ নিশ্তে পার এবং তারপরেও অবিচলিত রাখতে পার তোমার আজকের সঙ্কলে তাহলেই সার্থক হবে আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষা । বরণ করে তুলব সেদিন, আমার জীবনলক্ষ্মীকে | “আরও একটা কথা ৷ তুমি উচ্চশিক্ষিতা । ফিলসফিতে এম. এ পাঁশ করেছ তুমি । আমি কলেজের প্রথম বাধিক শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম যখন ধরা পড়ি। তারপর কলেজে শিক্ষালাভ ঘটে নি আমার । সহরাজবন্দীদের কল্যাণে সমাজদর্শন, অর্থনীতি বিষয়ে কিছু পড়াশুনা করেছি মাত্র । সুতরাং তোমার সঙ্গে আমার শিক্ষাগত একটা প্রভেদ আছে । এ কথাটাও তুমি বিচার করে দেখে! । “শেষ কথা । তোমার সঙ্গে আমার একট! প্রভেদ আছে । তুমি নাস্তিক,_তুমি ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাসী । আমি ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ । দিনাস্তে একবার তাকে স্মরণ না করলে মনে বল পাই নাঁ। আমি বিশ্বাস করি, তিনি আছেন আনন্দঘন কলাণময় বাপে । এখানেও আমাদের অমিলটা অত্যন্ত ব্যাপক । যুক্তিতর্ক দিয়ে তোমাকে ম্বমতে আনতে পারব না--তুমিও পারবে নাতোমাব নাস্তিকতার গোলাবর্ষণে আমার এ বিশ্বাসহুর্গকে বিধ্বস্ত করতে | “জানি না ক্ষমা করতে পারলে কিনা আমাকে । “এ চিঠির প্রত্যুত্তর আমি আশা করছি না। আমি বিশ্বাস করব তুমি আত্মসমীক্ষান্তে ফিরে আসবে ঠিক যেখান থেকে আজ ফিরে যেতে হল সেখানে । যদি স্থির কর যে আসবে না--তবে সে কথাও আমাকে জানিও না। লে কথায় আমার প্রয়োজন. নেই--কারণ অন্য কোনও জীবনসঙ্গিনী আমার কল্পনার বাইরে। না হয় অহেতুক আশাতেই কাটুক না আমার বাকী জীবন । ইতি অরুপাভ |” ১২ স্যার! ক্যা? - আপনার আজও তো! খাওয়া হয় নি সারাদিন । নন্দর এ প্রশ্থের জবাবে এবার স্বীকার করেন পরমানন্দ" লা, সারাদিনে কোনও আহার্ধ জোটে নি তার। _আপনার খাবার আনব £ --আন। হীরে, ছোট মহারাজ আসেন নি আর ? নন্দ জানায় যে, ইতিমধ্যে ছোটমহারাজ এসে দিয়ে গেছেন একখানি চিঠি । নন্দ খাবার আনতে যায়। দ্বিতীয় চিঠিখানি খুলে বসেন প্রমানন্দ। গুরুদেব লিখছেন : “পরমকল্যাণীয়েষু, নীল। মার জন্য চিন্তা করিও ন1। সে আমার সহিত তীর্থভ্রমণে যাইতেছে । মানস পর্ষস্ত যাইবার ইচ্ছা আছে । তে'মাকে জানাইয়া যাওয়া সম্ভব হইল না-_কারণ তুমি জানিলে এরূপ কপর্দকহীন অবস্থায় আমাদের তীর্থযাত্রা সম্ভব হইত নাঁ। অপর পক্ষে তীর্থ ভ্রমণের রাজসিক ব্যবস্থা হইলে আমাদের এ যাত্রার উদ্দেশ্ট ব্যর্থ হইত । আমার না হইলেও নীলার হইত। আশীর্বাদক | ইতি---” চিঠিখানি শেষ করে মিনিট দশেক স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকেন: পরমানন্দ । মনশ্চক্ষে ভেসে ওঠে তুষারাচ্ছাদিত এক সানুদেশ + সুহূর্গম যাত্রাপথে চলেছেন ছুজন পথিক দূর দিগন্তে দৃষ্টি নিবন্ধ করে-- একজন জ্ঞানবৃদ্ধ সন্ন্যাসী, অপরজন অভিমানক্ষুন্ধ তারই আত্মজা!। চুন্বকখণ্ড তাহলে দিক পরিবর্তন করেছে! নিকর্ষণ রূপাস্তরিত হয়েছে একাস্তিক আকর্ষণে ! উপকরণের হছূর্গপ্রাকার থেকে মুক্তি পেয়েছে নীলা । ঠিকই বলেছিলেন গুরুদেব নীলা এগিয়ে গেছে সাংনমার্গে তাকে পিছনে ফেলে । উহ উঠে পড়েন উনি । মনস্থির করেছেন এতক্ষণে | লেটার প্যাডটা বার করে সর্বপ্রথমেই লিখে ফেলেন একখানা চিঠি। শেষ করে আবার আগ্ঠোপাস্ত পাঠ করেন | খামটা বন্ধ করে উঠে যান উপবের 'ঘরে। সুটকেশটা টেনে নিয়ে গুছিয়ে তুলতে থাকেন জামা কাপড় । প্যাণ্ট, শার্ট, টাই, গরম জামা, ড্রেসিং গান্উন, শেভিং সেট, একে একে গুছিয়ে তোলেন । তারপর হঠাৎ কি ভাবেন কয়েকটা মুহুর্ত । আবার খালি করেন ন্টকেশটা । নাঃ এসব নেবেন না তিনি । কিট ব্যাগটায় ভরে নেন খান কয়েক ধুতি । খান ছুই কম্থলও নেন, একট! লেডিজ গরম ওভারকোট | বস, আব কিছু নয়। বেশী সময় লাগল না৷ গুছিয়ে নিতে । টাইম টেবিলট! দেখেন একবার । হ্যা, ট্রেন একটা মাছে । এখনি বের হলে ধরতে পারবেন । এখনই যাবেন তিনি । জনকপুর স্টেশনে দেখা পাবেন গুদের নিশ্চিত । খাবারের থালাট! হাতে নিয়ে নন্দ উঠে এসেছে দোতলায় ডাইনিংরম খালি দেখে | _-৪-সব এখন থাক । তুই শীগগীর একট ট্যাক্সি দেখ ! আপনি আগে খেয়ে নিন। নন্দ এপার একটু দৃকণ্ঠে বলে । কিন্তু পরমানন্দ তার চেয়েও দৃকষ্ঠে বলে ওঠেন-_বিরক্ত করিস না মন্দ । যাবলছি কর। ট্রেনটা আমায় ধরতে দে। নন্দ তার মনিৰকে চেনে । আর কোনও কথা না বলে বেরিয়ে যায় ট্যাক্সি ডাকতে । বারান্দায় পায়চারি করতে থাকেন পরমানন্দ অস্থির 'পদবিক্ষেপে ! না, হার তিনি ম্নীকা'র কববেন না৷ ভূল মানুষ মাত্রেরই হয়। সে তুলকে স্বীকার করে নেওয়ায় লঙ্জী নেই। ভুলকে সংশোধন করাঃ তাকে জয় করাই মনুষ্যত্ব । পরমানন্দও প্রমাণ দেবেন তিনি আদরশচ্যুত নন-_ মাদর্শের জন্য তিনি আজও সর্বন্য ত্যাগ করতে প্রম্তত। ট্যান্সিতে উঠবার সময় পিছনে এসে দাড়াল কালো! রঙের হিন্দুস্থানখানা। নেমে এলেন হর্ষোফুল্প ননীমাধব, স্ুসংবাদটা দিতে --কগগ্র্যাচুলেশন্স। সব ঠিক হয়ে গেছে ভাই কিশলয় গাঙ্গুলী হযাজ উইদ্রন--তোমার পথে আর কোনও বাঁধা নেই ১৯৪ বাধা দিয়ে পরমানন্দ বলেন-_বেশি কথা বলার আমার সময় নেই ননীমাধব । আর আঠারো মিনিট মাত্র বাকী আছে ট্রেন ছাড়ার। আমি চললাম । এই চিঠিখান। তারিণীদাকে দিও | ননীমাধবকে বস্তুত কোনও প্রতাত্তর করবার স্থযোগ না দিয়েই রওন! হয়ে গেলেন তার অভিনহৃদয় বন্ধু । | মুহুর্তখানেক ননীমাধব ধ্রাড়িয়ে থাকেন স্থাণুর মতো । তারপর অসীম কৌতৃহল নিয়ে খামট। খুলে পড়তে থাকেন চিসিখান!। আশ্চর্য কাণ্ড ! পরম'নন্দ তাঁর তারিণীদাকে জানাচ্ছেন, অনিবার্ধ কারণে তিনি নিবাচন-প্রতিদ্বদ্দিতা থেকে সরে দাড়াচ্ছেন । কারণটা! কি তা লেখেন নি। তবে শেষদিকে লিখেছেন “অধ্যাপক গিনীন্দ্রনাবু আমার অপেক্ষা যোগ্যতর ব্যক্তি । দীর্ঘতর দিন তিনি যুক্ত ছিলেন আমাদের পার্টিতে । এখানে নমিনেশন না পাইয়া তিনি ন্বতন্ত্র প্রার্থী “হিসাবে দাভ়াইয়াছেন । গিরীন্দ্রবাবুর বদলে আপনারা! আমাকে মনোনীত করিয়াছিলেন এজন্য নয় ঘে, আমি যোগ্যতর বাক্তি। কারণটা অথনৈতিক। এ ভোটযুদ্ধে পাঁড়ি দ্রিতে আমি যে পাঁরমাণ অর্থ বিনিয়োগ করিব- অধ্যাপক বন্থ মহাশয়ের পক্ষে তাহ কর! সম্ভবপর নহে। অপ্রিয় হইলেও কথাটা সত্য। শেষ মুহুর্তে আমার এই আকম্মিক পশ্চাদপসরণে আপনারা বিরত বোধ করিতে পারেন-- তাই প্রায়শ্চন্ত-স্বরূপ পার্টি-ফাণ্ডে জম! দিবার জন্য একটি ক্রুশ চেক এইসঙ্গে রাখিয়া গেলাম । আশা করি অতঃপর আপনারা আর গিরীন্দ্রবাবুকে অপাডক্রতেয় মনে করিবেন ন1। ক্ষমা প্রার্থী ইতি ॥৮ বিস্মিত বিমূঢ ননীমাধব স্তস্তিত হয়ে দাড়িয়ে থাকেন চিঠিখানি হাতে করে। এ ছেলেমান্নুষির কোনও মানে হয় ! এখানেই আমার কাহিনী শেষ করেছিলাম । মনে হয়েছিল, এর পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ নিতান্তই বাহুল্য । সংসারাভিজ্ঞ: বুদ্ধিমান পাঠক অনায়াসেই সেটা অন্থমান করতে পারবেন:। কিন্ত ছূর্তাগ্যবশত্ এ উপন্যাসের পাঙুলিপি যিনি প্রথম পড়লেন তির্নি' ১৬ ঃ আমাকে বলে বসলেন যে, কাহিনীটি সুসমাপ্ত নয় । আদর্শনিষ্ঠ পরমানন্দ তার আদর্শে ফিরে গেলেন- এটাই নাকি কাহিনীর শেষ কথা হতে পারে না। এর পরেও প্রশ্ন থেকে যায় অরুণাভের 'আদর্শের কথা, নীলার বিবাহের কথ! । আমার মতে সে-নব কথা দ্বিতীয় একটি কাহিনীর বিষয়ভুক্ত হতে পারে মাত্র; এবং তাহলেও সে কাহিনীটি পুনরুক্তিদোষে পাঠকের ধৈর্যযচাতি ঘটাবে শুধু। তবু প্রথম পাঠিকার অনুরোধে কয়েকটি স্থুল সংবাদ এখানে লিপিবদ্ধ করতে বাধ্য হলাম । ৰ ডাক্তার পরমানন্দকে জনকপুর পর্ষস্ত যেতে হয়নি, সাজাহানপুরেই তিনি দেখা পেয়েছিলেন গুরুদেবের । সে যাত্রা বেশী কষ্ট পেতে হয় নি তাকে । নীল] লক্ষ্মী মেয়েটির মতোই ফিরে এসেছিল তার সঙ্গে । সেই একদিনের ছেলেমানুষির কথা মনে পড়লে আজ নিজের কাছে নিজেই লজ্জিত হন পরমানন্দ । সারাটা দিন যেন একটা ভূত চেপেছিল তার ঘাড়ে । সেন্টিমেণ্টাল হওয়াটা পাপ, সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন তিনি » সেই একদিনের ছেলেমানুষির খেসারত হিসাবে আসেম্সিতে যাওয়া পেছিয়ে গেছে বছর পাচেকের জন্য । শুধু কি তাই? অহেতুক কতকগুলো টাকাও অর্থদণ্ড হল ! অবশ্য হতোগ্ভম হন নি তিনি মোটেই । কর্মবীর তিনি-_এত সহজেই ভেঙে পড়বেন কেন ? ক্রমে ম্যানেজিং এজেন্সিটা হাতে এসেছে এতদিনে । শ্ুয়েজনাভিরিক্ত খরচ করে চলেছেন তিনি শ্রমিকদের পিছনে । আগামী বারে মজছুর-মহল্লার সব কট! ভোট তাকে পেতেই হবে! এই খঁভকর্মে তিনি নিয়ৌজিত করেছেন উপযুক্ত লোককেই । অরুণাভ নন্দী এখন বাটন এ্যাণ্ড হারিস কোম্পানির লেবার- ওয়েলফেরার অফিসর | নীলাকে বধূরূপে গ্রহণ করার অর্থ নৈতিক বাঁধাটা এখন আর নেই । মেহনতী মানুষের ভালে। করার পূর্ণ দায়িত্ব বরুণাভের উপরই শ্তস্ত করেছেন ম্যানেজিং ডাইরেকটর ৷ মজছুরদের জন্য ক্লাব্ঘরে এসেছে নতুন রেডিও, মজছ্র-মণ্ডলীর আসর শুনতে ওরা ঞ্লাল হয়ে বসে। মেহনতী মানুষদের প্রভিডেন্স-ফাণ্ড খোলার আয়োজন এরা দিন দুল ক, ন্‌ ও বির চু চক 1 5 রা পু ও ১১. পা হু এ 1 হচ্ছে, অসুস্থ মজুরও যেন মারা না পড়ে লেব্যবস্থা হচ্ছে। আরও কত পরিকল্পনা! রয়েছে, অরুণাভ বয়স্কদের জন্ত নৈশ স্কুলও খুলতে চেয়েছিল, কিন্তু ওটাতে আপত্তি আছে কর্তৃপক্ষের । পরে অরুণাভও বুঝতে পেবেছে লেখাপড়া শিখিয়ে আর কি লা হবে ওদের-_-ওর! তো আর কেরানী হয়ে উঠনে না কোনদিন । শিক্ষণ ওদেব কাছে আশীধাদ নয় অভিশাপ! অরুণাভ আজও মনেপ্রাণে মজছুরদরদী ! যদিও অফিসার হওয়ার পর মজুবদেব সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ মেলামেশাট। এখন সম্ভব নয়, তবু মেটা অঙ্কের মাহিনা থেকে মাঝে মাঝে সরু” মোটা অঙ্কের টাদা তাকে দিতে হয় পার্টি-ফাণ্ডে। আগামী বিশ্বকর্মী পূজায় মজতুরদের চিন্তধিনোদনের জন্য একটা নাটক সে মঞ্চস্থ করনে মনস্থ করেছে। অশ্রতপূর্ব তার 'মীলিক পরিকল্পন। ! মজছুর; মসীজীবী এবং ছু-একজন অফিসার পধন্ত নাকি একই মঞ্চে অভিনয় করবে এবার। সাম্যের এক চুদ্রান্ত স্বাক্ষর সে রেখে যাবে বঙ্গনঞ্চেব পাদপ্রদীপের সম্বুখে ! ডাঃ পবমানন্দকে সে বুঝিয়ে দিযেছিল তার পবিকল্পনার কথা । খুব উৎসাহিত হয়েছিলেন পরমানন্দ ; বলেছিলেন, থিয়েটার আমিও এককালে খুব করতাম, কিন্ত এমন চিন্তা আমার মাথাতেও আসে নি। অরুণাভ বলেছিলে : তাহলে প্রধান চরিত্রটা আপনিই করুন ন1। --নাটকট। কি? _ তারাশঙ্করথাবুর “ছুই পুক্ষট_ আপনি নুটুবিহথারীটা করুন। পরমানন্দ হেসে বলেছিলেন : ও চরিত্রটাও এককালে অমি করেছি, তবে কি জান- আমাদের যুগ গত হয়েছে । তোমরাই এখন ও-সব করো। আমরা পিছনে আছি। গত্যা অরুণাভকেই রাজী হতে হযেছে ঘটুবিহারীর চরিত্র অভিনয় করতে । নাটকটী। পুবাতন ; বন্ুবার এ নাউটককের অভিনয় সকলে দেখেছে । তবু নবীন অভিনেতা চরিত্রটা কেমন অভিনয় করে সেটা দেখবার জন্য সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে! . নীলা অনম্ট টিকতে পারে নি। স্লেনাকি আজকাল পগ্ডিচেরিতে থাকে !